![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
নাপোলি ও পম্পেই ভ্রমণ: ইতিহাসের এক অদেখা ক্যানভাস
ডাঃ রণধী দাশ
নেপোলি: ইতিহাসের শহরে এক নতুন দিন
সকালের হালকা জলখাবার সেরে রোমা টারমিনি স্টেশন থেকে আমাদের নেপোলি যাত্রা শুরু হলো। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম নেপোলি সেন্ট্রালে। হোস্টের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছাতে পাঁচ মিনিটও লাগলো না। সুন্দর ও বড় এই অ্যাপার্টমেন্টে আমরা পরবর্তী তিন রাত কাটাবো।
নেপোলি, বা নাপোলি, ইতালির এক ঐতিহাসিক শহর যা তার অনন্য সংস্কৃতি, শিল্প এবং অবশ্যই বিশ্ববিখ্যাত নেপোলিটান পিজ্জার জন্য পরিচিত। ২৮০০ বছরের পুরোনো এই শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার ছাপ। নেপোলি শহরের প্রাণকেন্দ্রে Spaccanapoli-এর সরু গলিগুলো যেন এক জীবন্ত জাদুঘর, যা আমাদের মুগ্ধ করে রাখলো।
নেপোলিটান পিজ্জা এখানকার এক বিশেষ আকর্ষণ। এখানকার পিজ্জায় ব্যবহৃত টমেটো ভিসুভিয়াস পর্বতের ঢাল থেকে আসে, আর মোজারেলা ডি বুফালা নামক বিশেষ মোজারেলা তৈরি হয় ভূমধ্যসাগরীয় মহিষের দুধ থেকে, যা এই পিজ্জাকে এক অসাধারণ স্বাদ দেয়। আমরাও এখানকার বিখ্যাত নেপোলিটান পিজ্জা, পাস্তা, এবং সি-ফুড দিয়ে তৈরি Grigliata di calamari e gamberi ও Mozzarella di bufala Pizza খেলাম, যা ছিল এক কথায় অসাধারণ।
পম্পেই: ভিসুভিয়াসের কোলে এক নীরব শহর
নেপোলি থেকে পম্পেই যাওয়ার জন্য আমরা পাশের দোকান থেকে বাস টিকিট কেটে নিলাম। মোটামুটি ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা ভিসুভিয়াসের পাদদেশের এই ঐতিহাসিক স্থানে পৌঁছে গেলাম।
পম্পেই এক রোমান শহর, যা ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ অগ্নুৎপাতে মুহূর্তের মধ্যে লাভা আর ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, এই অগ্নুৎপাতই শহরটিকে ইতিহাসের বুকে অক্ষত রেখে দেয়। ১৮ শতকে খনন কাজ শুরু হওয়ার পর এই শহরটি যেন পুনরায় জেগে ওঠে। এখানে আজও দেখা যায় প্রাচীন বাড়ি, থিয়েটার, বাজার এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিদর্শন।
পম্পেই-এর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল আমরা যেন ২০০০ বছর আগের রোমান যুগে ফিরে গিয়েছি। এখানকার প্রতিটি স্থাপত্য, প্রতিটি শিল্পকর্ম যেন সেই ভয়াবহ মুহূর্তের নীরব সাক্ষী। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে জমাট বাঁধা মানুষের শরীরের ছাঁচগুলো দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম, যা সেই সময়ের ভয়াবহতা অনুভব করতে সাহায্য করে। এই পুরো এলাকাটি ঘুরতে আমাদের ঘন্টা দুয়েক সময় লাগলো।
ফিরে আসা এবং নতুন আবিষ্কার
পম্পেই থেকে ফেরার পথে আমরা কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার বাড়ি দেখলাম। নেপোলিতে খেলার সময় এই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। সন্ধ্যায় নেপোলি ফিরে এসে আমরা শহরের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখলাম, যেমন - Sansevero Chapel Museum, San Gregorio Armeno, Museo Archeologico Nazionale di Napoli এবং আরও কিছু স্থান।
সূর্যাস্তের আলোয় নেপোলি শহরের সৌন্দর্য ছিল এক ভিন্ন মাত্রার। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে, আমরা একটি স্থানীয় দোকানে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেলাম। রাতের আঁধারে নেপোলি শহরের অলিগলিতে হেঁটে, তার উষ্ণতা অনুভব করে আমরা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরলাম। পরদিন নতুন করে আরও কিছু অনাবিষ্কৃত স্থানের সন্ধানে বেরোনোর জন্য তৈরি হয়ে নিলাম।
No comments:
Post a Comment