1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

সতী দাহ

ছবি : ইন্টারনেট 

সতী দাহ 

অর্পিতা ত্রিপাঠী 

মল্লিকার আজ স্বামী মারা গেছে। সে ঠিক করেছে সহমৃতা হবে। নিখিলেশকে সে প্রাণাধিক ভালোবাসত বলেই মনে হয়। তাই ও চলে যাবার পর বেঁচে থাকার মানেই হয় না।মল্লিকার পূর্বে নিখিলেশের আরও দুই স্ত্রী ছিল। তারা সকলেই পরলোকগতা। বয়েস বেশী হওয়ার কারণেই হোক আর রোগের কারণেই হোক নিখিলেশ প্রায়ই বলত, 

"আমি মরে গেলে আমার সাথে যাবে তো মলি? আমি কিন্তু একা একা স্বর্গের সিড়ি দিয়ে উঠতে পারব না।" 

উদাসীনভাবে মল্লিকা বলত, " অবশ্যই। আমিই তো যাব।"

মল্লিকাকে বলতে হয়নি, জোরাজুরি তো করতেই হয়নি সে নিজেই বলেছে, একসাথে চিতায় শয়ন করবে। 

এ কথায় উল্লাসের শেষ নাই তার পরিবারের। মা বাপ পর্যন্ত খুশি। তার আলতা রাঙা পায়ের ছাপ নেওয়ার সময় ছোট বোন কেঁদে ফেলেছিল শুধু। নির্বিকার মল্লিকার মুখে দুঃখের ছাপ নেই। পিসতুতো ভাই প্রসূন সুতানুটিতে ওকালতি শিখছে। সে বার বার বলেছিল, "মেয়েদের ইস্কুলে ভর্তি হবি চল দিদি। আমি নে যাবো। দেখবি, জীবনের আর একটা অর্থ ও আছে।"

মল্লিকা নিরুত্তর। 

আজ রাতটুকুই মল্লিকার জীবনের সময়। প্রবল বর্ষণে আজ রাতে দেহ দাহ করার কাজ বন্ধ আছে। কাল ভোর হলেই ঢোল করতাল সহযোগে শ্মশানযাত্রা শুরু হবে। 

শব ছেড়ে থাকার উপায় নেই। মৃতদেহের পাশে বসে থেকে ঘুম জড়িয়ে আসছিল চোখে। হটাত আওয়াজ এল, 

"শেষ কালে খেয়েই নিলি! হি হি হি! বেশ করেছিস!

কিন্তু নিজে মরবি কেন লা ? কোন দুঃখে? কি বলিস মেজ?" 

এয়েছেন। তেনারা এয়েছেন। 

মল্লিকার দুই সতীন। 

" ঠিকই তো দিদি। ওনাকে নিতে এয়েছি আমরা। তোর সাথে যাওয়ার তো দরকার নেই ছোট।" 

মল্লিকা ভয় পেতে ভুলে গেছে। আবছা দুটো ছায়ার কথাবার্তা তাকে নিয়েই হচ্ছে এই বোধ আসতে অনেক সময় নিল তার মন। 

সে বলল, " কিন্তু আমি যে কথা দিয়েছি।" 

"ওরে কথা তো আমাদেরও দিয়েছিল অনেকে। পরলোকে কিন্ত ব্যবস্থাটাই আলাদা। এখানে আসা মাত্রই আমাদের জিজ্ঞেস করল, 

" নিজের জীবনে আনন্দে বেঁচে ছিলে? তোমার জীবন অন্যের জীবনে আনন্দ এনে দিয়েছিল? 

কোনোটাই আমাদের ভাগ্যে ঘটেনি। তাই যতদিন অন্যের জীবনে না আনন্দ এনে দিচ্ছি মুক্তি নেই আমাদের। তাই বলছি বোন, তুমি আনন্দে বেঁচে আমাদের মুক্তি দাও।" 

"আর এদিকে?" মল্লিকার গলায় সতেজভাব ফিরেছে। 

"ও নিয়ে ভাবিস না।" 

আবছা অন্ধকার জমাট বেঁধে দুই মল্লিকার রূপ ধারণ করে। 

--আরে মরণ! দু দুটো মল্লিকা হলে চলে! 

--তবে আমি কি হব দিদি! 

--তুই! শ্মশানের মড়া কাঠ হ গে যা! কিছু পরে আমাদের সাথে পুড়বি।" 

ওদের এই খুনসুটিতে হেসে ফেলে মল্লিকা। তারপর প্রসূনের খোঁজে যায়। মেয়ে ইস্কুলে পড়বে সে। প্রথমভাগ... দ্বিতীয় ভাগ... 

নিজের জীবনে আনন্দে বাঁচবে। অন্যের জীবনে ও আনন্দ আনার চেষ্টা করবে। দেবী সতী হওয়ার থেকে এ ঢের বেশী ভালো হবে। 

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment