![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
মিথ্যে ভূতের সত্যি
গল্প
প্রবীর আচার্য
রাত বুঝতে পারে নি নেঙাই ঘােষ। সারাদিন হাড়ভাঙা
খাটুনির পর প্রথম রাতেই ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে ভাের হয়ে গেছে ভেবে
লাঙল জুড়ে বেরিয়ে পড়ল মাঠে। ঘন ঘুটঘুটে অমাবস্যার রাত, আকাশে চাঁদ না থাকায় রাত ঠাহর করতে পারল না বেচারি।
জমিতে লাঙল চালাতে শুরু করল অন্ধকারেই। হঠাৎ তীব্র সোঁ সোঁ শব্দ কানে আসতেই হকচকিয়ে
গেল সে। পরিষ্কার আকাশে একটুকরােও মেঘ নেই, ঝকঝক্ করছে তারাগুলাে। জোরে বাতাসও দিচ্ছে না। শব্দটা
কোথেকে আসছে। ঠাহর করার জন্য উপর দিকে তাকাতেই চক্ষু চরকগাছ! ঘন কালাে বিশাল একটা জিনিস
আকাশ পথে সাঁ সাঁ করে উড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে থেকে হালকা সবুজ তীব্র দুটো আলাের বিন্দু
ঝিলিক মারছে।
সকালবেলা পাশের জমিতে লাঙল দিতে এসেছিল নয়ন মােড়ল।
হতভম্ব হয়ে গেল সে। ভুল দেখছে না তাে? নেঙাই ঘােষের জমির ঠিক মাঝখানে এই বিশাল বিরিক্ষি’ গাছটা এল কোথা থেকে?
এটা কি এখানে ছিল?
কিছুতেই মনে করতে পারল না।
সেই প্রথমে নেঙাই ঘােষ আর ওর বলদদুটোকে অচৈতন্য অবস্থায় জমিতে পড়ে থাকতে দেখে। মাঠের
চাষিরা নেঙাইকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে গেল। নেঙাই-এর জমিতে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা এই
গাছটাকে নিয়ে সারা গ্রামে হুলুস্থুলুস পড়ে গেল। এদিকে নেঙাইকে কিছু জিজ্ঞেস করবে
তারও উপায় নেই। প্রবল জ্বরে সারাদিন সে ভুল বকছে। সারা দেহটা তার হলুদবর্ণ হয়ে গেছে।
‘এ তাে আমার বেশ ভাল ঠেকছে না। আমার ছেলেটারও ঠিক
এই রকম হয়েছিল। কোনও রকমে তাকে বাঁচাতে পারলাম না।' লক্ষণ দেখে বার বার মাথা নাড়তে লাগলেন সৃষ্টিধর
অধিকারী মশাই। বিকালবেলা নেঙাইকে দেখতে এসেছিলেন তিনিও। সন্ধ্যার অন্ধকার তখন সবে ঘনিয়ে
এসেছে। গরু চড়িয়ে গােপথ ধরে ফিরছিল কয়েকজন রাখাল। গাঁয়ে ঢুকে ষষ্ঠীতলার পাশ দিয়ে
যেতে গিয়ে তারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ষষ্ঠীতলায় বসে রয়েছে জরাজীর্ণ থুত্থুরে
এক বুড়ি। কালাে কুচকুচে সারাদেহের চামড়া কোঁচকানাে। মাথার চুল সাদা শনের নুড়ি। ঠোটের
ওপর গোঁফের মতো দু চারটে সাদা সাদা চুল। সবচেয়ে অদ্ভুত তার ঘন সাদা ভ্রুর নীচে চোখদুটো।
হালকা সবুজ রঙের চোখের তারাদুটোতে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি। আড়াই হাত মতাে লম্বা একটা সাদা
হাড়ের লাঠি পাশে নামিয়ে রেখে সে কেমন জবুথবু হয়ে বসে রয়েছে।
‘এ বুড়ি তাের কোথায় বাড়ি? কোথায় যাবি? ভাত খাবি?' ছেলেদের নানান প্রশ্নের উত্তরে সে একটা কথাও বলল
না। কেবল অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই গাঁয়ের আরও সবাই দেখতে এল
বুড়িকে। অন্ধকারে বুড়ির সবুজ চোখদুটো তখন শিয়ালের চোখের মতাে জ্বলছে। বুড়ি এতই
অথর্ব যে নড়েচড়ে বসবার ক্ষমতাও নেই। পাশে পড়ে থাকা সাদা হাড়ের লাঠিটা অন্ধকারেও
চকচক করছে। একজন দয়া করে কলাপাতায় দুটো ভাতও দিয়ে গেল তাকে। কিন্তু কিছুই খেল না
বুড়ি।
সেরাত্রেই মারা গেল নেঙাই ঘােষ। ষষ্ঠীতলার পাশ
দিয়ে গায়ের লােকেরা নেঙাইয়ের মৃতদেহটা নিয়ে যাচ্ছিল ভােরবেলা। তারা অবাক হয়ে লক্ষ্য
করল সন্ধ্যাবেলার সেই বুড়িটা ষষ্ঠীতলায় নেই। আশ্চর্য হয়ে গেল সবাই। বুড়ি এত অথর্ব
যে চলতেও পারে না। সে গ্রামে এলই বা কী করে আর গেলই বা কোথায়? কেবল কলাপাতায় দেওয়া ভাতগুলাে তেমনিই পড়ে আছে
সেখানে।
পর পর কয়েকটা ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে উঠল গ্রামের লােকজন।
সেদিন বিকালবেলাতেই। অধিকারী মশাই মণ্ডপ তলায় হাজির হলেন। দেখলেন ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন
জটলা করছে সেখানে।
‘হ্যাঁ হে ছিষ্টিধর, তুমি তো দেশ দুনিয়া ঘােরা লােক, অনেক কিছুই জান। তা এ গাছটার কী ব্যাপার বল দেখি।
এ রকম ছিষ্টিছাড়া ব্যাপার তাে আমি আগে দেখি নি।' অধিকারী মশাইকে জিজ্ঞেস করলেন না তারিণীখুড়ো। 'নেঙাইয়ের জমিতে রাতারাতি এই গাছটা এলোই বা কোত্থেকে?
