1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

বিসর্জন

ছবি  : ইন্টারনেট

বিসর্জন

গার্গী চৌধুরী

কমলার আজ বেরতে ইচ্ছে করছে না

আজ দশমীর  বিসর্জনে যাবে বলে গ্রামের হুল্লোরে মেয়েরা খুব উৎসাহী

কয়েক বছর ধরে মেয়েরাও সামিল হচ্ছে গ্রামের প্রতিমা  বিসর্জনে

অজয় নদীতে  আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়

ষোলো বছরের কমলা আগেরবার  পুজোর বিসর্জনে গিয়েছিল

খুব মজা করেছিল

এবার মাধ্যমিক দেবে

বাবা অসীমবাবু নিজের মুদিখানার দোকান

নিজের জমিজমা,দোকান সামলে বাবা  বেশি সংসারে মন দিতে পারে না

বে েয়েদের পড়াশোনার  দিকে ুব নজর

অমলা আর কমলা দুই বোন

অমলার বারো ক্লাশ

মাষ্টার ননীমাধব খুব ভালো ছেলে

দুই বোনকে পড়ায়

সীমবাবুদের গ্রামের মধ্যে সম্মানীয় মধ্যবিত্ত পরিবার বলেই সবাই চেনে

কমলা আর অমলার ব্যাপারে মা টুম্পার খুব নজর

টুম্পা বাড়িতেই থাকেবাড়ির কাজকর্ম সেরে যতটা মেয়েদের সময় দেওয়া যায়

সেলাইফোড়াই,আলপনা দেওয়া,আচার বানানো,বড়ি বানানো এগুলো সব মায়ের কাছেই শিখছে ওরা

তবে সামনের মাসে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হবে ওরা

ননী স্যার ব্যবস্থা করে ক্লাস খুলবে কোনো এন জিওর সাথে

বে কটা ্যাপার টুম্পার ভালো লাগে না

াশের াড়ার জয়ের াথে কমলার মেলামেশা

অজয়ের বাবা রাজমিস্ত্রি

খাওয়া পরার অভাব নেই

কিন্তু ছেলেটা কোনো কাজ কর্ম করে নাপড়াশুনো দশ ক্লাস অবধিও নয়

নাইন পড়ে স্কুল যাওয়া বন্ধ

পাড়ার বাউণ্ডুলে ছেলেদের মধ্যেই  ফেলে ওকে টুম্পা

কতবার বলেছে  অজয়ের সাথে কথা না বলতেতবুও মেয়ে কেন শুনবে উঠতি বয়সের মনস্কুল থেকে ফেরার সময় জমির আলপথ ধরে দুজনকে  হাঁটতে অনেকেই দেখেছে

অমলাও কিছু বলে না। কিন্তু বিপদ যা হবার তা হয়ে গেল

পুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল কমলা

কিছুক্ষণ  বন্ধুদের সাথে ঘুরে তার পর অজয়ের সাথে ঘুরতে চলে গেল

বন্ধুদেরও সায় ছিল দের দুদণ্ড আনন্দ ফুর্তি করতে দিতে

কিছুটা ঘোরাঘুরির পর অজয় কমলাকে খানিকটা জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল

গায়ে মাথায় হাত বুলোতেই কমলা সরে এলো

একি,কি হচ্ছে?”

কেন,যাকে ভালোবাসি তাকে একটু ছুঁয়ে দেখবো না

সন্ধ্যে হয়ে যাবে,বাড়ি যাই

তাতে কি?একটু আদর না করে

তোকে ছাড়বো না

নতুন হলুদ তাঁতের শাড়ির ভেতর দিয়ে কমলার সদ্য প্রস্ফুটিত

যৌবন উঁকি মারছেমলাকে সজোরে কাছে টেনে নিয়ে ওষ্ঠে,গালে,মাথায় চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলো জয়

কিন্তু কমলা ভালো করেই বুঝতে পারছে কি তীব্র শক্তি দিয়ে কমলাকে আদায় করে নিতে চাইছে অজয়মলার কোমল মন এটুকু জানে ভালোবাসা এতো কষ্ট দেয় না

কমলা নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিতেই বাঘের মতো  ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর ওপর  অজয়

 একি হচ্ছে?ভালোলাগার মুহূর্তগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অজয়ের পাশবিক শক্তিতে

পুরো শাড়িটা ছিঁড়ে গেল কমলার মুখ হাত দিয়ে চেপে রেখে

সমস্ত জান্তব পৌরুষ ওর ওপর আরোপ করছে অজয়

যন্ত্রণায় ছট ফট করছে কমলা

আধঘন্টা পর নিজেকে কোনো রকমে অজয়ের গ্রাস থেকে মুক্ত করে যখন বেরোলো তখন ওর নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছিল

বিকেল পাঁচটা

কোনো রকমে ছেঁড়া শাড়িটা  জড়িয়ে পাশের পাড়ার অলি দিদিমণির কাছে গেল কমলা পেছনের জঙ্গলে মধ্যে দিয়ে একটা রাস্তা অলি দিদিমণির বাড়ি যায় শরীরটাকে টানতে টানতে অলিদিদিমণির বাড়ি পেছনের রাস্তা দিয়ে  পৌছল কমলা

অলির কেউ নেই

পঞ্চাশোর্ধ অলি কমলাকে দেখেই বিপদের সংকেত পেয়েছে

সবটা জেনে কাছেই ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গেলো

সব কিছু জেনেও অলির জন্য থানা পুলিশ করলো না ওরা

কমলাকে ওরা দুজনে মিলে পৌঁছিয়ে দিতে এলো বাড়িতে

টুম্পা চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল

মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে থমকে দাঁড়ালো

অলি ওর কাঁধে হাত রেখে শান্ত ভাবে বলল ওকে ধর্ষণ করা হয়েছেতবে

কোনো ভয় নেই ডাক্তারদাদা দেখেছেন কিছুদিন রেস্টে থাকবে কমলা

কিন্তু দিদি?”

কোনো কিন্তু নয়কেউ জানে না,জানবেও না

টুম্পা তাড়াতাড়ি কমলাকে বিছানায় শুইয়ে দিল

বাড়িতে তখন শুধু অমলাুজনে িক রলো সবাই জিজ্ঞেস করলে বলবে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে

দুদিন শুয়ে থাকবে কমলা

অষ্টমী নবমী গিয়ে দশমী

কমলা কারুর সাথে কথা বলছে না

শুধু সাদা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে

েঘগুলো েখলে গের সেই ভালো লাগাটা আসছে না দশমীর ঠাকুর বিসর্জনের হুল্লোড়  চারপাশেএবার আর টুম্পা পাড়ার মণ্ডপে যাবে নামন মেজাজ ভালো নাঅসীম খুব চুপচাপ

বিকেল ছটা পাড়ার ছেলে মেয়েরা ম্যাটাডোরে সবাই মিলে নাচতে নাচতে ঠাকুর বিসর্জন করতে যাচ্ছে

বন্ধুরা অমলা কমলাকে ডাকতে এসেছিল মেয়েদের জ্বর বলে ওদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে টুম্পা

হঠাৎ কমলা সদর দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে গেল

অসীম অমলা ছুটলো ওর পেছন

ওই তো কমলা

প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে এক সাথে অনেকগুলো

সবাই বাজনা, আলোয়, আনন্দে মত্ত

ওরই মধ্যে কমলা অজয়কে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ফাঁকা জেয়গায় কমলার মধ্যে এতো আগুন কেউ দেখেনি আগে জোয়ান ছেলেকে টানতে পারা সহজ নয়

ঈশ্বর যেন ওকে এক আলৌকিক শক্তি দিয়েছেন

শুধু বলে যাচ্ছে বল, সবাইকে আমার সাথে তুই কি করেছিস

সবাইকে বল

কি করেছি?,আমি কিছু তো করিনি

এতক্ষণে অজয়ের বন্ধুরা ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে

অজয় ওদের দিকে তাকাতেই তপন আর বিলু বলে উঠলো

সত্যিটা আমরা জানিকমলাকে সেদিন  বিধ্বস্ত অবস্থায় জঙ্গলে  দেখেছিলাম তার পর তোকেও আমরা পালাতে দেখেছিলামতবুও তোর মুখ থেকে শুনতে চাই

হয়তো  শাস্তি কম হতে পারেসত্যি বললে

অজয়  তোরা মিথ্যে বলছিসআমি কিছু করিনি,কমলা নিজেই আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক  চেয়েছিল

অজয়ের কথা শুনে কমলা নদীর পাড়ে পরে থাকা একটা  বাঁশ তুলে অজয়কে যেই মারতে যাবে অমনি অজয় ভয় পেয়ে বলে উঠল ভুল হয়ে গেছে কমলা,এবারের মতো ক্ষমা করে দে

কি করেছিস সেটা বল

কি করেছিলাম?”

অলি দিদিমণি ততক্ষণে অজয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ওর ডাক্তারি পরীক্ষা আমি করিয়েছিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

এতক্ষণে কমলার বন্ধুরা এসে দাঁড়িয়েছেওদের সামনেই কমলা অজয়ের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল

কমলা অজয়ের কথা শুনে  বাঁশটা সজোরে মারবে বলে হাতে ওঠাতেই অজয় বলে উঠলো

ভুল করেছি,কমলা,মাপ

করে দে

কমলা সবার সামনে বল কি করেছিস

এতক্ষণে গ্রামবাসিরাও লাঠি  নিয়ে প্রস্তুত অজয়কে উচিৎ শিক্ষা দেবে বলে

মার খাওয়ার ভয় গ্রামবাসিদের সামনেই অজয় মুখ ঢেকে সমস্ত ঘটনা উগরে দিল

পেছন থেকে কমলার বাবা অসীম বলে উঠলো

মারিস না কমলা,নিজের হাতে আইন তুলে নিস না

আমি সব জানিঅলি দিদিমণি সব বলেছে

বাবাকে দেখেই কমলা বাবাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল

আমার সব বিসর্জন হয়েছে বাবা

অসীম মেয়ের মাথায় হাত  বুলোতে বুলোতে বললেন

ভয় নেই মা বিসর্জন হয়েছে তোর লোকলজ্জার ভয়

মানুষ হিসেবে কোনো ভুল কাজ করিসনি তুই

তোর সাহস আর শক্তি দেখে মনে হচ্ছিল মা দুর্গা  তোর মধ্যে জেগে ঠেছেন

কাউকে ভালো লাগা,বিশ্বাস করা কোনো দোষের নয়

ততক্ষণে অলি দিদিমণি,ডাক্তার বাবু,গ্রামবাসী সবাই কমলার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে

অসীম টুম্পা দুজনের সামনে অজয়ের মা শুধু হাত জোড়

করে বলল আপনারা চাইলে পুলিশে দিতে পারেন

অসীম   পুলিশে দিলেই কি

শুধরে যাবে আপনার ছেলে?

না আপনি ছেলেকে মানুষ করতে পারেননি,তার পরিচয় সবাই পেয়েছে

নিয়ে যান ছেলেকে,ঘরে রাখুন,দেখবেন আর কারুর সর্বনাশ না করে

দুবছর পর……

গোটা গ্রাম কমলার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে

ননী স্যার দিন রাত খেটে মেয়ে

দুটোকে ভালোভাবে পাশ করিয়েছে

অসীম জমি জমা বেঁচে

গ্রামের পাঠ চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে  শহর কলকাতায় চলে াচ্ছে

