...প্রদীপ মন্ডল
একটানা অনবরত তিনদিন
বৃষ্টির পর আজ
একটু দিনটা ফাঁকা
করেছে।হালকা মধুর বাতাস
বইছে । উঠন
পারে একঝাঁক ময়না
শালিক কাকের দলের
কোলাহলে চারিদিক মুখরিত
হয়ে উঠেছে।এমত সময়
বিমল প্রতিদিন উঠনে
খাবার ছড়িয়ে কলেজ
যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়,
সেই খাবারগুলোই তারা
খুঁটে খুঁটে খায়।
বিমল শৈশব থেকেই
পরিশ্রমী । এখন
সে সেকেন্ড ইয়ারে
বাংলা বিভাগে পড়াশোনা
করে। হাইয়ার সেকেন্ডারীতে
পড়াকালীন পরিবারের সমস্ত
দায়িত্ব তার উপর
অর্পণ করে পিতা
হরি দত্ত ইহলোক
ত্যাগ করেন। তখন
থেকেই বিমল দুইবেলা
টিউশনি করে পরিবার
আর তার পড়াশোনা
বজায় রেখে চলে।
গরীব ঘরে জন্ম
নিলেও তার শখ
ষোলো আনায় বজায়
রাখে সে।
আজ কলেজে ' নবীন
বরন' অনুষ্ঠান। রবীন্দ্র
সঙ্গীত , নজরুল গীতি,
নৃত্য ,কবিতা আবৃত্তি
প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হওয়ার
পর বেলা একটার
নাগাদ কলিকাতার বিখ্যাত
' ভোজ হরি ব্যান্ড
পার্টি' র অনুষ্ঠান
আরম্ভ হবে। তাছাড়া
বহুদিন ধরে মানস
চিত্রপটে সংকল্প করে
রেখেছে যে আজ
সে সুশীলার সম্মুখে
প্রেম প্রস্তাব উপস্থাপন
করবে, সেই কল্পনায়
নিমজ্জিত সারাক্ষণ। তাই
বিমল ভীষণ উত্তেজিত
, সকাল সকাল কাজ-কম্ম সেরে কলেজে
যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে
এমন সময় তার
মা বলে উঠে-
''বিমল আজ সকাল
সকাল কোথায় বেরোচ্ছিস?
রান্না চাপিয়েছি খেয়ে
যাবি।"
"কলেজ মা"
"আজ
কলেজে নবীন বরন
অনুষ্ঠান হবে, দুপুরে
ক্যানটিনে খেয়ে নেব,
তুমি আমার জন্য
চাল দিও না
।"
'কিন্তু এখন কি
তুই না খেয়ে
বেরোবি?'
"আমি
দোকানে রুটি তরকা
কিনে খেয়ে নেব।"(এই বলে পুলকিত
মন নিয়ে কলেজ
পানে রওনা হল
)
বিমল আজ সবার
আগে কলেজে উপস্থিত,
তখন বাজে সাড়ে
ন'টা, কেউ
আসেনি তখনও, অনুষ্ঠান
শুরু হবে সাড়ে
দশটা থেকে । বিমল ঘন ঘন
ঘড়ি দেখে আর
কলেজের গেটে চেয়ে
থাকে। কলেজে প্রায়
সকলেই উপস্থিত কিন্তু
সুশীলা তখনও আসেনি।
বিমল সুশীলাকে দুবছর
ধরে পছন্দ করে
এবং মনে মনে
ভালোবেসেও ফেলেছে । কিন্তু কোনোদিনই তাকে
মুখোমুখি বলতে পারেনি
যে সে তাকে
ভালোবাসে। দু-একজন
বন্ধু জানে বিমলের
মনের কথা, কিন্তু
সে নিষেধ করাই
তারাও সুশীলার নিকট
মুখ খুলেনি। বিমল
কতবার চিঠি লিখেছে
কতবার ছিঁড়ে ফেলেছে
তা অগণনীয় , এমন
কি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা
নিয়ে ফোনও করেছে
,তবুও সে মনের
কথা বলতে পারেনি।
আজ সে কঠোর
প্রতিজ্ঞা করেই তবে
কলেজে এসেছে , কিন্তু
সুশীলার আসতে দেরি
দেখে সে তার
বান্ধবী গীতাকে জিজ্ঞাসা
করে-"কী ব্যাপার
রে গীতা, সুশীলা
কী কলেজ আসবে
না?"
"আজ সুশীলার সঙ্গে
আমার কনট্যাক্ট হয়নি,
তাই বলতে পারছি
না আসবে কি
আসবে না!"
বিমল আরো দু-একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে
তারা বলে যে-"তারা সুশীলার কথা
জানে না।"
নবীন ছাত্রদের বরন
করে নিয়ে রবীন্দ্র
সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান
শুরু হয়। বিমলের
আর কিছুতেই ভালো
লাগে না, তবুও
সুশীলার পথ চেয়ে
আছে। সে আনমনা
মন নিয়ে কখনো
কলেজের মাঠে কখনো
বা কলেজ ক্যান্টিনে
আড্ডা দেয়, সে
অনুষ্ঠানে কিছুতেই মন
স্থির করতে পারেনা।
অবশেষে সুশীলা আর
আসবে না জেনে
বিষন্ন মাখা বদন
নিয়ে গৃহাভিমুখে যাত্রা
শুরু করে।
বিমল বাড়িতে এসে
সোঁফার উপর হতাশ
হয়ে ধপ করে
বসে পড়ে। অনেক্ষণ
সে শূণ্য দৃষ্টিতে
দেয়ালের দিকে চেয়ে
থাকে।
"কি ব্যাপার রে
এসে বসে পড়লি?
হাত মুখ ধুয়ে
কাপড় বদলে খেতে
আয়।"
" তুমি যাও আজ
আমার খিদে নেই।"
"খিদে
নেই মানে, এ আবার কি ধরনের
কথা রে তোর?
প্রতিদিন খেতে না
পেলে তো বাড়ি
মাথায় করে রাখিস।"
"আজ শরীরটা ভালো
নেই।"
"ঠিক
আছে আমি তোকে
আর জড়াজড়ি করছি
না, তোর খিদে
পেলে বেড়ে খেয়ে
নিস।"
বিমল ডাইরী বাড়
করে পুরোনো লেখাগুলো
নজরদারি করে আর
মনে মনে ভাবতে
থাকে-"হয়তো কোনোদিন
সুশীলাকে আমি আমার
মনের কথা বলতে
পারবো না।" এলোমেলো
ভাবনা-চিন্তা করতে
করতে রাত বেড়ে
চলে, তবুও তার
চোখে ঘুম নেই।
বিমল আজ প্রথম
নেশা করবে বলে
কলেজ থেকে ফেরার
পথে বিদেশি মদ
আর সিগারেট কিনে
নিয়ে এসেছে । ঘন ঘন সিগারেট
ধরিয়ে নেয়, তারপর
কাঁচের গ্লাসে মদ,
প্যাকের পর প্যাক
মেরে মুখ কাচুমাচু
করে, তার কষ্ট
হলেও সে আজ
মদ খায়! একমাত্র
শিয়ালের শব্দ ব্যতীত
কোনো প্রাণীর সাড়া
নেই। সহসায় পাশের
ঘরে মোবাইলেে রিংটন
বেজে উঠে ।
"এত রাত্রে
আবার কার ফোন
!"
বিমল টলতে টলতে
পাশের ঘরে যায়
এবং শুনতে পায়
গীতার গলার আওয়াজ।
গদগদ স্বরে-"আজ
সকালে সুশীলাদের বাড়িতে
আগুন লেগেছিল, সবকিছু
পুড়ে ছারখার হয়ে
গেছে । সুশীলা
তাড়াহুড়ো করে রান্না
করছিল কলেজ যাওয়ার
জন্য , এমন সময়
কিভাবে গ্যাস লিক
হয়ে যায় তাও
সে জানতো না।তার
সারা শরীরে আগুন
ধরে এবং পুরো
শরীরে কালো কালো
বড় বড় ফস্কা
পড়ে ! পড়ে তাকে
গৌরীপুরে পাবলিক হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়েছে।এখন
সুশীলা জীবন মরণের
সাথে লড়াই করছে,
বোধহয় বাঁচবে নারে
! "
বিমল বোবার
মতো কানে ফোন
ধরে থাকে, কোনো
কথায় তার মুখ
দিয়ে বেড়িয়ে আসে
না। তার নেশা
ভেঙে যায়, সে
রাতের অন্ধকারে পাগলের
মতো আমবাগানের মধ্য
দিয়ে প্রাণপনে ছুটতে
শুরু করল গৌরীপুর
পাবলিক হাসপাতালের দিকে।
prodipmandal425@gmail.com
মালদা
No comments:
Post a Comment