ছবি : ইন্টারনেট |
স্বাধীনতা
রুচিরা মুখোপাধ্যায় দাস
" সবাইকে জানাই ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটিকে উদযাপন করতে আজ আমরা সবাই এখানে মিলিত হয়েছি। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসন থেকে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়দের উপর চালানো হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার । এই অত্যাচার, এই পরাধীনতার নাগপাশ থেকে আজ আমরা মুক্ত। আজকের এই শুভ দিনে দেশের কল্যাণের জন্য - দশের কল্যাণের জন্য, নিজেদের কাছে শপথ করুন । নিজেদের উৎসর্গ করার অঙ্গীকার গ্রহণ করুন ..."
ছ'তলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে শাশুড়ি মায়ের বক্তৃতা শুনছে নিবেদিতা। তার পাশে খাঁচায় বসে বসে লঙ্কা খাচ্ছে গঙ্গারাম। নিবেদিতা গঙ্গারামের মাথায় হাত বোলাচ্ছে। আর স্বাধীনতার অনুষ্ঠান দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বেজে উঠল ডোরবেল। স্বাধীনতার ভাষণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে শাশুড়ি মা। মুখে তার অহংকারের হাসি ঝরে পড়ছে। তার বক্তৃতার বাহবা সর্বত্র। হাততালিতে কেঁপে উঠেছে যেন পুরো অ্যাপার্টমেন্ট। গর্বিত অহংকারী মুখ তার তাই! শাশুড়ি ঘরে ঢুকতেই নিবেদিতা বলল - " মা, আমি এখন একটু শ্যামবাজার যাব! আমার মা খুব অসুস্থ। এইমাত্র দাদা ফোন করে জানালো। সকালের রান্নাবান্না সব সেরে রেখেছি। টেবিলে সবার খাবারও গোছানো আছে। তাছাড়া বেলার মা তো আছে। আপনাদের আশা করি কোন অসুবিধে হবে না। আমি আজ রাতটা ওখানেই থাকবো। মা কেমন থাকে সেটা দেখে নিই একবার । ভালো থাকলে কাল সকালেই ফিরে আসবো। "
- " মানে! কথা নেই। বার্তা নেই । সুযোগ বুঝেই বাপের বাড়ি যাবার ছল! রাতের রান্না কে করবে? আমি সবে এই তেতেপুড়ে বাড়ি ফিরলাম। সাথে সাথে নাকি কান্না শুরু করলে। তোমার তো দাদা আছে, মা তো আর একা নয়! "
নিবেদিতা মাথা নিচু করে চোখের জল লুকায়! ব্যালকনিতে ফিরে গিয়ে গঙ্গারামের মাথায় হাত বুলায়। তারপর আস্তে আস্তে খাঁচাটা খুলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করে গঙ্গারামকে। কিন্তু একি! দীর্ঘদিনের খাঁচায় বন্দী গঙ্গারামের ডানা যেন আজ অকেজো! দুবার ডানার ঝাপটা দিল শুধু! খাঁচাটাই তার প্রিয়! খোলা আকাশে উড়তে সে ভুলে গেছে!
উড়ন্ত জাতীয় পতাকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিবেদিতা । কানে ভেসে আসছে স্বাধীনতার গানের সুর - "মুক্তিরও মন্দিরও সোপানো তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান !লেখা আছে অশ্রু জলে! "
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment