![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
চলে যাওয়ার আগে
প্রতীক মিত্র
ওরা পাড়া ছেড়ে দিয়েছিল চুপিচুপিই। অন্তরার তবু ইচ্ছে ছিল ফিরে গিয়ে একবার দেখা করে আসার।দেখা দিয়ে আসার। সেই উদ্দ্যেশ্যে বরকে সঙ্গে করে নিয়েই এসেছিল।বর মাতলামি করে ওকে কম জ্বালাতন করতো না।মারধোর, গালাগালি, অপমান। একবার তো বাথরুমে রাখা গামলা ভর্তি জলে মুখ ডুবিয়ে মেরে ফেলতেও চেয়েছিল। বাবা-মা’র অশান্তিতে ঘাবড়ে ভয়ে সিঁটিয়ে যেত ছোট্ট ছেলে। এক-একটা রাত সে তো রীতিমতো চিৎকার করে লোকজনকে জড়ো করার চেষ্টা করতো।আশেপাশের বাড়িগুলো ওই আকারেই বড়। লোকজন হয় নেই নইলে থাকলেও সাড়া দিতে তারা নারাজ।আর ছিল উঁচু উঁচু বেঢপ ফ্ল্যাট।পুলকের কানে গেছে ওই বাচ্চাটার চিৎকার।পুলকের বাড়িটা ছোটোখাটো বলেই বোধ হয় সে শুনতে পেয়েছে। অন্তরাদের বাড়ির মালিকও তো থাকে না।ফলে বরের অসভ্যতা বেড়ে গেলে সেটা সামলানো কঠিন।এক-এক দিন ওই ছোট্ট ছেলের সামনেই অন্তরার বর অন্তরার পোষাক ছিঁড়ে ফেলতে গেছে তা সে মারবে বলেই হোক কিম্বা সঙ্গম করবে বলে। পুলক একটা রাত আর বাচ্চা ছেলেটার চিৎকার থাকতে না পেরে বেরিয়েছিল। সেদিনই অন্তরার বাড়িতে তার যাওয়া শুরু। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই অন্তরার ঘরে সে গেছে।কোনোদিন ডেকে নিয়েছে অন্তরাকে তার ঘরে।অন্তরার ঘরে তবুতো বর, ছেলে আছে।পুলকের বউ বাচ্চা নিয়ে কোনখালে ভেগেছে। ফলে অন্তরার সাথে অন্তরঙ্গ হতে একাকিত্ব আর নৈঃশব্দকে ভেঙেচুড়ে নিতে অসুবিধা হয়নি কখনো। ইচ্ছে হলেও কোনোদিন কিছু উপহার দিয়ে উঠতে পারেনি পাছে অন্তরা ভুল কিছু ভেবে বসে। অন্তরা বরের থেকে মুক্তি চায়নি, মুক্তি চেয়েছিল তার পাশবিকতা থেকে।পুলক সেইটা হাসিল করাতে পেরেছিল। সেটা কিছু কম প্রাপ্তি নয় অন্তরার। তাছাড়া শারীরিকতা, নীরবতা আর একাকীত্বে দুজনে আহত, দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে মিলিত হলেও এটাকে ভালবাসা কম অপরাধ হিসেবেই বেশি দেখেছিল। ফলে অন্তরারও এটা প্রমাণ করার ছিল যে না এই সম্পর্কটা আলোর মতন স্পষ্ট, সরল এবং স্বীকৃত হতে পারে।বরের মনেও সন্দেহ থাকায় বরকে সঙ্গে এনেছিল যাতে বরের ভুল বোঝাবুঝিটা দুর হয়। চুক্তি ফুরোলে পাড়া চুপিচুপি ছেড়ে দিলেও অন্তরা আবার ফিরে গিয়েছিল পুলকের সাথে দেখা করতে, তাকে ধন্যবাদ জানাতে; তাকে দেখা দিতে।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment