1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

ব্যয়

ছবি : ইন্টারনেট


ব্যয় 

সুকল্যাণ দে

- মা, আজকে গ্রিন ডে উদযাপন করার জন্য স্কুলে পাঁচশো টাকা জমা দিতে বলেছে। 

স্নানে যাওয়ার আগে তুতান বলে উঠলো।

- তোদের স্কুলে বিভিন্ন কারণে টাকা জমা নেওয়া যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিভোর্সী শ্রীপর্ণার একমাত্র ছেলে তুতান। ছেলেকে ঘিরেই দুকামরার ভাড়াবাড়িতে এখন তাঁর জীবন। ডিভোর্সের পর নিজের আত্মসম্মানেই বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঠেনি শ্রীপর্ণা।

শ্রীপর্ণা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মাসিক সতেরো হাজার টাকার একটি চাকরি করছে। তবে আজকালকার যা খরচবহুল যুগ, তাতে এই টাকাতে যেন কিছুতেই সবদিক সামাল দিয়ে পেরে ওঠা যায় না। তবে ছেলের পড়াশুনার ব্যাপারে কোন কার্পণ্যতা রাখেনি শ্রীপর্ণা। একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ে ছেলে। স্কুলের খরচ জোগাতে তিনটে টিউশনও পড়ায় শ্রীপর্ণা।

- এই নে তোর স্কুলের গ্রিন ডে উদযাপনের পাঁচশো টাকা। 

শ্রীপর্ণা ছেলেকে টাকাটা দিল।

প্রতিদিনের মতো ছেলে চলে গেল স্কুলে আর শ্রীপর্ণা অফিসে।

কাজের ফাঁকে শ্রীপর্ণা অফিসে ভাবতে লাগলো

- এতো খরচ, ছেলেটার পড়াশুনো, দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগুন হয়ে উঠছে, চালাবো কিভাবে?

হঠাৎ লাঞ্চের পর অফিসের বস এসে জানালো শ্রীপর্ণা, অর্ণব, পারমিতা এই তিনজনের প্রমোশন হয়েছে। মাইনে একলাফে তিনহাজার টাকা বেড়ে গেলো। খবরটা শুনে শ্রীপর্ণা কিছুটা স্বস্তি পেলো। এখন সব মিলিয়ে মোট যা খরচ তাতে অন্তত এই প্রমোশনের পরে দুহাজার টাকা জমাতে পারবে। আজ যেন একটু খুশি মনে শ্রীপর্ণা বাড়িতে ফিরল।

সন্ধ্যেবেলা টিভি দেখতে দেখতে ছেলে বলল-

- মা স্কুলে ক্রিকেট খেলার জন্যে প্রশিক্ষণ দেবে বলেছে। যারা যারা ইচ্ছুক তাদের প্রতি মাসে হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেছে। প্লিজ মা, আমি শিখবো। তুমি তো জানো আমি কতো ভালো ক্রিকেট খেলি।

ছেলের এই আবদারে শ্রীপর্ণা আর না করতে পারল না।

সত্যিই ,প্রমোশনের চড়াই যেন আরও খরচের পাহাড়ে চড়িয়ে দিল।

এরই মধ্যে হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। দরজা খুলতেই ভাড়ার বাড়ির মালিক l

- শ্রীপর্ণা আশা করি ভালই আছো। ছেলের পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে তো। যাইহোক যেটা বলতে এসেছিলাম সামনের মাস থেকে ভাড়াটা হাজার টাকা করে বাড়িয়ে দিও। প্রায় দুবছর হলো তোমার ভাড়া বাড়াইনি।

- কিন্তু কাকু, এতো খরচে আমি,

শ্রীপর্ণা বলে উঠতেই মালিক বললো,

- শ্রীপর্ণা, এবার আর না করো না। এবার আমি আর না শুনতে পারবো না।

এই বলে মালিক চলে গেলো।

শ্রীপর্ণার অফিস ফেরত আনন্দটা যেন হঠাৎ বিমর্ষতায় বদলে গেলো।

বিষণ্ণ মনে ভাবলো, খরচের বোঝা এ জীবনে একদিকে শেষ হয়েও যেন অন্যদিকে শেষ হতে চাইবে না। এই হলো জীবন।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment