ছবি : ইন্টারনেট |
মেধার হালহকিকত্ : একটি আলোচনা
বুদ্ধি আর স্মৃতি
পরস্পর সম্পৃক্ত | আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
থাকা যেন বা বলা যায় একে অন্যের পরিপূরক | তো এরাই আবার স্বতন্ত্র পদক্ষেপে পরস্পর নির্ভরশীল | একে অন্যকে ছাড়া চলতে পারে না অর্থাত্ এরকম না ঘটলে
মেধা বলা যায় না, অন্ততঃ আমার তাই মনে
হয় | সমছন্দে সমলয়ে এগোলেই আমরা
তাদের বৌদ্ধিক ও সুদীপ্ত প্রকাশ দেখতে পাই | যে মানুষের মধ্যে তারা বাস করে প্রকট রূপে প্রকাশিত
হয় তাকে বলি মেধাবী | উচ্চমেধা,
নিম্নমেধা অনেকে ব'লে থাকেন | আমার ক্ষুদ্ৰমস্তিস্ক বলে, মেধাবীর কোনো ভাগ নেই | মানে কম মেধাবী , বেশি মেধাবী এরকম বলা যায় কি ? আমার তো মনে হয় এরকমভাবে দেখা বা ভাবা হয় না |
তবে হ্যাঁ ,বুদ্ধ্যাঙ্কের তারতম্য হতে পারে, যদিও সেটা থাকে পিঠোপিঠি | আর একটা কথা- ভালো বুদ্ধি আছে স্মৃতিশক্তি দুর্বল,
এরকম হলে ঘোর বিপদ |
মানে বুদ্ধিটা তেমন সুবিধা
করে উঠতে পারবে না | আবার বুদ্ধি কম যার
বিশ্লেষণী ক্ষমতা নেই অথচ মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী, তাকে আমরা মেধাবী বলি না | বিশ্লেষণ ভিত্তিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সে হোঁচট খেতে
খেতে মুখ থুবড়ে পড়বে | তার মানে সে বার বার অবনতির পথটাই দেখবে |
অনেকের মতে শুধুমাত্র স্মৃতি নির্ভর পড়াশোনায় নব্বই শতাংশ মার্কস
পাওয়াটা শিক্ষা পরিকাঠামো থেকে অর্জিত | শিক্ষা ব্যবস্থার দায় আছে ঠিকই কিন্তু
আমি বলব নব্বই শতাংশ মার্কসটা স্মৃতি দিয়ে পাওয়া যায় না | বুদ্ধি শক্তিশালী না হলে এই মার্কসটা আসবেই না |
যদি তা হয় তাহলে ধরে নিতে
হবে মার্কস-এর জন্যই তার পড়াশোনা | এটা একটা ব্যাতিক্রমী
ঘটনা | তবে মেধার একটা নিজস্ব জগত্
আছে | সেখানে জোর করে কেউ ঢুকলে
দিশা হারিয়ে সংকীর্ণ মেধার পরিচিতি পায় | যা কখনোই কাম্য নয় এবং তা পড়ুয়ার আগামীতে পথ চলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে
| মানে একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন,
বর্তমান শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে
বলছি, বেশকিছু ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে
৫০ শতাংশ নাম্বার পেয়ে দুম করে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছে | তারপর একসময় পিছিয়ে পড়ছে ক্লাসে বিজ্ঞানের সঙ্গে
যুঝতে না পেরে | শুধু ৫০ শতাংশ কেন,
হোঁচট খাচ্ছে ৬০%-৮০% পাওয়া
ছাত্রছাত্রীরাও | এরা মাধ্যমিকে যে মানের ছাত্রছাত্রী ছিল উচ্চমাধ্যমিকে
বিজ্ঞান শাখায় সেই মান ধরে রাখা দুর অস্ত্
উল্টে তাদের মান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে | তাহলে তৈরি হচ্ছে না ভবিষ্যতের প্রশ্নচিহ্ন ?
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরে আসে সেটা হলো 'গভীরতা' | এই গভীরতা বোধে শিক্ষাকে ভালোবেসে জ্ঞান অর্জন করে কতজন? প্রতিবছর হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এম এ, এম এস সি পাশ আউট হচ্ছে , তাদের মধ্যে কতজন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা দেখাতে পারে ? ওপর ওপর বা ভাষা ভাষা পড়াশোনার রীতিটার বড্ড বাড়ন্ত হয়েছে | তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী' প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতা | কোনো কোয়ালিটি তৈরি হচ্ছে না, হচ্ছে ভুরিভুরি-ঝুড়িঝুড়ি কোয়ালিফিকেশন | নিজেকে মনোগ্রাহী করে তুলছে আত্মম্ভরিতার পোশাকে | যাইহোক এসবই কিন্তু ঘটে চলেছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থার দাক্ষিণ্যে |
প্রতিবছর বোর্ড, কাউন্সিল,সিবিএসই ও আইসিএসই পরীক্ষায় কিম্বা জয়েন্ট বা নিট পরীক্ষায় ৯৫%-১০০% পাওয়া মেধাসম্পন্ন এত এত পড়ুয়া আমরা টিভিতে ,খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছি ,পরবর্তীকালে সেই মেধার অবস্থান কী হচ্ছে ? তারা কোথায় যাচ্ছে? অর্থাত্ কে কোথায় কী পড়ছে ? কোথায় কোন পদে রয়েছে ? দেশের উন্নয়নে তাদেরকে কতটা কাজে লাগানো হচ্ছে ? কিম্বা তারা চাকরির আকালের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে না তো ? এই প্রশ্ন অনেকের | পরবর্তীকালে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা |
আর একটা শব্দ এই আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ , সেটা হলো 'প্রতিভা' | ঈশ্বর প্রদত্ত ব'লে এই শব্দটিকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি করি এবং অবশ্যই খুব ভালোবাসি | প্রতিভার সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে ভালো না বাসলে প্রতিভা সদর্থক হয় না | কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়েই মানুষ পৃথিবীতে আসে | এক একজন মানুষ এক এক রকম কিম্বা বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায় | শুধু প্রতিভা থাকলেই তো হয় না, প্রকাশটাই আসল কথা | তার কারণ মানুষ প্রকাশটাই দেখবে | এই প্রকাশের পথটাই যে বড় কঠিন | তাই এক্ষেত্রে বুদ্ধি ও বিচক্ষণতাই শেষ কথা | একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে যদি সে সবরকম অনুকুল পরিবেশ পায় | তাই এটাই শিশুটির যথাৰ্থ দাবী হয়ে উঠুক পরিবার, সমাজ ও দেশের কাছে | মেধার সঙ্গে প্রতিভা শব্দটিও জুড়ে আছে | আমরা বলে থাকি উমুক ছেলেটি বা মেয়েটি পড়াশুনায় ভীষণ ট্যালেন্টেড | যে অনায়াসে খুব সচ্ছন্দ এবং দ্রুততার সঙ্গে মস্তিস্কে ধারণ ও তার প্রয়োগ ঘটাতে পারে, এটি একটি দিক | আর অন্যটি- এই প্রতিভার মধ্যেই রয়েছে উদ্ভাবনী শক্তির বহুবিধ ব্যাতিক্রমী সত্তা | যেমন - সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য, ক্রীড়া সহ আরো অনেক কিছু |পড়ুয়ার মধ্যে যদি বুদ্ধি, স্মৃতি ও প্রতিভা এই তিন বিশেষণ একত্রে বাস করে তাহলে তার মেধা অনেক বেশি শক্তিশালী হতে পারে ।
দেশ ও দশের কল্যানার্থে বা মঙ্গলার্থে সুশিক্ষা বা জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে পারলে মেধার পরিচয় আমরা পেতে পারি | আর মেধা এখন ছুটছে অর্থের পিছনে | অর্থাত্ কীভাবে দামি পদটা দখল করে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত ও বিলাসিতায় ভরিয়ে রাখা যায় | পরিষেবা দেওয়ার মানসিকতা কতটা আছে সেবিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসে | তাই বলতেই হয় মেধা শুধু অর্থের প্রাচুর্য্যের সঙ্গে ওঠবস্ করে চলেছে | মেধার কাজ শুধু মেধাবীকে সুখসমৃদ্ধি ও বিলাসিতায় ডুবিয়ে রাখা নয়, দেশ ও দেশের মানুষের হিতসাধন করা | তা তো হচ্ছে না | মৃত্যু হচ্ছে মেধার সারবত্তার |
একটি স্বশাসিত সংস্থা গড়ে তার অধীনে দেশের নানা
বিভাগের সমস্ত মেধাবীদের নিয়ে আসা দরকার | সাধারণ মানুষ মেধাবীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে | তাছাড়া শুধু চাকরিমুখী শিক্ষাই নয় মানবিক মুল্যবোধের
শিক্ষাও খুব যত্নের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায় লালন করা অত্যন্ত জরুরী | এই ব্যবস্থার যারা নিয়ামক, যারা ক্ষমতার অলিন্দে বসে রয়েছেন, তারাই শিক্ষার যথাৰ্থ সংস্কার করে মেধার ভবিষ্যত্
নিশ্চিন্তে ছাড়তে পারে মেধাবীদের হাতে |
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment