1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

সেই মুহূর্তে

 

ছবি : ইন্টারনেট

                                                                        ড: করণ দেবদ্যুতি

- ভাইয়া, থোড়া রুখো। দেখো উধার... কই আদমি রোডকে উপর গির গ্যায়া!

শামসুর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল রাজিয়া ভুল বলেনি। রাস্তার উপর একটা মানুষ নড়ছে। পাশে পড়ে আছে বাইকটা। হয়তো ওই ব্যক্তিরই।

- হাঁ; শায়দ কিসিকো অ্যাকসিডেন্ট হুয়া!

এরকম শুনশান রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট হওয়া খুব বিপদজনক। মানুষটা এভাবে কতক্ষণ পড়ে আছে তার ঠিক নেই। এখুনি এর চিকিৎসা প্রয়োজন। এভাবে সারারাত পড়ে থাকলে বেঘোরে মারা পড়বে। এই এলাকায় হাসপাতাল নেই। নেশান্যাল হাইওয়ের উপর অখ্যাত একটা জায়গা।  

ওরা মানুষটাকে আরও একটু ভালো করে বোঝার জন্য কাছাকাছি যায়। মাঝে মাঝে তার মুখ থেকে কিছু আর্ত ধ্বনি বের হয়ে আসছে। হেলমেট পরিহিত লোকটার পোশাক ভদ্র ও মার্জিত। হুজুগে বা গুন্ডা প্রকৃতির বলে মনে হয় না। ওরা ভালো করে দেখার জন্য মোবাইলের টর্চ জ্বাললো। হেলমেটে ঢাকা আংশিক মুখটা দেখে মনে হয় নিতান্ত ভদ্রলোক। বাঙালি বলেই মনে হয়। ওরা দীর্ঘকাল ধরে বাংলার বাসিন্দা হলেও হিন্দিভাষী মুসলিম। যদিও বাংলা ভালই বলতে পারে।

ওরা নিজেদের মধ্যে কিছুসময় কথা বলে ঠিক করল ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আজ রাতের মত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করবে। এই সিদ্ধান্তে শামসুরের চেয়ে রাজিয়ার জোরই ছিল বেশি। এই মানুষটিকে দেখে তার যে শুধু ভদ্রলোক বলে মনে হয়েছে তাই নয়। তার চেয়েও আরও কিছু বেশি। সে ব্যাপারে যথা সময়ে যদি তার মনে হয় অন্যকে জানাবে এখন শামসুরকেও কিছু বলল না। শুধু জোর দিয়েই বলল, এরকম একটা মানুষকে রাস্তায় তারা মরতে দিলে আল্লাহ তাদের কখনও কবুল করবে না। শামসুর রহমান ধার্মিক মানুষ; আল্লাহের প্রসঙ্গ তোলায় দ্বিরুক্তি করল না। বোনের কোথায় নিস্বব্দে মাথা নাড়ল।

ওরা লোকটার হেলমেট খুলে মুখে জল দিল। তার নাম জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সে আর্তনাদ মিশিয়ে কি উত্তর দিল বোঝা গেল না। শামসুর ব্যবসায়ী মানুষ, এই অঞ্চলের পুলিশদের সাথে পরিচিতি আছে। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ফোন করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে দুজনে তাকে ধরাধরি করে লোকটাকে গাড়িতে তুলল। লোকটা রাজিয়ার জলের বোতলের দিকে হাত দেখাল। ও তার মুখে কয়েক চুমুক জল ঢেলে দিল। জল খাবার পর লোকটা গা এলিয়ে দিল ব্যাক সিটে। রাজিয়া সামনে দাদার কাছে না বসে পেছনে আহত ব্যক্তিটির কাছে বসল। এই অবস্থায় ওর কাছে থাকা বেশি জরুরি। 

লোকটা জল খেয়ে ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে বলল,- কো.. থায় যা..চ্ছি?

রাজিয়া উত্তর দিল,- আপনার চিকিৎসা দরকার। এখন আমাদের বাড়ি যাছি।

আহত লোকটা ওর মুখ ভালো করে নিরীক্ষণ করল। কিছু বোঝার চেষ্টা। হয়তো স্বস্তি পেল; ঘাড় এলিয়ে দিল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। অ্যাকসিডেন্ট হলে ব্যাথা উপশমের জন্য শরীর থেকে একরকম মরফিন বের হয়। সেই কারণেই হয়তো এত সহজে ঘুম এল। রাজিয়া তাকে দেখল ; ঠিকঠাক ঘুমিয়েছে তো? ও উপলদ্ধি করল এই ব্যক্তির শরীরে আর চেতনা নেই; অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ও ঝুঁকে পড়ে তাকে দেখল কিছু সময়। লোকটি সুপুরুষ, বলিষ্ঠ চেহারা। নাজিমের সাথে কিছুটা মিল। দূর থেকে দেখলে ও আবেগের বশে হয়তো নাজিম বলে ভুল করত। তফাৎ অনেক। এ লোকটি লম্বায় কিছুটা খাটো, চেহারাও আলাদা; চশমা পরে। রিমলেস চশমাটায় ফাট ধরেছে। লোকটাকে দেখে বেশ শিক্ষিত বলে মনে হয়।

ব্যবসায়ী বাড়িতে শিক্ষা না ঢুকলে অনেক সময় কাঁচা টাকার সাথে উৎশঙ্খলতা ঢোকে। তবে রাজিয়া শিক্ষিত। গ্র্যাজুয়েশনের পর আরও এগোনোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওইসময় ওর আম্মা মারা যায়। সেই মৃত্যুতে ওর মন ভেঙেছিল ; আর পড়া হয়ে ওঠেনি। নাজিমের ব্যাপারটা ওর স্কুল জীবনের সাথে জড়িত। সে ওর গৃহশিক্ষক ছিল; বিজ্ঞান পড়াত। ওর বাড়ির মেয়েদের কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়ার স্বাধীনতা ছিল না। মাধ্যমিক পর্যন্ত নাজিম ওকে বাড়ি এসে গণিত আর বিজ্ঞান দেখাত। ছাপোষা বাঙালি ঘরের মুসলিম ছেলেটির প্রতি ওর দুর্বলতা জেগেছিল সেই তখনই। পড়ার সময়টা তার সহচর্যে বেশ ভালো কাটত। পড়তে পড়তে ওর মুখের মধ্যে হারিয়ে যেত যেন। নাজিম ছোট একটা প্রাইভেট স্কুলে কাজ করত, আর দু চারটে টিউশনি। অন্যদের থেকে আলাদা করার মত কিছু যে ছিল তার মধ্যে তা নয়। তবে পড়াত বেশ ; পড়া এবং পড়ানোটাই যেন ওর নেশা। 

ভালোলাগাটা ঠিক কখন থেকে ও বুঝে উঠতে পারেনি। ছেলে মানুষি অনুভূতিটাই ওকে উন্মাদ করত। মাধ্যমিকের পর যখন ইস্কুল টিউশনি পরিবর্তন হল, কয়েকবার চিঠিও লিখেছে নাজিমকে। নাজিম কী ওর ফিলিংসগুলো বুঝত? পশ্রয় দিত! নাকি সেও ওকে ভালোবেসে ছিল! না বাসলে ওর চিঠির উত্তরে দেখা করত কেন? তবে মুখে কখনও ওকে ভালোবাসার কথা বলেনি। হয়তো তার মধ্যে বাস্তব বোধ প্রবল ছিল। এই সম্পর্কের যে কোনও পরিণতি হবেনা সে আগে থাকতেই বুঝেছিল। সেই বাস্তবই মিলেছিল ওদের জীবনে। ওদের দুজনকে একবার ওদের এক আত্মীয় দেখে ফেলে। সে খবর যায় ওর বাবার কানে। তিনি শুধু ব্যবসায়ী ছিলেন না; এখানকার পলিটিক্যাল মাথাদের সাথেও দহরম ছিল। শোনার পর তিনি ওকে ঘরে তালা দিয়ে রেখেছিলেন বেশ কিছুদিন। নাজিমকে গুন্ডা মারফৎ হুমকি দেওয়া হয়। সে এরপর কখনও ওর দিকে তাকায় নি। রাজিয়া তাকে দোষ দেয় নি, ওর বাবার প্রভাবে ওই ছাপোষা ছেলেটিকে ভিটেবাড়ি ছাড়া করতে দুদিনের বেশি লাগত না। রাজিয়া মেনে নিতে শিখেছিল। বা হয়তো নাজিমকে সুস্থ থাকতে দিতে ভুলে যেতে হয়েছিল তাকে। 

সেই প্রভাবশালী মানুষটা আজ কয়েক বছরে দুবার সেরিব্রাল অ্যাটাকে পঙ্গু হয়ে বিছানা সজ্জায়। রাজিয়া একটা স্কুলে চাকরি নিয়েছে। ওর দাদা এখন বাবার ব্যবসা দেখছে। পুরনো দুটো মানুষের ফাঁকা  জায়গাটা ওর দাদার সংসার ভরে দিয়েছে। শুধু এসবকিছুর হারিয়ে গেছে ওর জীবনের নাজিমের ক্ষুদ্র অধ্যায়টুকু।

  ***

রাজিয়া লোকটাকে আরও ভালো করে দেখে । নাজিমের সাথে এর মিল কতটুকু? অল্পই! তবুও ওকে দেখে তার নাজিমের কথা মনে পড়ল কেন? যখন মোবাইলের আলোয় ওর হেলমেটে আবদ্ধ মুখটা দেখেছিল ও নাজিম ভেবে আঁকতে উঠেছিল। মুহূর্তের জন্য হলেও সে শিহরণ এল কেন? এখনও কি সে ভালোবাসে ওকে? না না, ভালোবাসে না। সে তো দূরে সরে যেতেই চেয়েছিল। ওই ঘটনার এক বছরের মধ্যে সে বিয়ে করে। হয়তো রাজিয়ার বাবাকে পাকাপাকি ভাবে বোঝানোর জন্যই যে সে ওর পথ থেকে সরে গেছে। তবুও কিসের এত টান! নাকি এই ব্যক্তির প্রতি হঠাৎ জন্মানো পূর্বরাগ? এই কথাটি ভাবা মাত্র ওর মনে তীব্রভাবে কোনও আশঙ্কা জাগল। ও পোশাকের উপর দিয়ে আহত মানুষটির আঘাতের অনুমান করতে চাইল। আল্লাহ করুন আঘাত যেন গুরুতর না হয়, মানুষটা বেঁচে থাকে। আবার কেড়ে না নেন তিনি!

কয়েক মুহূর্ত পর লোকটি চোখ খুলল। রাজিয়াকে তার উপর ঝুঁকে থাকতে দেখে বিস্মিত হল। ও অপ্রস্তুত ভাবে চোখ সরিয়ে নিল। হয়তো সেই অপ্রস্তুত ভাবটা কাটানোর জন্যই জিজ্ঞেস করল, - নাম কী আপনার?

একটু বিশ্রাম পেয়ে লোকটি বোধ হয় চাঙ্গা হয়েছে কিছুটা। স্পষ্ট উচ্চারণে বলল,- আবির.. আবির মিত্র।

রাজিয়া সকৌতুকে হাসল। আল্লাহ নাজিমকে দিয়ে তো তার সাথে কম খেলা করেন নি। এবার আবার হিন্দু! ভাগ্যিস আব্বা আজ পঙ্গু নাহলে এই লোকটিকে বাড়িতে তোলাই মুশকিল হত। দাদাকে বলে দিতে হবে এই লোকটির পরিচয় বাড়ির অন্যদের থেকে কিছুটা গোপন রাখতে। সে আবার জিজ্ঞেস করল, - কোথায় থাকেন? 

আবির উত্তর দিল, - বউবাজারের কাছে। আমাদের পৈতৃক বাড়ি ওখানেই।

ও অবাক হল। কলকাতা থেকে এতদূরে রাতে এই লোকটা কী করছিল? কোথায় যাচ্ছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়ায় আবিরই দিল। ও পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বহরমপুরে ওদের একটা প্রজেক্টের কাজ এতদিন লক ডাউনে আটকেছিল। ইদানিং শুরু হয়েছে। সেই কাজের জন্য ওর এখন যাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কোনও গাড়ি কলকাতার বাইরে যেতে চাইছিল না। তাই শেষমেষ বাইকে রওনা দিয়েছিল। মাঝপথে এই কান্ড! 

আরও কিছু সময় ওদের মধ্যে কথা হল। রাজিয়া তার পরিচয় জানাল। আবিরের মধ্যে এতসময় যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছিল কোনও বদমায়েশ রেকেটের হাতে পড়েছে কিনা; সে আশঙ্কা গেল। রাজিয়া মেয়েটা মুসলিম হলেও শিক্ষিত এবং মার্জিত। ওর মধ্যে একটা তীক্ষ্ম ব্যক্তিত্ব আছে চোখে পড়ার মত। অসুস্থ অবস্থাতেও সে ওর সাথে কথা বলে মুগ্ধ হল।

   ***

আরও কিছুসময় গাড়িটি একটা বিশাল অট্টালিকার সামনে এসে দাড়াল। শামসুর আর রাজিয়ার দীর্ঘ সুঠাম দেহ আবিরকে তুলে আনল দোতলার একটি অতিথি কক্ষে। সেগুন আর শিশু কাঠের সুন্দর নক্সা করা দরজা আসবাবে সুসজ্জিত সমগ্র গৃহটি। বাহারি আলোয় ভরপুর। প্রাচুর্য্য যেন আগলে রেখেছে সমস্ত গ্রহকোণ। 

আবিরের সমস্ত নোংরা মোরাম লাগা পোশাক কাঁচি দিয়ে দিয়ে কেটে শামসুরের নতুন একটা কুর্তা পাজামা পরানো হয়েছে। ড: আসগর ওকে ভালো করে পরীক্ষা করলেন। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সচলতা বিচার করে জানালেন; বড় চোট আছে বলে তো মনে হয় না। পায়ের কোনও হাড় গেছে। কোমরের হাড় গেলে উনি নিজে থেকে বসতে পারতেন না; পারলেও ভীষণ কষ্ট হত। এক্সরে না হওয়া পর্যন্ত কোন হাড় ভেঙেছে তা বলা যায় না। তবে কোনও বড় হাড় নয় তাহলে হাত দিয়ে বুঝতে পারা যেত। উনি পথের মাঝে ভয়েই বেশি অসুস্থ বোধ করছিলেন। তাই হয়তো সংজ্ঞা হারাতে বসেছিলন। রাতটা বিশ্রাম পেলেই অনেকটা সেরে উঠবেন। তিনি কিছু পেন কিলার জাতীয় ওষুধ আর ব্যথার মলম এনেছিলেন। তা-ই রাতের মত দিয়ে একটা প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে গেলেন।

মানসিকভাবে সুস্থ বোধ করার পর আবির দুজনকে ফোন করল। প্রথমে মাকে; সামান্য চোটের কথা জানিয়ে কতগুলো মিথ্যে কথা বলল। যাতে তিনি দুশ্চিন্তা না করেন। দ্বিতীয় ফোনটা করল; প্রজেক্ট সাইটে। আগামীকাল সকালে এই লোকেশনে একটা গাড়ি পাঠাতে বলে। সে ওখানে পৌঁছলে বসে থেকেও কাজ অনেকখানি এগোতে পারবে। তাকে দেখলে ওয়ার্কারাও ভরসা পাবে। বাইকটা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের হেফাজতে আছে। সেটাকেও পরে সময় করে নিয়ে যাবার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আর রাজিয়া? যে মেয়েটি এত সময় ধরে তাকে নিরীক্ষণ করল তার কথা সে ভাববে না? মনে পড়তেই সে হেসে ফেলল। মেয়েটা কিন্তু বেশ! এখন কী মানুষ জাত ধর্ম নিয়ে ভাবে? অজাত বেজাতকেও কী মানুষ ভালোবাসে না? কিন্তু সে এরকম ভাবছে কেন! রাজিয়ার কাজে কীই প্রমাণ পাওয়া যায় সে তার প্রতি অনুরক্ত! দাদাকে বুঝিয়ে, তার পরিচয়টা সবার চোখের আড়ালে রেখে তাকে এবাড়িতে এনেছে ঠিকই। এতে কী ভালো লাগা প্রমাণ হয়? না সে বড় আগডুম বাগডুম ভাবছে। চিন্তা গুলো মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। 

দরজায় কেউ কড়া নাড়ে; - এই যে; আসব?

খুব ভুল না করলে রাজিয়ার গলা। ও চমকে ওঠে। এ কি টেলিপ্যাথি? ভাবতে ভাবতেই মানুষ হাজির। একটা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রাজিয়া দরজায় এসে দাড়িয়েছে। ও আড়ষ্ঠতা কাটিয়ে উঠে বলে; - হ্যাঁ, আসুন আসুন। কী মুশকিল, বাইরে দাড়িয়ে কেন?

- ভাবলাম না বলে এলে খারাপ ভাবতে পারেন। আপনারা ভেতো বাঙালি না!

দুজনেই একটু হাসল। আবির বলল; - বাঙালিদের উপর খুব রাগ দেখছি! ... কেন?

- ভেতো যে! - রাজিয়া উজ্জ্বল সাদা দাঁত গুলো বের করে আরও একটু হাসল। তারপর একটু কসরত করে বলল; - এগুলো সব খেয়ে নিন দেখি। ... তারপর আবিরের হাতে আঁচড়, ক্ষত গুলো লক্ষ্য করে বলল; - ভেতো, খাবেন কীকরে! হাত ছিঁড়ে বসে আছেন যে?

- না না, একটা চামচ দিন ঠিক খেতে পারব। ভাত খাই বলে এত দুর্বল নয়!

রাজিয়া উজ্জ্বল হাসল। বলল, - দাড়ান আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

ও আবিরের কাছে চেয়ার টেনে বসে প্রথমে গ্লাসের গরম দুধটুকু খাওয়ালো তারপর বাকি খাবার গুলো একটু একটু করে যত্নে তুলে দিতে লাগল ওর মুখে। আবির অনুরাগের দৃষ্টিতে দেখে যেতে লাগল রাজিয়ার কমনীয় লাবণ্য, সুন্দর মুখশ্রী; কোমল হাত, লম্বা নারীসুলভ আঙুল আর আভরণে আবৃত দেহ সৌষ্ঠব। তার এত সময়ের আপাত আগডুম ভাবনাগুলো কী খুব ভুল ছিল? 

প্রতিবার খাবারের সাথে রাজিয়ার হাতটা  আবিরের মুখের কাছে উঠে এসে তাকে চমকে দিচ্ছে আরও আরও করে।

  ***

পরদিন সকালে আবির আর্ম ক্রাচে ভর দিয়ে এগিয়ে এগিয়ে গেল তার প্রজেক্ট সাইট থেকে আসা গাড়ির দিকে । রাজিয়া পেছনে পেছনে গেল তাকে এগিয়ে দিতে। গাড়িতে ওঠার সময় ও রাজিয়ার দিকে উজ্জ্বল হয়ে তাকিয়ে বলল; - তাহলে গতকাল রাতের কথা মত কলকাতায় আসছেন তো?

রাজিয়া মৃদু হেসে মুখ নিচু করে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল।

গতকাল রাতে আবির ওকে কলকাতার গল্প করেছিল। কলকাতার কর্মব্যস্ততা, প্রাণচঞ্চলতা, ঘামে ভেজা আফিস টাইম, বিকেলের অফিস ফেরতা রেস্টুরেন্টের ভিড়, গিসগিসে বাড়িঘর, তাতে কাজের সন্ধানে উপচে পড়া মানুষ; আর কলকাতার পুজো! জানা জিনিস একটু নতুন করে। ওর বাড়ির সকলের কথা। ওদের বাড়ির সেই আদ্যিকালের দুগগা পুজো! 

রাজিয়া আবিরের দূরে মিলিয়ে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে ভাবল তাকে কলকাতা যেতেই হবে। ততদিন সঙ্গে থাক গতকাল রাতের ওকে কাছে পাওয়ার মুহূর্তগুলো। আল্লাহ শেষে একটা হিন্দু নাজিমকে তার কাছে এনে দিল। ভেবেও একটু লজ্জার হাসি হাসে সে।

আবির ওয়ার্ক সাইটের গাড়ির ব্যাকসটে হেলান দিয়ে বসে ভাবে সেই মুহূর্তে তার দুর্ঘটনা না ঘটলে তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকে সে বঞ্চিত হত।

drdebadyuti.karan@gmail.com
পূর্ব মেদিনীপুর



No comments:

Post a Comment