তাছাড়া নেঙাইয়ের মিত্যুটাও
সাধারণ লয়। আবার দেখ একই দিনে ষষ্ঠীতলার সেই বুড়িটা - এসব তাে ভালো ঠেকছে না বাপু।
'হুঁ-উ-উ-উ।' গভীর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গম্ভীর হয়ে গেলেন
অধিকারী মশাই। নাড়ু মােড়ল কী যেন বলতে যাচ্ছি সেও থেমে গেল পরিবেশ বুঝে। কিছুক্ষণ
চুপ করে থেকে অধিকারী মশাই মুখ খুললেন, ‘কামরপ কামাক্ষ্যার দুর্গম মন্দির থেকে আরও উচুতে নীল পর্বতের গুহায় এখনও অনেক
সিদ্ধপুরুষ আছেন। অনেক গুপ্ত বিদ্যা তারা জানেন। তাঁদেরকে সন্তুষ্ট করে কেউ কেউ ডাকিনী
এবং পিশাচ মন্ত্রে সিদ্ধ হয়। গভীর রাত্রে তারা যে কোনও গাছে চেপে মন্ত্র দ্বারা সেই
গাছকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আকাশপথে যাওয়ার সময় সেই গাছ যদি কারও দৃষ্টির মধ্যে
পড়ে, তবে সেখানেই সে মাটিতে নেমে
পড়ে। এই ডাকিনীরা দৃষ্টি দিয়ে মানুষের রক্ত শােষণ করে নেয়।
‘কিন্তু ওই বুড়িটা?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়াে।
‘আমার মনে হয় ওই ডাকিনীই কামরূপ থেকে চালিয়ে নিয়ে
এসেছে গাছটা। বললেন অধিকারী মশাই।
‘আচ্ছা অধিকারীমশাই, বুড়িটার ওই হাড়ের লাঠিটা দেখেছেন? অতবড়াে হাড় কোন জন্তুর হয়?
‘ওটা বনমানুষের হাড়। জগন সরকারের প্রশ্নের উত্তরে
বলতে শুরু করলেন সৃষ্টিধর অধিকারী। হিমালয়ের অনেক উঁচুতে যেখানে কেবল বরফের রাজ্য,
সেখানে মানুষ যেতে পারে না।
সেখানে বাস করে একরকম বনমানুষ। তারা সাত আট হাত উঁচু। সারা গা তাদের সাদা লােমে ঢাকা
থাকায় বরফের রঙের সাথে মিশে থাকে। অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে এরা মসৃণ বরফের ওপর দিয়ে
চলাফেরা করে। এই বনমানুষদের বলে ইয়েতি। ওদের পায়ের হাড় প্রায় আড়াই তিন হাত লম্বা।
এই হাড় থেকে ডাকিনীরা তৈরি করে যাদুলাঠি।
সাঁঝের আঁধার ঘন হয়ে আসতে সেদিনের জটলাটা ভেঙে
গেল। যে যার বাড়ির দিকে চলে গেল। সকলের মনেই সৃষ্টি হয়েছে একটা গভীর আতঙ্ক। অধিকারী
মশাইও উঠে পড়লেন।তার ত্রিসন্ধ্যা করার সময় অতিক্রম হয়ে যাবে, তাই। ঘাের তান্ত্রিক তিনি, তবে প্রথম জীবনে ছিলেন পরম বৈষ্ণব। কৃষ্ণযাত্রার
দল ছিল তার। সেই দল নিয়ে তিনি দেশদেশান্তরে যাত্রাগান করে বেড়াতেন। কেষ্টযাত্রা দলের
অধিকারী ছিলেন বলেই তাকে এখনও সকলে অধিকারীমশাই বলে ডাকে।
* * *
সে প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা। কেষ্টযাত্রার
দলটিকে নিয়ে অধিকারী মশাই পোঁছলেন আসামের কামরূপ জেলার একটা গ্রামে। সন্ধ্যা হতেই
গাঁয়ের ঠিক মধ্যিখানে পেট্রোম্যাক্স হ্যাজাকের আলােয় যাত্রার আসর ঝলমল করে উঠল। পালা
হচ্ছিল নৌকাবিলাস। গৌরচন্দ্রিকা শেষ হতেই জমে উঠল যাত্রাগান। অধিকারী পুত্র মদনের সুরেলা
কণ্ঠস্বর মাতিয়ে দিল সকলকে। শ্রীকৃষ্ণের রূপ, অভিনয় আর গানে মাতােয়ারা হয়ে গেল শ্রোতারা।
সব সখিকে পার করিতে
নেব আনা আনা।
শ্রী রাধিকা পার করিতে
নেব কানের সােনা।
মাত্র পনেরাে বছর বয়সী মদনের সুরেলা কন্ঠে বাংলা
কীর্তনের মধুর রসে আপ্লুত হয়ে গেল শ্রোতারা--
...রাধাকৃষ্ণের মিলন
হল, বদন ভরে হরি বল।
মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতারা টের পেল না কখন শেষ হয়ে
গেল যাত্রাগান। বহুক্ষণ পর তাদের হুঁশ হল। হুড়মুড় করে তারা এগিয়ে এল শ্রীকৃষ্ণকে
একবার স্পর্শ করার জন্য। উপহার আর প্রণামী পড়তে লাগল চারদিক থেকে বৃষ্টিধারার মতাে।
অধিকারী মশাই দেখলেন সাজঘরে দরজায় দাঁড়িয়ে এক বুড়ি। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে সে মদনের
দিকে তাকিয়ে আছে। একটা পােড়াে বাড়িতে যাত্রাদলের থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিল। শেষ রাত্রে
ক্লান্তিতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, কী একটা বিশ্রী দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে গিয়ে চিৎকার করে উঠল মদন। তারপরই এল তার
প্রবল জ্বর। সারা দেহ রক্তশূন্য হয়ে হলুদ হয়ে গেল।
মদনের মৃত্যুর পর আর বাড়ি ফেরেন নি অধিকারী মশাই।
যাত্রাগানের দলটিকে ছেড়ে তিনি যাত্রা করলেন কামরূপ কামাক্ষ্যার দুর্গম মন্দিরের উদ্দেশে।
একান্ন পীঠের এক পীঠস্থান এই কামাক্ষ্যা দেবীর মন্দির। কিন্তু সেখানেও শান্তি মেলে
নি তার। মন্দিরের পুরােহিতের কাছে খবর পেয়ে যাত্রা শুরু করলেন হিমালয়ের আরও দুর্গম
অঞ্চলে বৃংহতি বাবার উদ্দেশে। পাঁচ বছর ধরে বাবার অক্লান্ত সেবা করে তন্ত্রসাধনায়
দীক্ষিত হলেন তিনি। বৃংহতি বাবার হাতির মতো কণ্ঠস্বর এখনও তার কানে বাজে, ‘বাবা এই গুপ্তবিদ্যা কেবল মানুষের কল্যাণেই প্রয়ােগ
করবি। বিভিন্ন দেশ ঘুরে প্রায় দশ বছর বাদে নিজের দেশে ফিরেছিলন অধিকারী মশাই। কিন্তু
গুপ্তবিদ্যার চর্চা তিনি ত্যাগ করেছিলেন। কেবল তন্ত্র সাধনাটা নিয়মিত করতেন।
* * *
নেঙাই ঘােষের মৃত্যুর পর মাসখানেক কেটে গেছে। গ্রামের
লােকের আতঙ্কটা একটু কমে এসেছে। শাওনের রাত্রে সেদিন প্রবল বৃষ্টিটা থামতেই আর ঘরে
থাকতে পারল না নয়ন মােড়ল। মাছ ধরার প্রবল নেশার চোটে গভীর রাত্রেই পােলােটা নিয়ে
বেড়িয়ে পড়ল। কালাে মেঘে আকাশ ঢাকা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে তখনও। ঘাের অন্ধকারে চারদিকে ব্যাঙের ডাক। গ্রাম থেকে