মেয়েদের কলকাতায় পড়াবে

কমলা মনের ক্ষত সামলে  অনেকটাই সেরে উঠেছে

একদিনের জন্যও গ্রামের কেউ ওকে কটু মন্তব্য করেনি

স্কুলের মাস্টাররা,বন্ধুরা সব সময় পাশে থেকেছে সবাই বুঝিয়েছে কমলা  শুধু শরীর নয়, কজন সাহসী সত্যবাদী মানুষ

গ্রামে সমাজ সেবক সংস্থা থেকে কিছু লোকজন অজয়কে সঠিক পথ দেখাবার চেষ্ঠা করেছে,কথা বলে বোঝার চেষ্ঠা করেছে ওর ভেতরে এতো জঘন্য অপরাধের বীজ কি ভাবে এসেছেঅজয় রাতে পড়াশুনো দিনে বাবাকে সাহায্য করে

ক্লাশ টেন পাশ করে আরো পড়তে চায় অজয়

সমাজ সেব সংস্থা   কাজ শুরু করার পর থেকে

ওর মাকে আর বাবার হাতে মার খেতে হয়না

রোজ রাতের শারীরিক ও মানসিক আপোষ থেকে মুক্তি পেয়েছে ওর মা

সমাজসেবক সংস্থা মনে করছে বাড়িতে মায়ের ওপর অত্যাচার

হলে তার অনেক কুপ্রভাব ছেলের ওপর পড়বে

আরো  তিন বছর পর…….

অমলার আজ বিয়েকলকাতায় কলেজ পাস করে একটি বেসরকারী স্কুলে চাকরি পেয়েছে অমলা

স্বামীও স্কুলে পড়ায়কমলার ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনা জানে ছেলে পক্ষ অসীম আর টুম্পা কোনো কিছু চেপে রাখেনি

উনি মনে করেন  পাত্রপক্ষ কেমন মানসিকতার সেটা যাচাই করে নেওয়া ভালো

যদি এই ঘটনার কারণে ওদের বিয়েতে আপত্তি থাকে তাহলে বিয়ে  ভেঙ্গে যাওয়া ভালো

না,পাত্র পাত্রের পরিবার বিষয়টিকে আমল  দিলেন নাপাত্রের বাবা  বললেন আমাদের দেশে এমন কোনো মহিলা পাওয়া যাবে না

যার ওপর কুরুচিপূর্ণ আচরণ করা হয়নি,যৌণ নিগ্রহ একটা সামাজিক ব্যাধি, যার দায় আমাদের সবার। পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরি করেছি

মূল্যবোধ  ডুবে যায় নি

আমি ব্যাধি নয়,পরিবারের সদস্য নিতে এসেছি

কমলা কলেজে পড়ছে আর সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য তৈরী হচ্ছে কোচিং ক্লাসে শ্যামল ওর খুব বন্ধু

ওর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা শ্যামল জানেতবে এটা ওদের বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব ফেলেনি

প্রভাব ফেললেও কমলার কিছু এসে যায় না

সেই  প্রতিমা বিসর্জনের রাতে কমলা লজ্জা,ভয় দুটোই বিসর্জন দিয়েছে আরো নির্ভীক

 আত্ম বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে

অসীমের শাড়ির ব্যবসা টুম্পাও দেখাশোনা করছে

এক কথায় জীবন থেমে থাকেনি জীবন যে  সব সময় প্রবাহমান

...(সমাপ্ত)...


2 comments:

  1. লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো l এরকম ঘটনা সারা দেশে মেয়েদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে l পক্সো আইন চালু হয়েছে l তবে আরো কঠিন ভাবে তার প্রয়োগ করতে হবে l এই গল্পে ধর্ষক কে ক্ষমা করে দেওয়া হলো l শুধরানোর সুযোগ দেওয়া হলো l .এখানেই গল্পের নতুন অভিমুখ সৃষ্টি হয়েছে l
    বৌধায়ন মুখোপাধ্যায় l

    ReplyDelete
    Replies
    1. 🙏🙏অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান মতামত দেবার জন্য

      Delete