1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, August 1, 2020

স্বার্থপর

                                                                                             ...দিলীপ কুমার দাস


               পাশের বাড়ির মেয়েটা মারা গেল ।ছাদ থেকে বলল ছেলেটা । আমার স্ত্রীকে ডেকে ।
" বউদি , রঞ্জনা এইমাত্র চলে গেল । আপনি কথাবলে যাওয়ার পরেই । " স্ত্রী বলল । নিচে এসে আমাকে। " এ কেমন যাওয়া।স্বার্থপরের মতন ।  এই তো কী সুন্দর গল্প করল ।মাধব চা করে আনল । তিনজন চা খেলাম । বলললকডাউনের জন্য প্রপার ডায়াগোনেসিসটা হতে বড় দেরি হয়ে গেল । "
আমি বললাম," শেষ পর্যন্ত ক্যান্সার ধরা পড়েছিল?"
"হ্যাঁ "।
মেয়েটি নিজে ছিল নার্সিং স্টাফ । সম্ভাব্য পরিণতি আগেই বুঝেছিল ।ওর স্বামীও ফার্মাসিস্ট । একই হাসপাতালের ।কর্মসূত্রেই পরিচয়। প্রণয়।পরিণয়। একমাত্র সন্তান ।কন্যার জন্ম । কত আনন্দ করে প্রথম বাড়িটা করেছিল । একবেসরকারি পার্কে । পরে আবার কী মনে হল। চলেএল এই সরকারি সেক্টরে ।দেখেছি তখন । দুজন প্রায়ই আসত মিস্ত্রিদের কাজ দেখতে। বসত। চা খেত ।শুনেছিলাম তখনই ওদেরমেয়েটি ব্যাঙ্গালুরুয় পড়ছে ।বলেছিল ওরা মেয়েটির নাকি এদিকে আসার এক -
দমই ইচ্ছে নেই ।বলেছিলাম ," তবে আর এত বড় বাড়ি করছ কেন?"
ছেলেটি বলেছিল  ," বলুন সেটা আপনার বোনকে।"মেয়েটি আমাদের দাদা-বউদি বলত । তাই এই অনু-যোগ ।মেয়েটি বলত , " করে রেখে যাচ্ছি । যে থাকবে সেভাগ করবে । "" একা একা ।"
" আমার তো একা থাকতে ভালোই লাগে ।"পরে বলত , " ছোটবেলায় সারাটা দিন তো একাই
থাকতাম । বাবা ডেইলি-প্যাসেঞ্জারি করত । ট্রেন ধরত পাঁচটা দশে । "
"অত ভোরে ? "
" হ্যাঁ । "
"আর তোমার মা । "
"মাকেও স্কুলে যেতে হত । অনেক দূরে ।"
মেয়েটি বলেছিল  ," দাদা জানেন , আমার মা - বাবা চার মাস আগে পরে রিটায়ার করেছে।কিন্তু তদ্দিনেআমি নার্সিং পাশ করে চাকরিটা পেয়ে গেছি । এই হাসপাতালে । "
" ভালোই তো - "
" না , বাবা-মা ওটা চায়নি । ওরা চেয়েছিল ওদের কাছাকাছি থাকি। বলেছিল তাই - তুই খুব স্বার্থপর।"
" কেন ?"
" বলেছিল  - কোথায় এখন আমাদের সঙ্গে থাকবি। একটু দেখবি আমাদের। তা না ,অত দূরে 
যাচ্ছিস ।"
" ঠিকই বলেছিল ।"
এরপর ও বলেছিল । ছেলেটিকে দেখিয়ে । " একে যখন আবার বিয়ে করলাম । তখনও বলেছিল- তুই
খুব স্বার্থপর । "পরে এই কথাটাই সেও একদিন বলল তার মেয়েকে
কথাপ্রসঙ্গে । " অত দূরে ব্যাঙ্গালুরুয় চাকরির কী
দরকার । এখনও তো আমাদের দুজনের কতদিন
চাকরি আছে । "ওর প্রশ্ন ছিল  ," তাহলে পড়ালে কেন ? "
" সবাই পড়ায় । তাই পড়ালাম।"
" সবাই কিন্তু এত ভাল চাকরি পায় না । আমি পেয়েছি ।"
এই মা-ই বলেছিল সেদিন মেয়েকে তার  ," তুই খুব স্বার্থপর । নিজের কথাটাই শুধু ভাবছিস । আমাদের
যে এখানে দেখার থাকল না কেউ । সেটা ভাবছিস না ।"মেয়েটি মার মৃত্যুর খবর পেল ঐদিন সকাল নটারপরে । লকডাউনের সমস্যায় । ফ্লাইটের টিকিট পেল
না সঙ্গে  সঙ্গে।যেটা পেল।সেও রাত সাড়ে সাতটায়।
মাধব বাধ্য হয়ে স্ত্রীর দেহটা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখল ।
মেয়েটি যখন দুর্গাপুরে ঘরে ঢুকল , রাত তখন ফুরিয়ে আসছে ।
সকালে হাসপাতাল থেকে শববাহী গাড়িতে মার দেহ
যখন এল , মেয়েটি চিৎকার করে উঠল , " মা , তুমি
আমায় কত বকতে । আমি নাকি স্বার্থপর । তাই অত দূরে চলে গেছি । এখন তুমি কি করলে ? "
এরপর বাবাকে জড়িয়ে ধরে ও মাথা ঠুকছে তখনগাড়িটায়। আর বলছে ," এই মানুষটার কথা ভাবলে
না একবার । মানুষটাকে এখন কে দেখবে ? "
তারপর দাদু-দিদিমাকে ধরে চিৎকার ," মা , তুমি তো আমার থেকেও স্বার্থপর।এই বুড়ো-বুড়ির কথাটাও  ভাবলে না একবার । "
দুর্গাপুর
dilipkumardas.dgp@gmail.com

No comments:

Post a Comment