বেরিয়ে বড়াে নালাটা পার হল সে। বরুণপুকুরের উঁচু পাড়টাতে উঠতেই গ্রামের পুবদিকে
চালানে গাছটার দিকে নজর পড়ল তার। ঘন কালাে গাছটার ভেতর থেকে হালকা সবুজ রঙের তীব্র
দুটো আলাের ঝিলিক দেখতে পেল সে। তীক্ষ্ম শাঁখের মতাে একটা খনখনে আওয়াজ ভেসে এল। ভয়ে
বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল তার। ঠাণ্ডা একটা প্রবল হাওয়ার ঝাপটা লাগল তার গায়ে। অচৈতন্য
হয়ে লুটিয়ে। পড়ল সে কাদার উপর। অভিশাপ নেমে এল অঙ্গিরাপুর গ্রামে। আতঙ্কিত হয়ে
উঠল সারা গ্রামের লােকজন। গ্রামের পূর্বদিকে সেই চালানে গাছটার চারদিক ভয়ঙ্কর স্থান
হয়ে উঠল। নেঙাই ঘােষের মৃত্যুর দিন থেকে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে গাছটা। নেঙাই ঘােষের
জমিটা জঙ্গল হয়ে উঠল। দিনের বেলাতেও গাছটার ত্রিসীমানায় যাওয়া বন্ধ করল লােকজন।কৃষ্ণ
পক্ষের রাতগুলােতে ঘাের অন্ধকারে শােনা যেতে লাগল শাঁখের মতাে খনখনে আর তীব্র সেই শব্দ।
পরের মাসে হরি ঘোষের জোয়ান ছেলেটা মারা পড়ল একই
ভাবে। অমাবস্যার রাত্রে ভাদর মাসের প্রচণ্ড গরমের জন্য বাইরের দাওয়ায় শুয়েছিল সে।
মাঝ রাতে ঘুমের ঘােরে আঁতকে উঠে কম্প দিয়ে জ্বর এল তার। সারা দেহ হলুদ হয়ে গেল।
* * *
মণ্ডপতলায় আড্ডাটা সন্ধ্যার পর আর জমে না। সন্ধ্যা
হতেই গ্রামের লােক যে যার ঘরে ঢুকে যায়। নেহাৎ দরকার না হলে কেউ বাইরে বেরােয় না।
সেদিন বিকালবেলা তারিণীখুড়াে মণ্ডপতলায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন এর মধ্যেই বেশ কয়েকজন
এসে গেছে।
'হাঁ হে হিষ্টিধর চারদিকে ছিষ্টি যে নাশ হতে লেগেছে।তুমি
এর একটা বিহিত করতে পারবে না?' বললেন তারিণীখুড়ে।
'তাই তাে গাে খুড়াে, এখন ভাবছি কেন যে গুপ্তবিদ্যার চর্চাটা ছেড়ে দিলাম।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন অধিকারী মশাই।
‘কিন্তু তুমি ছাড়া গ্রামে আর কে আছে বল,
যে গ্রামটাকে রক্ষা করবে।
আস্তে আস্তে গােটা গ্রামটাই শ্মশান হয়ে যাবে যে।
‘কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করেছাে খুড়াে,
নেঙাই ঘােষ থেকে আরম্ভ করে
যতগুলাে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা কেবলমাত্র অমাবস্যার রাত্রেই। কেবল অমাবস্যার রাত্রেই এই
গুপ্তবিদ্যা জাগ্রত হয়।'
'তাহলে সামনের অমাবস্যাতেই তুমি একটা বিহিত কর ছিষ্টিধর।'
'কী হবে জানি না, তবে আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। কিন্তু বনমানুষের
হাড় আনার জন্য আমাকে একটা সাহসী ছেলে দিতে হবে।
‘সে তাে শুনেছি হিমালয় পর্বতে যেতে হবে।'
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন তারিনীখুড়াে।
‘না, সে উপায়ও আছে। বলতে শুরু
করলেন অধিকারী মশাই – 'প্রথমে একটা শকুনের
বাসা খুঁজে বের করতে হবে। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শকুনের বাসা থেকে ডিম পেড়ে এনে
সেদ্ধ করতে হবে। তারপর সেই সেদ্ধ করা ডিম পুনরায় তুলে দিয়ে আসতে হবে শকুনের বাসায়।
শকুন যখন বুঝতে পারবে তার ডিম নষ্ট হয়ে গেছে, তখন সে-ই হিমালয় থেকে যােগাড় করে আনবে বনমানুষের
হাড়। সেই হাড় ডিমে স্পর্শ করালেই ডিমফুটে আবার বাচ্চা হবে। কিন্তু তার ঠিক দিন সাতেক
পর অমাবস্যার রাতে শকুনের বাসা থেকে পেড়ে আনতে হবে সেই বনমানুষের হাড়। কাজটা বড়ই
কঠিন। বুড়াে বয়সে আমি তাে গাছে চড়তে পারবাে না। তাই বলছি একটা সাহসী ছেলে চাই আমার
সঙ্গে।'
'গ্রামের এই ঘাের দুর্দিনে সকলের অনুরােধ উপেক্ষা
করতে পারলেন না অধিকারী মশাই। তাছাড়া এতদিন পর তার পুত্রের অকালমৃত্যুর শােকটাও চাগার
দিয়ে উঠল, জেগে উঠল একটা প্রতিশােধ
স্পৃহা। গভীর রাত্রে তিনি বহুদিনের অনঅভ্যস্ত হৃদিকুম্ভক যােগ অভ্যাস করতে শুরু করলেন।
শুরু করলেন অন্যান্য গুপ্তবিদ্যার চর্চা। তাছাড়া তার নিয়মিত তন্ত্রসাধনা তাে আছেই।
* * *
বীরভূম জেলার নানুর থানার অঙ্গিরাপুর গ্রামের উত্তর
পশ্চিমে ভুরিশ্রবা ঋষির আশ্রম। পাশেই একটা খালের মতাে ছােটো নদী বয়ে চলেছে। এই নদীর
ধারেই রয়েছে একটি প্রস্রবণ কুণ্ড। কুণ্ড থেকে স্বচ্ছ শীতল জলের ধারা অবিরত ভুরভুর
করে বের হয়ে নদীতে পড়ছে। ক্ষীণকায়া এই নদীটির ধারেই আশপাশের সাতখানা গ্রামের শ্মশান।
চলতি নাম ভুরভুরে ডাঙ্গা।
গ্রাম থেকে বেরিয়ে প্রায় ক্রোশখানেক রাস্তা হেঁটে
সেই মহাশ্মশানে উপস্থিত হলেন অধিকারী মশাই। সঙ্গে নাডু মােড়লের ছেলে বিরিঞ্চি। মাত্র
বাইশ বছরের জোয়ান ছেলে সে। ঠিক মধ্য রাত্রে অস্ত গেল কালপুরুষ। কৃষ্ণা অষ্টমীর ঘাের
অন্ধকার তখন গ্রাস করেছে সেই মহাশ্মশানকে। চারদিকের ঝােপে ঝাড়ে জোনাকির ঝিকিমিকি অন্ধকারকে
আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। মানুষের খুলি আর আধপােড়া হাড় ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে। খেজুর
গাছের ঝােপে শেয়ালের চোখ জ্বলছে ধ্বক্ ধ্বক করে। ওপাশে ভুরিশ্রবা ঋষির আশ্রমের ঘনজঙ্গল।
সেখানে থাকেন ত্রিকালজ্ঞ বাবা। লােকালয়ের সাথে কোনও সম্পর্ক রাখেন না তিনি। কোথা থেকে
ভেসে আসছে কচি ছেলের কান্না। ঠিক যেন কোনও কচি ছেলে ককিয়ে ককিয়ে কাঁদছে। আতঙ্কিত
বিরিঞ্চি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, 'ওটা কিসের শব্দ?’
‘ভয় নেই ওটা শকুনের ছানার
কান্না’, বললেন অধিকারী মশাই।
হঠাৎ কান্না থেমে গিয়ে তীক্ষ্ণ বাঁশির মতাে একটা আওয়াজ ভেসে এল। চমকে উঠল বিরিঞ্চি।
ভয় নেই মড়ার খুলির মধ্যে বয়ে যাওয়া হাওয়া ঢুকে এরকম অদ্ভুত বাঁশির মতাে আওয়াজ
বের হচ্ছে’ বললেন অধিকারী মশাই। ভয়ঙ্কর মহাশ্মশান যেন রাত্রির ঘাের অন্ধকারে জেগে
উঠেছে সর্বনাশা ক্ষুধা নিয়ে। বিরিঞ্চিকে সঙ্গে নিয়ে অতি সাবধানে এই বিপদ সঙ্কুল জায়গায়
একটা বিশাল উঁচু তালগাছের নীচে হাজির হলেন অধিকারী মশাই। কয়েকদিন ধরে বহুসন্ধানের
পর খোঁজ পাওয়া গেছে এই গাছটার উপর শকুনের বাসায় ডিম আছে। শকুনরা সাধারণত লােকালয়
থেকে দূরে বহু উঁচু গাছের উপর বাসা তৈরি করে।
'খুব সাবধানে উঠবি বাবা বিরিঞ্চি, সুযােগ। পেলেই শকুনে ঠুকরে চোখ তুলে নেবে। তাছাড়া
গােখরাে সাপও থাকতে পারে তালগাছের খাঁজে। সাবধান করে দিলেন অধিকারী মশাই। ঘন অন্ধকারে
বাঁদরের মতাে তালগাছে উঠে গেল বিরিঞ্চি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিঠে ঝােলানাে, একটা বাঁশের তৈরি ঝাঁপির মধ্যে ডিমগুলাে - পেড়ে
নিয়ে নামল সে। শুকনাে কাঠকুটো কুড়িয়ে আগুন জ্বালালেন অধিকারী মশাই। শ্মশানে পড়ে
থাকা একটা মাটির হাঁড়ি কুড়িয়ে এনে তার মধ্যে ডিমগুলাে রেখে তিনি সেদ্ধ করলেন। এদিকে
শকুনের ডানা ঝাপটায় আর কর্কশ চিৎকারে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল সেই শ্মশানভূমি। তার মধ্যেই
অতি সাবধানে আবার গাছে উঠে ডিমগুলাে বাসায় রেখে আসল বিরিঞ্চি। তারপর বিরিঞ্চিকে সঙ্গে
নিয়ে ফেরার পথ ধরলেন অধিকারী মশাই। কৃষ্ণা অষ্টমীর চাঁদ তখন পূর্ব আকাশে রঙ ধরিয়েছে।
এখন সামনের অমাবস্যা পর্যন্ত সাতটা দিনের অপেক্ষা।
আবার একটা অমাবস্যা এগিয়ে আসছে, কার ঘাড়ে যে কোপ পড়বে কে জানে। গ্রামের লােক সশঙ্কিত
হয়ে উঠল। সন্ধ্যার পর পারতাে পক্ষে বাড়ি থেকে আর কেউ বের হয় না। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে
মাঠের মাঝে সেই চালানে গাছটার চারদিক ঝােপঝাড় গজিয়ে বন হয়ে উঠেছে। গ্রামের লােকে
অলক্ষুণে গাছটাকে বলে শাঁকোবা ডাকিনীর গাছ। দিনের বেলাতেও গাছটার ধারে কাছে কেউ এগোয়
না। আর রাতের বেলায় মাঝে মাঝে শােনা যায়। শাঁখের মতাে তীক্ষ অথচ খনখনে সেই ভয়ানক
ডাক। ঘরের মধ্যে থেকেও সেই শব্দ শুনে গাঁয়ের লোকের গায়ের রক্ত হিম হয়ে যায়। গাঁয়ের
গরু বাছুরগুলোও শাঁকোবা ডাকিনীর গাছটার দিকে চরতে যায় না। কোনও এক অজ্ঞাত বুদ্ধি বলে
ওরাও হয়ত কোনও বিপদের আঁচ পায় গাছতলাটার দিকে। পরিত্যক্ত জায়গাটা তাই একটা জীবন্ত
বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াল গােটা গ্রামের কাছে।
অঘটনটা ঘটে গেল অধিকারী মশাইয়ের সামনেই। অসহায়ের
মতো নীরব সাক্ষী হয়ে রইলেন তিনি। অমাবস্যার দিন মধ্যরাত্রি নাগাদ বিরিঞ্চিকে সঙ্গে
নিয়ে ভুরিশ্রবা ঋষির আশ্রম থেকে ফিরছিলেন তিনি। সেই তালগাছে উঠে শকুনের বাসা থেকে
বিরিঞ্চি পেড়ে এনেছিল একখণ্ড বনমানুষের হাড়। অতি সাবধানে বিরিঞ্চিকে সর্বদা স্পর্শ
করে হাঁটছিলেন তিনি। তাছাড়া বনমানুষের হাড়টাও বিরিঞ্চির হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যাতে
কোনও বিপদ তাকে স্পর্শ করতে না পারে। নিজে তিনি মহাতান্ত্রিক, তাঁর টিকিটাও ছোবার স্পর্ধা রাখে না কোনও অশুভ শক্তি,
তা সে যতবড় গুপ্তবিদ্যার
সাধক হােক না কেন। কিন্তু গ্রামে ঢুকবার ঠিক আগে একটা বাঁধের উপর থেকে হঠাৎ পা পিছলে
পড়ে গেল বিরিঞ্চি। সঙ্গে সঙ্গে তার হাত থেকে ছিটকে গেল বনমানুষের হাড়টা। অধিকারী
মশাই তাকে পুনরায় স্পর্শ করার আগেই হাড়হিম করা দমকা একটা বাতাসের ঝাপটা বয়ে গেল
বিরিঞ্চির উপর দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে রক্তজলকরা তীব্র তীক্ষ্ণ সেই শাঁখের ডাক। বিরিঞ্চিকে
টেনে তুললেন অধিকারী মশাই। সে তখন থর থর করে কাঁপছে। বহুকষ্টে তাকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন
অধিকারী মশাই।
সকাল হওয়ার আগেই নাড়ু মােড়লের বাড়ি থেকে কান্নার
রােল উঠল। বিরিঞ্চি মারা গেছে। সারা দেহ তার রক্তশূন্য হয়ে হলুদ হয়ে গেছে। মৃত পুত্র
মদনের নামে প্রতিজ্ঞা করলেন অধিকারী মশাই -- সামনের অমাবস্যার দিন যেমন করেই হােক ওই
ডাকিনীকে ধ্বংস করবেন তিনি।
মহা উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে গ্রামের মানুষ আরও একটা মাস কাটাতে লাগল আগামী অমাবস্যার অপেক্ষায়।
* * *
অমাবস্যার আগের দিন গ্রামের ঈশান কোণে বিশাল বেলগাছটার
নীচে মাটি দিয়ে একটা বেদী নির্মাণ করালেন অধিকারীমশাই। অমাবস্যার দিন সন্ধ্যাবেলা
ত্রিসন্ধ্যা সেরে তন্ত্রমতে গৃহদেবতার পূজায় বসলেন তিনি। বড়াে জাগ্রত এই দক্ষিণা
কালী তার পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত। গ্রামের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে বহু প্রাচীন একটি
শিব মন্দিরের পাশেই তাঁর এই কালীমন্দির। ঘাের কৃষ্ণবর্ণের এই বামা কালিকাদেবী। দেবীর
বাম পা-টি মহাদেবের বুকের উপর অবস্থিত। কুলদেবতার পূজা সেরে কারণবারি দ্বারা ধৌত করলেন
বনমানুষের হাড়টিকে। বিশুদ্ধ তন্ত্রমতে মন্ত্রপূত করে তাকে জাগ্রত করলেন। তারপর গভীর
ভাবে ডুবে গেলেন তন্ত্রসাধনায় যােগবলে নিজের দেহমধ্যস্থ কুলকুণ্ডলিনীকে জাগ্রত করলেন
তিনি। পদ্মাসনে বসে চোখ বুজে ধীরে ধীরে দেহের সমস্ত শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করলেন কপালের
ঠিক মধ্যিখানে। আস্তে আস্তে তিনি অনুভব করলেন দুই ভ্রুর মাঝে একটু ওপরে একটা আলােক
বিন্দু উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। দেহমধ্যস্থ কুলকুণ্ডলিনী সম্পূর্ণ জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে
সেই আলােকবিন্দু আরও উজ্জ্বল হয়ে ছােট্ট একটা অগ্নিগােলকের রূপ ধারণ করল।সমস্ত দেহে
ফুটে উঠল স্বেদবিন্দু। আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন অধিকারী মশাই। তিনি অনুভব করলেন বহুদিনের
অনভ্যাসেও তার গুপ্তবিদ্যার মন্ত্রশক্তি কিছুমাত্র বিনষ্ট হয়নি। মধ্যরাত্রে তিনি বেরিয়ে
পড়লেন কালীমন্দির থেকে।
গভীর অমাবস্যার রাত্রি। সারা গ্রামটা মৃত্যুপুরীর
মতাে নিস্তব্ধ। পথে একটা কুকুরও নেই। নক্ষত্রের আলােয় প্রত্যেকটা ঝােপঝাড় প্রেতের
মতো দাঁড়িয়ে আছে। জোনাকির ঝিকিমিকি আলােয় সেগুলােকে আরও ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। গ্রামের
ঠিক মাঝে নাককাটি নামে বিশাল এক সরােবর। বহুকাল পূর্বে এই সরােবরের তীরেই ছিল ঋষি অঙ্গিরার
তপােবন। এই ঋষি অঙ্গিরা হলেন সপ্তর্ষিমণ্ডলের সাত ঋষির একজন। সেই সরােবরের তীরে উপস্থিত
হয়ে একে একে খুলে ফেললেন সমস্ত পরিধেয় বস্ত্র। উলঙ্গ হয়ে ভক্তিভরে সেই প্রাচীন নাককাটি
সরােবরে অবগাহন করলেন। তারপর গ্রাম ছাড়িয়ে গ্রামের ঈশান কোণে বিশাল সেই বেলগাছটার
নীচে উপস্থিত হলেন। সেখান থেকে চালানে গাছটার দিকে একবার দৃষ্টিপাত করলেন। দক্ষিণ দিকে
ঘাের অন্ধকারে আবছা একটা বিশাল দৈত্যের মতাে দাঁড়িয়ে আছে গাছটা। তার মধ্যে থেকে শিয়ালের
চোখের মতাে জ্বলছে দুটো হালকা সবুজ তীব্র আলােকবিন্দু।
বেলগাছটার নীচে বেদীটার উপর উঠলেন অধিকারী মশাই।
কালপেঁচার তীক্ষ্ণ স্বর খান খান করে দিল রাত্রির নিস্তব্ধতাকে। দূরে শেয়ালের সমবেত
কণ্ঠ রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরের শেষ ঘােষণা করল। সঙ্গে সঙ্গে অধিকারী মশাই বুঝে গেলেন
এটাই হল অমাবস্যা রাত্রির ঠিক মধ্যযাম, তন্ত্রসাধনার সর্বোৎকৃষ্ট সময়। সম্পূর্ণ উলঙ্গ অধিকারী মশাই বেদীর উপর শবাসনে
শুয়ে পড়লেন। মাথার নীচে রাখলেন বনমানুষের সেই হাড়টা। শুরু করলেন গুপ্তবিদ্যার সুকঠিন
হৃদিকুম্ভক যােগ। ধীরে ধীরে তার দেহমধ্যস্থ মূলাধারে কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত হয়ে উঠল।
মেরুদণ্ডের ভেতর অবস্থিত ছটি চক্রকে একে একে ভেদ করল কুলকুণ্ডলিনী। ষটচক্র ভেদ করে
এই কুলকুণ্ডলিনী মিলিত হল মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থিত সহস্রার সাথে। সঙ্গে সঙ্গে দুই
ভ্রুর মাঝে দেহমধ্যস্থ সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল। সেখানে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে
লাগল এক আলােক বিন্দু। ধীরে ধীরে সেই আলােক বিন্দু জাজ্বল্যমান হয়ে এক অগ্নিগােলকের
রূপ ধারণ করল। দেহমধ্যস্থ আত্মা এই অগ্নি গােলকের রূপ ধরে কপালের মাঝখান থেকে বেরিয়ে
এসে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হল। প্রবল শক্তিশালী সেই আলােক পিণ্ড অধিকারী মশাইয়ের নিষ্প্রাণ
দেহের উপর ভাসতে লাগল তারপর সেই উজ্জ্বল অগ্নিগােলক বেলগাছটাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে
সহসা তীব্রবেগে ধেয়ে গেল চালানে গাছটার দিকে। অধিকারী মশাইয়ের পঞ্চভূতে গড়া দেহটা
শবসনে শুয়ে রইল বেলগাছের নীচে বেদীটার ওপর অরক্ষিত অবস্থায়।
সমূহ বিপদ বুঝে মুহুর্তের মধ্যে চালানে গাছটার
আশ্রয় ত্যাগ করল শাঁকোবা ডাকিনী। আত্মগােপন করে উপস্থিত হল বেলগাছের নীচে সেই বেদীটার
কাছে। দুর্গন্ধময় কাঁচা বিষ্ঠা তুলে ছড়িয়ে দিল অধিকারী মশাইয়ের অরক্ষিত দেহটার
সর্বাঙ্গে। তারপর তীক্ষ্ণ অট্টহাস্যে খান খান করে দিল রাত্রির নৈঃশব্দ্যকে। ঘন অন্ধকারে
আত্মগােপন করল সেই ভয়ঙ্কর পিশাচিনী। মহাশক্তিশালী তীব্র অগ্নিগােলকের রূপ ধরে অধিকারী
মশাইয়ের আত্মা এদিকে আঁতি পাতি করে খুঁজতে শুরু করল চারদিক। কিন্তু দুরাত্মা ডাকিনীর
কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না কোথাও। চূড়ান্ত বিপদ বুঝে এ তল্লাট ছেড়ে কোথাও আত্মগােপন
করেছে সে।
এই লুকোচুরি খেলায় অবশেষে ভোর হয়ে গেল। অধিকারী
মশাইয়ের মহা শক্তিশালী আত্মা বিমর্ষ হয়ে ফিরে আসল বেলগাছটার নীচে। কিন্তু একি! দুর্গন্ধময়
মলদ্বারা অপবিত্র হয়ে গেছে তার নিষ্প্রাণ দেহটা, অপবিত্র দেহের মধ্যে এই পবিত্র আত্মা প্রবেশ করে
কী করে? অসহায়ের মতো সেই আত্মা দেহের
চারদিকে ঘুরতে লাগল। দেহকে অরক্ষিত রেখে যাওয়াটাই ঝোঁকের মাথায় যে কতবড় ভুল হয়ে
গেছে সেটা এতক্ষণে বুঝতে পারলেন অধিকারী মশাই। তিনি আরও বুঝলেন সেই মুহূর্তে তার মন
সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ ছিল না। ডাকিনীকে হত্যা করার পিছনে তার সামাজিক মঙ্গলাকাঙক্ষাই কেবল
কাজ করে নি। ভিতরে ভিতরে জাগ্রত ছিল তার পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধস্পৃহা। কিন্তু এখন
কিংকর্তব্য? অঙ্গিরাঋষির স্মৃতি
বিজড়িত পবিত্র নাককাটি সরােবরের জল দ্বারা যদি তাঁর দেহটাকে কেউ ধুয়ে দেয় তবেই তিনি
দেহে আবার প্রবেশ করতে পারবেন। আত্মা প্রবেশ করলেই জাগ্রত হয়ে উঠবে তার নিষ্প্রাণ
দেহ। গ্রামবাসীর আসার অপেক্ষায় অধিকারী মশাইয়ের নিরালম্ব দেহবিচ্ছিন্ন আত্মা বেলগাছের
চারদিকে ঘুরতে লাগল।
সকালবেলা গােটা গ্রামের লােক স্তম্ভিত হয়ে গেল। অধিকারী মশাইয়ের প্রাণহীন দেহটা পড়ে আছে বেলতলার বেদীর উপর। সারা গায়ে দুর্গন্ধময় বিষ্ঠামাখা। বুদ্ধিভ্রষ্ট আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা চরম ভুল করে বসলাে। তারা। অধিকারী মশাইয়ের প্রাণহীন দেহটা তুলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে সৎকার করে ফেলল। অসহায় ভাবে অধিকারী মশাইয়ের দেহহীন আত্মা অলক্ষ্যে থেকে সমস্ত কিছু দেখল। আসলে দেহবিচ্ছিন্ন আত্মা দেহধারী সাধারণ মানুষের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারে না। মহা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল সারা গ্রামে। ঘাের দুর্দিন ঘনিয়ে এল। সশঙ্কিত হয়ে উঠল গ্রামের লােকজন। গ্রামের মঙ্গলের জন্য প্রাণ দিলেন অধিকারী মশাই। ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করল। প্রতি রাত্রে প্রেতপুরী হয়ে উঠতে লাগল অঙ্গিরাপুর গ্রাম। এখন কী হবে উপায়? কী ভাবে গ্রামকে বাঁচানাে যাবে এই রাক্ষসীর করাল গ্রাস থেকে? সমস্ত গ্রামটা কী মহাশ্মশানে পরিণত হবে?
* * *
নাড়ু মােড়লের ডাকে গ্রামের সব মানুষ হাজির হল
মণ্ডপতলায়। কী ভাবে এই ডাকিনীর হাত থেকে গ্রামকে বাঁচানাে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে নীরব হয়ে রইল সবাই। কোনও সদুত্তর
নেই। কেবল তারিণীখুড়াে বললেন, ‘সমস্ত গ্রামের মানুষ
মিলে চল ভুরিশ্রবা ঋষির আশ্রমে। সেখানে সাধনা করেন ত্রিকালজ্ঞ বাবা। সকলে মিলে তাঁকে
রাজি করাতে পারলে একমাত্র তিনিই পারবেন এই ডাকিনীকে ধ্বংস করতে। তাই চল সবাই ভুরভুরে
ডাঙ্গা।'
তারিণীখুড়াের কথামতাে গােটা গ্রামের মানুষ হাজির
হল ত্রিকালজ্ঞ বাবার আশ্রমে। বহুকাল পূর্বে ঋষি ভুরিশ্রবা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এই আশ্রমে।
আশ্রমের পাশেই আশপাশের সাতখানা গ্রামের মহাশ্মশান। দিনের বেলাতেও ভয়ঙ্কর স্থান এই
আশ্রম। আশ্রমের পাশে পবিত্র প্রস্রবণটির জল মাথায় নিয়ে গ্রামবাসীরা পবিত্র হয়ে ঢুকল
ত্রিকালজ্ঞ বাবার বনকুঞ্জে।
ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছােট্ট একটি কুটিরে ত্রিকালজ্ঞ
বাবা, থাকেন বহুদিন ধরে। লােকালয়
বা কোনও মানুষের সাথে তিনি যােগাযােগ রাখেন না।
সমস্ত ঘটনা নীরবে শুনলেন ত্রিকালজ্ঞ বাবা। তারপরে
গভীর ধ্যানে ডুবে গেলেন তিনি। ধ্যানযােগে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান তিনি একসাথে দেখতে পান।
তাই তার নাম ত্রিকালজ্ঞ বাবা। ধ্যান শেষ করে ধীরে ধীরে তিনি চোখ খুললেন। তাঁর গুরুগম্ভীর
কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়ে উঠল, চরম ভুল করেছিস তােরা
অধিকারী মশাইয়ের দেহটা সৎকার করে। মারা যান নি তিনি। হৃদিকুম্ভক যােগে আত্মাকে দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন মাত্র। তাঁর অপবিত্র নিষ্প্রাণ দেহটাকে নাককাটির জল দিয়ে
ধুয়ে দিলেই আত্মাটা দেহমধ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পেত। সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে উঠতেন তিনি।
‘কিন্তু বাবা, এখন একমাত্র আপনিই আমাদের বাঁচাতে পারেন।'
বললেন তারিণীখুড়াে।
‘শােন বেটা, বহুকালের সাধনায় আমি পার্থিব জগতের মঙ্গল অমঙ্গল
থেকে বহুদূরে সরে গেছি। আমার সাধনায় অর্জিত শক্তি এই ডাকিনী ধ্বংস করার মতাে তুচ্ছ
কাজে অপব্যয় করতে চাই না। তােরা অন্য কোনও উপায় দেখ গে যা।” এই বলে ত্রিকালজ্ঞ বাবা
গ্রামবাসীদেরকে তাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু নাছােড়বান্দা গ্রামবাসীরা বহুকষ্টে
হত্যে দিয়ে পড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ত্রিকালজ্ঞ বাবার সম্মতি আদায় করল। তিনি গ্রামবাসীদেরকে
কতকগুলাে মন্ত্রপূত সরষে দিয়ে বললেন, ‘আজই এই সরষেগুলাে চালানে গাছটার চারপাশে গণ্ডির মতো ছড়িয়ে দিয়ে আসবি। সামনের
অমাবস্যার আগেই এই সরষেগুলাে থেকে গাছ বের হয়ে চালানে গাছটার চারদিকে একটা গণ্ডি তৈরি
করবে। ডাকিনী ওই গণ্ডি কখনই পার হতে পারবে না। সামনের অমাবস্যায় তন্ত্রমতে কালীপূজা
করে আমি ডাকিনীকে ধ্বংস করবাে। এখন তােরা বাড়ি যা নিশ্চিন্তে।'
কিন্তু নিশ্চিন্ত হবার মতাে মানসিক অবস্থা গ্রামের
কারও নেই। ঘাের শঙ্কার মধ্য দিয়ে আবার একটা মাস কাটতে লাগল তাদের। গ্রামে তাদের প্রত্যেকটা
রাত্রি নামে মহাশ্মশানের মতাে। স্বপ্নের ঘোরের মতাে তাদের দিনটা কখন কেটে যায় তারা
বুঝতে পারেনা। দিন গুনতে থাকে তারা সামনের আষাঢ় মাসের অমাবস্যার অপেক্ষায়। গত বছর
এই আষাঢ়ের অমাবস্যাতেই নেঙাই ঘােষ প্রথম মারা পড়ে ডাকিনীর করাল গ্রাসে। আবার এগিয়ে
আসছে সেই অমাবস্যা প্রকৃতির অমােঘ নিয়মে। কী হবে কে জানে? এই রাক্ষসী ডাকিনীকে কি ধ্বংস করতে পারবেন ত্রিকালজ্ঞ
বাবা? নাকি অধিকারী মশাইয়ের মতাে
তিনিও ডাকিনীর করাল গ্রাসে প্রাণ দেবেন? এই শঙ্কায় আকুল হয়ে উঠল গ্রামবাসী।
সমস্ত উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এক বছর বাদে
আবার ঘনিয়ে এল সেই আষাঢ় মাসের অমাবস্যার দিন। ত্রিকালজ্ঞবাবার নির্দেশমতাে সেদিন
সকাল থেকেই গ্রামবাসীরা তাঁর আশ্রমে কালীপূজার সমস্ত আয়ােজন করে দিয়ে আসল। আশ্রমে
আটচালা তৈরি করে সেখানে সাঁজো কালীমূর্তি তৈরি করে দিল তারা। সাঁজো কালীমূর্তি মানে
অমাব্যসার দিন সকাল থেকেই তৈরি শুরু করে সেদিনই মূর্তি সম্পূর্ণ করে ঘাের কৃষ্ণবর্ণে
দেবীকে রঞ্জিত করতে হবে। সব আয়ােজন শেষ করে সন্ধ্যার বহুপূর্বেই গ্রামবাসীরা গ্রামে
ফিরে এল।
নির্জন ভুরিশ্রবা ঋষির আশ্রমে ঘনিয়ে আসতে লাগল
সন্ধ্যার অন্ধকার। বর্ষার ঘন দুর্যোগ নিয়ে আসল সঙ্গে করে। কালাে মেঘে। ঢেকে গেল চারদিক।
