1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, April 15, 2023

ফেলে আসা দিন

ছবি : ইন্টারনেট

ফেলে আসা দিন 

মিঠুন মুখার্জী 

নবমীর দিন রাত দশটা। মোটরসাইকেল নিয়ে সন্দীপ ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে। সঙ্গে জায়া সন্দীপ্তা ও একমাত্র মেয়ে আরাধ্যা। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে রাত করে বেরোনো। ভিড় অনেকটাই কম। সুন্দর সুন্দর মণ্ডপ ও বিগ্রহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় সকলের। আরাধ্যা ফুচকা খাওয়ার বায়না জুড়ে দেয়। ফুচকা খাওয়াতে গিয়ে সন্দীপের দেখা হয় নবনীতার সঙ্গে। সঙ্গে তার স্বামী ও ননদ। নবনীতা তাকে দেখে অচেনার ভাব করে। মুহূর্তে সন্দীপের মানসপটে ভেসে উঠেছিল অতীতের দিনগুলির স্মৃতি।

                     নিজের জীবনের থেকেও সন্দীপ বেশি ভালোবেসেছিল নবনীতাকে। বিএসসি প্রথমবর্ষ থেকে তারা একসঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তো। নবনীতাই তাকে প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি না হওয়ায় একপ্রকার ব্ল্যাকমেইল করেই রাজি করিয়েছিল তাকে। পাঁচ বছরের সম্পর্ক একটা ভুল বোঝাবুঝিতে নষ্ট হয়ে যায়। সন্দীপ এমএসসি পাশ করার পর তিন বছর সময় চেয়েছিল নবনীতার বাবার কাছে। তিনি তা দেননি। তিনি বলেছিলেন--- "তোমার মতো এমএসসি পাস ছেলে কলকাতার অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তোমার কিছু হবে না।" বাবার কথার কোন প্রতিবাদ সেদিন নবনীতা করেনি। বাবা বিয়ে ঠিক করলে চুপচাপ মেনে নিয়েছিল সে। বিয়ের কার্ড সন্দীপের হাতে দিয়ে বলেছিল--- "আমার কিছু করার নেই। আমি নিরুপায়। তোমার ব্যর্থ জীবনের সঙ্গে আমি আমার জীবনকে জড়াতে পারলাম না। আমায় পারলে ক্ষমা করো।" এই কথা শুনে সন্দীপ রেগে গিয়ে নবনীতার গালে কষে একটা চড় দিয়েছিল।  সন্দীপ তাকে বলেছিল--- "সব মেয়েরাই এক। প্রেম করে নিজের ইচ্ছায়, বিয়ে করে বাবার কথায়। বিয়ে যদি করতে পারবি না তাহলে আমাদের মতো ছেলের সঙ্গে প্রেমে পড়িস কেন?" দু-চোখে জল দেখা গিয়েছিল সন্দীপের। এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায় নবনীতার। একাগ্র চিত্তে পড়াশোনা করে কিছুদিনের মধ্যেই কলেজের প্রফেসর হয় সন্দীপ। তারপর প্রায় পাঁচ বছর নবনীতার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তবে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে সে জেনেছিল--- 'বিয়ের কার্ড হাতে দিয়ে নবনীতা তাকে যে কথাগুলো বলেছিল, সেগুলো ওর মনের কথা নয়। বাবা-মার ব্ল্যাকমেইলে পড়ে ওই কথাগুলো নবনীতা বলতে বাধ্য হয়েছিল।' সেই বন্ধুর কাছ থেকে এটাও জেনেছিল যে,--- 'নবনীতার স্বামী প্রতিদিন মদ পান করে নবনীতাকে প্রহার করেন। আর্থিক সুখ থাকলেও মানসিক সুখ নেই তার। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত একটাও সন্তানের মুখ দেখেনি।'

        অতীত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দুচোখ চিকচিক করে উঠে সন্দীপের। আরাধ্যা ও সন্দীপ্তার ফুচকা খাওয়া হলে তারা সেখান থেকে অন্য মন্ডপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাওয়ার সময় সন্দীপ মনে মনে ভাবে--- 'আমরা কর্ম করলেও ভাগ্য আমাদের হাতে থাকে না। সব জানেন আমার গৌরহরি। তিনি সব ভালোর জন্যই করেন।'

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment