1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

অদ্ভুতূড়ে

 

ছবি : ইন্টারনেট

অদ্ভুতূড়ে  

মণিমোহন বন্দোপাধ্যায় 

শহর থেকে কুড়ি মাইল দুরে নির্জন স্টেশনে নেমেই শিউরে উঠল দীপ  । 

জায়গাটা ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে l.দুরে একটা আলো দেখা গেলো হঠাৎ.... । 

 শীতের মাঝরাত, তার সাথে ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া । 

কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই দূরে দৃশ্যমান আলোটার দিকে রওনা দেয় দীপ । 

হাওড়া থেকেই ট্রেনটা লেট করছিলো, কোলিয়ারি অফিস যেখানে সেই শহরে পৌঁছানর কথা বিকেল সাড়ে তিনটেয়, অথচ এই মাঝরাতে এসে খবর হোলো, ট্রেন এখন আর  এগোবে না, সামনে মালগাড়ি উল্টে লাইন ব্লক । 

ট্রেনে সাকুল্যে যে কজন যাত্রী ছিলো, তারা তড়িঘড়ি নেমে চলে গেল , যাবার আগে জানিয়ে গেল , জায়গাটা আদৌ ভালো নয় l..রাত্রে অলৌকিক সব ঘটনা ঘটে, স্থানীয় ভাষায় 'অনহোনী ' । 

সদ্য ডাক্তারির ইন্টার্নশীপ শেষ করে কোলিয়ারির এই চাকরিটা পেয়েছে দীপ  l.জয়েনিং এর সময়েই দেড়লাখ l..এটা হাতে নিয়ে পোস্টগ্রাজুএট  এন্ট্রান্স এর  জন্যে পড়াশুনো চালানো যাবে l..এই ভেবেই আসা ।

কালকে সকাল ন 'টায়  শহরের এরিয়া অফিসে হাজিরা দিতে হবে । 

চারিদিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার, পথঘাট ঠাহর হয় না l

 মোবাইলের আলোয় স্টেশনের নাম দেখলো..

আকাশকিনারী l..এতো কাব্যিক নাম অথচ কী গা ছমছম পরিস্থিতি l..

স্টেশনে একটা গুমটি ঘর, তালা দেওয়া l..কেউ নেই l

দূরের আলোটা ক্রমশঃ এগিয়ে আসছে, অল্প অল্প দুলছে l..এক একটা মুহূর্ত যেন এক ঘন্টা বোধ হচ্ছে  l..অবশেষে আলোটা কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো, আপাদমস্তক কম্বল জড়ানো কেউ, মুখ দেখা যায় না, হাতে লণ্ঠন l..বাজখাঁই স্বরে বলে উঠল, কৌন?

গলা শুকিয়ে কাঠ, ধরা গলায় ঋক বলে.. ট্রেন রুক গিয়া l..এরিয়া অফিস যানা হায়, কল সুবহা নোকরি জইন করনা হ্যায় l..কীসের চাকরি তাও এক নিঃশাসে বলে দেয় সে l

, আপ  ডাগদর হায়,.. চলিয়ে, কঁহি ঠাহরাতে হ্যায় রাত কো l..

ভয় লাগলেও উপায় না দেখে লোকটার সাথে চলতে থাকে দীপ l..ঠান্ডা হাওয়ায় আক্ষরিক অর্থেই দাঁতে দাঁত লেগে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে সে l..লোকটা থমকে দাঁড়ায়, তারপর নিজের গায়ের একটা চাদর খুলে তার  দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ওর  লিজিয়ে সর l.দীপ   সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে l

বেশ কিছুক্ষণ পরে ওরা যেখানে এসে দাঁড়ায়, তার সামনে লম্বা খাল, অল্প জলস্রোত l..তার পাশে সারিসারি খাপড়ার ঘর, লোকটি জানাল এগুলো কয়লা মজুরদের আস্তানা, ওরা বলে 'ধাওড়া 'l..এতো  নীচু দরজা, মাথা হেঁট করে ঝুঁকে ঢুকতে হোলো l..টিমটিমে কেরোসিন কুপি জ্বলছে l..মাটির উপরে পাতা মলিন শয্যা, ততোধিক ময়লা কাঁথা ঢাকা এক শিশু, মাথার কাছে বসে এক ক্রন্দনরতা প্রৌঢ়া, মুখে কাপড় চাপা দেওয়া l..

লোকটা বলে ওঠে, লো.. কম্পউন্ডার কা খোজ মে গিয়া থা, ডাগদার মিল গয়া l..

যা জানা গেলো,  বাচ্চাটার তিন দিন ধুম জ্বর,হাঁপানি,  আজ রাতে দুবার খিঁচুনিও হয়েছে l..

আশঙ্কা , কষ্ট, খিদে সব চাপা পড়ে গিয়ে, ডাক্তারি সত্তা জেগে উঠল  দীপের l

ওর ব্যাগে সব সময় স্টেথো, কিছু ইমার্জেন্সি ওষুধ ইনজেকশন থাকে, বিষেশত ট্রাভেল করার সময় l..দেরী না করে  পরীক্ষা করে দেখলো l..বুকে কফ বসে আছে l..বেশ জ্বর l..দুটো ইনজেকশন দিয়ে দিলো, অবশ্যই ভয় করছিলো, যদি বিপরীত কিছু হয়, তাহলে প্রাণটা এখানেই রেখে যেতে হবে l..এতক্ষনে

একটা চাটাই পেতে ওকে  কে বসতে দিলো লোকটি l

এক পাশে স্টোভ জ্বালিয়ে গরম করা এক লোটা দুধ এনে ওর সামনে ধরলো, পিজিয়ে সর l..ফীস নহি দে পায়েঙে l..ভগওয়ান আপকা ভলা করেঙ্গে l..

এবার আর না করে না দীপ,  দুধটুকু খেয়ে নেয় l..

রাত ক্রমশঃ ফুরিয়ে আসছে l..

কপালে হাত দিয়ে  দেখে, বাচ্ছাটার জ্বর অনেকটাই কম, শ্বাসকষ্টও কম l..

বলে কালকে সকালে কোলিয়ারি ডিসপেনসারি তে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে নিও l

ভোর হয়ে এলো,.. লোকটা হাঁকডাক করে কোথা থেকে একটা অটোওয়ালা ধরে আনলো l..বলে দিলো, সোজা শহরে এরিয়া অফিস পৌঁছে দিতে, আরো ফরমান জারী করলো,  ডাগদার সাহাব এর থেকে যেন ভাড়া না নেয় l

বেরোনোর সময়,  দীপ  জিজ্ঞেস করলো, এই জায়গাটার ভূতের উপদ্রব কী আদৌ সত্যি?..

লোকটি একগাল হেসে বলল, উধার দেখিয়ে সাব l

দেখা গেলো, খালি গায়ে কালি ঝুলি  মাখা সারি সারি ছেলে বুড়ো সাইকেল ঠেলে চলেছে, সাইকেলের সর্বাঙ্গে বস্তা বস্তা কয়লা চাপানো l..কয়লার ভারে সবাই ন্যুব্জ l

লোকটি বলল, এটাই এদের রুজিরুটি, রাতের অন্ধকারে এরা কয়লা পাচার করে l.. অবশ্যই  প্রভাবশালী দের  যোগসাজসে l..যাতে লোকে এ তল্লাটে পা না দেয়,.. সে উদ্দেশ্যেই  বছরের পর বছর ধরে এই অলীক  ভূতের কাহিনীর  কৌশলী প্রচার l

সূর্য উঠছে l..এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে  দীপের  অটো এগিয়ে চললো কোনো অজানা  ভবিষ্যতের দিকে ll

...(সমাপ্ত)...





No comments:

Post a Comment