...দিলীপ কুমার দাস
পাশের বাড়ির
মেয়েটা মারা গেল ।ছাদ থেকে বলল
ছেলেটা । আমার স্ত্রীকে ডেকে ।
" বউদি , রঞ্জনা এইমাত্র চলে গেল । আপনি কথাবলে যাওয়ার পরেই
। " স্ত্রী বলল ।
নিচে এসে আমাকে। " এ কেমন যাওয়া।স্বার্থপরের মতন
। এই তো কী সুন্দর গল্প করল ।মাধব চা করে আনল
। তিনজন চা খেলাম । বলললকডাউনের জন্য
প্রপার ডায়াগোনেসিসটা হতে বড় দেরি হয়ে গেল । "
আমি বললাম," শেষ পর্যন্ত
ক্যান্সার ধরা পড়েছিল?"
"হ্যাঁ "।
মেয়েটি নিজে ছিল
নার্সিং স্টাফ । সম্ভাব্য পরিণতি আগেই বুঝেছিল ।ওর স্বামীও
ফার্মাসিস্ট । একই হাসপাতালের ।কর্মসূত্রেই
পরিচয়। প্রণয়।পরিণয়। একমাত্র সন্তান ।কন্যার জন্ম । কত আনন্দ করে
প্রথম বাড়িটা করেছিল । একবেসরকারি পার্কে
। পরে আবার কী মনে হল। চলেএল এই সরকারি
সেক্টরে ।দেখেছি তখন ।
দুজন প্রায়ই আসত মিস্ত্রিদের কাজ দেখতে। বসত। চা
খেত ।শুনেছিলাম তখনই ওদেরমেয়েটি
ব্যাঙ্গালুরুয় পড়ছে ।বলেছিল ওরা
মেয়েটির নাকি এদিকে আসার এক -
দমই ইচ্ছে নেই ।বলেছিলাম ," তবে আর এত বড়
বাড়ি করছ কেন?"
ছেলেটি
বলেছিল ," বলুন সেটা আপনার বোনকে।"মেয়েটি আমাদের
দাদা-বউদি বলত । তাই এই অনু-যোগ ।মেয়েটি বলত , " করে রেখে যাচ্ছি
। যে থাকবে সেভাগ করবে ।
"" একা একা ।"
" আমার তো একা থাকতে ভালোই লাগে ।"পরে বলত , " ছোটবেলায় সারাটা
দিন তো একাই
থাকতাম । বাবা
ডেইলি-প্যাসেঞ্জারি করত । ট্রেন ধরত পাঁচটা দশে ।
"
"অত ভোরে ? "
" হ্যাঁ । "
"আর তোমার মা । "
"মাকেও স্কুলে যেতে হত । অনেক দূরে ।"
মেয়েটি
বলেছিল ," দাদা জানেন , আমার মা - বাবা চার মাস আগে পরে
রিটায়ার করেছে।কিন্তু তদ্দিনেআমি নার্সিং পাশ
করে চাকরিটা পেয়ে গেছি । এই হাসপাতালে ।
"
" ভালোই তো - "
" না , বাবা-মা ওটা চায়নি । ওরা চেয়েছিল ওদের কাছাকাছি থাকি।
বলেছিল তাই - তুই খুব স্বার্থপর।"
" কেন ?"
" বলেছিল
- কোথায় এখন আমাদের সঙ্গে থাকবি। একটু দেখবি
আমাদের। তা না ,অত দূরে
যাচ্ছিস ।"
যাচ্ছিস ।"
" ঠিকই বলেছিল ।"
এরপর ও বলেছিল ।
ছেলেটিকে দেখিয়ে । " একে যখন আবার বিয়ে
করলাম । তখনও বলেছিল- তুই
খুব স্বার্থপর ।
"পরে এই কথাটাই
সেও একদিন বলল তার মেয়েকে
কথাপ্রসঙ্গে ।
" অত দূরে ব্যাঙ্গালুরুয় চাকরির কী
দরকার । এখনও তো
আমাদের দুজনের কতদিন
চাকরি আছে ।
"ওর প্রশ্ন
ছিল ," তাহলে পড়ালে কেন ?
"
" সবাই পড়ায় । তাই পড়ালাম।"
" সবাই কিন্তু এত ভাল চাকরি পায় না । আমি পেয়েছি
।"
এই মা-ই বলেছিল
সেদিন মেয়েকে তার ," তুই খুব স্বার্থপর ।
নিজের কথাটাই শুধু ভাবছিস । আমাদের
যে এখানে দেখার
থাকল না কেউ । সেটা ভাবছিস না ।"মেয়েটি মার
মৃত্যুর খবর পেল ঐদিন সকাল নটারপরে । লকডাউনের
সমস্যায় । ফ্লাইটের টিকিট পেল
না সঙ্গে সঙ্গে।যেটা পেল।সেও রাত সাড়ে সাতটায়।
মাধব বাধ্য হয়ে
স্ত্রীর দেহটা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখল ।
মেয়েটি যখন
দুর্গাপুরে ঘরে ঢুকল , রাত তখন ফুরিয়ে আসছে ।
সকালে হাসপাতাল
থেকে শববাহী গাড়িতে মার দেহ
যখন এল , মেয়েটি চিৎকার
করে উঠল , " মা , তুমি
আমায় কত বকতে ।
আমি নাকি স্বার্থপর । তাই অত দূরে চলে গেছি । এখন তুমি কি করলে ? "
এরপর বাবাকে
জড়িয়ে ধরে ও মাথা ঠুকছে তখনগাড়িটায়। আর বলছে
," এই মানুষটার কথা
ভাবলে
না একবার ।
মানুষটাকে এখন কে দেখবে ? "
তারপর
দাদু-দিদিমাকে ধরে চিৎকার ," মা , তুমি তো আমার থেকেও স্বার্থপর।এই বুড়ো-বুড়ির
কথাটাও ভাবলে না একবার ।
"
দুর্গাপুর
dilipkumardas.dgp@gmail.com
No comments:
Post a Comment