শুরু হল অবিরাম বর্ষণের ধারা। সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠতে লাগল আশ্রমের পাশের মহাশ্মশান।
ঘনকালাে ভয়ংকর শ্মশানকালীর মূর্তির সামনে বসলেন
ত্রিকালজ্ঞবাবা। একটি মাত্র ঘিয়ের প্রদীপ জ্বলছে মূর্তির সামনে। তার সামান্য আলােয়
আরও ভয়ঙ্করী লাগছে শ্মশানকালীর মূর্তিকে। বিশুদ্ধ তান্ত্রিক মতে কালীমূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা
করলেন ত্রিকালজ্ঞবাবা। সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে উঠল সেই কালীমূর্তি। চকচক করতে লাগল
তার লােলজিহ্বা। প্রদীপের আলােয় হাতের খাঁড়া ঝক্ঝক্ করে উঠল। নৈবেদ্য হিসেবে মাকে
কেবলমাত্র কারণবারি নিবেদন করলেন ত্রিকালজ্ঞবাবা। তারপর শুরু হল যজ্ঞকুণ্ডে মহাযজ্ঞ।
জ্বলে উঠল হােমের লেলিহান আগুন। সেই আগুনের আলাের আশপাশের গাছগাছালির ছায়াগুলাে জীবন্ত
প্রেতের মতাে নাচতে লাগল। চারদিকে। জনমানবশূন্য মহাশ্মশান অতি ভয়ঙ্কর স্থান হয়ে উঠল।
যজ্ঞ শেষ করে পূর্ণাহুতি দিলেন ত্রিকালজ্ঞবাবা। তারপর শুরু হল বলিদান পর্ব।
জাগ্রত মাতৃমূর্তির হাত থেকে খাঁড়াটা তিনি খুলে
নিলেন। প্রথমেই বলিদান করলেন বায়স অর্থাৎ কাক। দ্বিতীয় বলি দিলেন গৃধ্র অর্থাৎ শকুন।
তৃতীয় বলি হল সারমেয় অর্থাৎ কুকুর। চতুর্থ বলিদান হল শিবা অর্থাৎ শিয়াল। চার চারটে
বলিদানে উজ্জ্বল হয়ে উঠল শ্মশান কালীর মুখ। জ্বলজ্বল করতে লাগল চোখ দুটো। লাল টকটকে
লােলজিভ থেকে ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে লাগল তাজা উষ্ণ রক্ত। মুহুর্তে ধ্বক করে জ্বলে
উঠল ত্রিকালজ্ঞ বাবার কোটরাগত চোখদুটো। নিমেষ মধ্যে এক কোপে জাগ্রত কালীমূর্তির মুণ্ডটা
কেটে ফেললেন তিনি। এটাই হল ছিন্নমস্তার মুণ্ড। বিসর্জন না দেওয়া জাগ্রত শ্মশানকালীর
ছিন্নমুণ্ড।
যজ্ঞের পর যজ্ঞকুণ্ড নিভিয়ে ফেললেন ত্রিকালজ্ঞবাবা।
যজ্ঞকুণ্ডের ঠিক মাঝে স্থাপন করলেন সেই ছিন্নমস্তার মুণ্ড। তারপর একে একে যজ্ঞকুণ্ডের
ঈশান কোণে বায়স, অগ্নিকোণে গৃধ্র,
নৈর্ঋত কোণে সারমেয় এবং বায়ুকোণে
শিবার মুণ্ড স্থাপন করলেন। মাটি দিয়ে যজ্ঞকুণ্ড পূর্ণ করে তার উপর নির্মাণ করলেন মাটির
বেদী। এটাই হল সদ্যনির্মিত পঞ্চমুণ্ডের আসন। মহাশক্তিশালী এই পঞ্চমুণ্ডের আসন। একমাত্র
সিদ্ধপুরুষ ছাড়া এই আসনের উপর কেউ বসতে পারে না।
বেদীর চারদিকে মন্ত্রপূত কারণবারি ছিটিয়ে দিলেন
ত্রিকালজ্ঞবাবা। তারপর মন্ত্রপূত করে জাগ্রত করলেন পঞ্চমুণ্ডের আসনকে। পূর্বমুখে পদ্মাসনে
বসলেন সেই আসনের উপর। তারপরে যােগবলে আহ্বান করলেন পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রকে।
আষাঢ় মাসের অমাবস্যার রাত্রি। চারদিকে ঘাের দুর্যোগ
আর ঘন ঘন বিদ্যুতের চমক। কালাে মেঘে ঢাকা আকাশে একটিও নক্ষত্র নেই। কিন্তু ত্রিকালজ্ঞ
বাবার আহ্বানে অন্ধকারময় আকাশের পূর্বকোণে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠল পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্র।
ঘনকালাে আকাশের বুক চিরে তীর বেগে নেমে আসতে লাগল একটা উল্কাপিণ্ড। পৃথিবীর দিকে এগােতে
এগােতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে লাগল উল্কাপিণ্ডটা।
চালানে গাছটার চারদিকে মন্ত্রপূত সরষেগুলাে থেকে
ততদিনে প্রায় আধহাত লম্বা লম্বা গাছ বের হয়ে একটা গণ্ডি তৈরি করেছে। গাছ থেকে নেমে
শাঁকোবা ডাকিনী সেই গণ্ডির মধ্যে তীব্র বেগে ঘুরে বেড়াতে লাগল। কোনও প্রকারেই পার
হতে পারল না গণ্ডিটা। আকাশের কোণ থেকে উজ্জ্বল উল্কাপিণ্ডটা তখন বিপুল বেগে ধেয়ে আসছে
চালানে গাছটার দিকে। কোনও নিস্তার নেই দুরাত্মা ডাকিনীর। তার শাঁখের মতাে তীব্র খনখনে
কণ্ঠস্বরে খান খান হয়ে ভেঙে পড়তে লাগল ভয়াল রাত্রির
নৈঃশব্দ্য। উল্কাপিণ্ডটা
ততক্ষণে বিরাট আগুনের গােলার রূপ ধারণ করে সশব্দে পড়ল গণ্ডিদ্বারা
বন্দিনী ডাকিনীর উপর।
শাঁকোবা ডাকিনীর মরণান্তিক আর্তনাদে গ্রামের ঘুমন্ত মানুষ সহসা চমকে জেগে উঠল।
পরের দিন সকালবেলা গ্রামের লোক অবাক হয়ে দেখল
চালানে গাছটার নীচে পড়ে আছে সেই জরাজীর্ণ বুড়িটা। নেঙাই ঘােষের মৃত্যুর দিন যাকে
সন্ধ্যাবেলা দেখা গেছিল ষষ্ঠীতলায় এক বছর আগে। তবে অঙ্গিরাপুর গ্রামের পূর্বপ্রান্তে
সেই অদ্ভুত চালানে গাছটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে একটা মূর্তিমান বিভীষিকার সাক্ষী হিসেবে।
গ্রামের লােক কেউ ওই অদ্ভুত গাছটার নাম জানে না।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment