ছবি : ইন্টারনেট |
কুম্ভকর্ণ সিনড্রোম
সন্দীপ যাযাবর দত্ত
--- আপনার সমস্যা কি বলুন!
--- সেটাই তো ঠিক বুঝতে পারছি না, ডাক্তারবাবু!
--- কি অসুবিধা হচ্ছে এখন?
--- বড্ড ঘুম পায় আজকাল। উঠতে ইচ্ছে করে না একদম।
--- কতদিন ধরে এরকম লাগছে?
--- অনেকদিন। জানেন, কথা বলতেও কেমন আড়ষ্ট লাগে। যা বলতে চাইছি, ঠিক বলে উঠতে পারছি না। সেদিন পার্টির ছেলেরা এসে জুলুম বাজি করলো, চুপ করেই থাকলাম। নাতনিকে রাস্তায় কিছু চেংড়া ছোঁড়া উত্যক্ত করলো, আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি তো এরকম ছিলাম না।
ডাক্তারবাবু চশমাটা ঠিক করতে করতে বললেন,
--- আর কিছু?
--- সব সময় খুব শীত করে আজকাল। জুবুথুবু, জড়সড় হয়ে থাকি। কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকি। শিরদাঁড়া বরাবর খুব যন্ত্রণা। একটা MRI করা হয়েছে। দেখুন।
ডাক্তারবাবু, মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। মুখটা গম্ভীর করে বললেন,
--- অসুখটা কিন্তু বেশ পুরনো।একটা মজার নাম আছে, ক্রনিক কুম্ভকর্ণ সিন্ড্রোম।
মানব বাবুর মুখটা হাঁ হয়ে গেল, এরকম কোনো রোগের নাম তিনি আগে শোনেননি। ডাক্তারবাবু বলে চলেন,
--- এটি একটি সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যাধি। অনেকেই আক্রান্ত। তবে প্রথম পর্যায়ে ঠিক বোঝা যায় না।আস্তে আস্তে রোগী তার স্বাভাবিক চেতনা, মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে। সমগ্র প্রতিবাদী সত্ত্বা ঘুমিয়ে থাকে যেন। রক্তের তাপমাত্রা কমতে থাকে। সে কারণেই সবসময় শীতের অনুভূতি আপনার। আপনার MRI থেকে বোঝা যাচ্ছে আপনার মেরুদন্ড ক্ষয়ে ক্ষয়ে শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পরের দিকে মেরুদণ্ডের অস্তিত্বই থাকবে না। তখন কুণ্ডলী পাকিয়ে শুতে কষ্ট হবে না আর। শেষমেশ চিরকালীন শীতঘুম ।
--- কোনো প্রতিকার নেই এই অসুখের?
--- একটিই প্রতিবিধান আছে। পলিটিকোথেরাপি। দুষ্প্রাপ্য, খরচও অনেক! পারবেন কি?
--- বলুন শুনে রাখি, যদি সম্ভব হয়...
--- দেখুন, সামনের নির্বাচনে যদি কোনো পার্টি থেকে একটা টিকিট
ম্যানেজ করতে পারেন! ওতে রোগ না সারলেও, অসুখ নিয়ে বাঁচার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে যাবে।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment