1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, January 26, 2021

আউট অফ সিলেবাস


ছবি  : ইন্টারনেট 

আউট অফ সিলেবাস
দেবেশ মজুমদার 

      দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছু দূর গিয়ে থামলেন অজয়বাবু। আমোদপুর গ্রামের তিনি এখন উদয়পল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষক। কালো ব্ল্যাকবোর্ড আর সাদা চক হাতে এলে অঙ্কের যে কোন জটিল সমস্যাই তিনি সমাধান করে ফেলেন  নিমেষেই। তার হাত ধরেই মফস্বল শহর বর্ধমানের অনেক ছেলে-মেয়েই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তখন জয়েন্ট পড়াতেন। শহরের বুকে ছাত্র দরদী স্যার বললে, অলিগলি বলত, বর্ধমান রামকৃষ্ণ সারদাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের অঙ্কের স্যার, অজয়বাবুই একমাত্র। এরপর বুকের বাইপাস সার্জারি হওয়ার পর ঘন্টার পর ঘন্টা বাস জার্নিটা একটু রিস্কের হয়ে গেল। বদলি হয়ে গেলেন, নিজের গ্রামের পাশের স্কুলেই। স্কুলটা তো যথেষ্ট দূরেই ছিল, মূল শহরের কেন্দ্র পেরিয়ে, আরো তিন কিলোমিটার। ওই স্কুলে দীর্ঘ তিরিশ বছরের চাকরি জীবনের মায়া ছেড়ে আসা বড় বেদনার ছিল। রামকৃষ্ণ সারদাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা আজকেও বারবার মনে পড়ছিল অজয়বাবুর। মাঝারি উচ্চতার খেজুর গাছে ঘেরা পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দূরের ঘন বনভূমির দিকে তাকালেন। প্রাণে সতেজ অক্সিজেন নিয়ে, আবার হাঁটতে শুরু করলেন। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল, সকালের অপমানগুলো। অনলাইন ক্লাস করাতে পারছেন না অজয়বাবু, মোবাইলের সঠিক ব্যবহার সেভাবে শেখা হয়নি। ছেলে যদিও গত রাতে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু বেমালুম ভুলে গেছেন তিনি। ছেলে বাইরে চাকরি করে, সকালে বেরিয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। ঘরে একমাত্র আছে, বিরাশি বছরের চলনে অক্ষম বিধবা মা। প্রানবন্ত কালে একটাই প্রেম এসেছিল জীবনে, মিতালী সেন। অবশ্য সে বিশ্বাস ভেঙে চলে গিয়েছিল। তারপর সুমনাকে বিয়ে। অতিসাধ্য নিরুপায় এক শরীরী সংসার যাপন। গত দু বছর আগে, সেও নিশ্চিন্ত হয়েছে, বুড়ো টার জ্বালা থেকে। 

     এখন মিতালী তিন সন্তানের মা, কলকাতাতে বিরাট বাড়ির শৌখিন রানী। নায়িকা হওয়ার শখ ছিল, শুনেছে ছেলেরই মুখে। ছোটখাটো শর্ট ফিল্মে নামডাক আছে ওনার। খোঁজখবর এখনো রাখেন অজয়বাবু। তার প্রিয় নায়িকা বলে কথা। ছেলে যে, ওর স্বামীর আন্ডারে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে এ’গ্রেড সিনিয়র সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছে। অবশ্য সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছেলেকে কিছু জানাননি।

      হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠেছেন বুঝলেন। ঢালু মোড়ামের পথ পেরিয়ে এসে, পিচের রাস্তা ধরেই উপলের বাড়ি। মোবাইল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে ওর। অতএব শিখে নিতেই এত দূর আসা। বিকেলের ক্লাসটা মিস করা যাবে না, এভাবে ছাত্র ছাত্রীরা, নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। কথা টুকু ভাবতেই মনে মনে হাসলেন। সকালে অপমানিত হয়েছেন, মোবাইল বিষয়ে দক্ষ না হওয়ার দরুন!

উপলকে ছোট থেকে পড়িয়েছিলেন, আশা করা যায়, স্যারকে ফেরাবে না। উপলের বাড়িতে পোঁছে কলিংবেল বাজালেন অজয়বাবু। দুবার রিং- হওয়ার পর একজন ঘাড় বাড়িয়ে বলল, কাকে চাই ?

“আমি উপলের অঙ্কের স্যার, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ওকে বলুন চিনতে পারবে”।

“বাইরেই দাঁড়ান, আসছি”।

মিনিট পাঁচেকের রোদে তেতে উঠেছে শরীর, বছর আটান্নর অজয়বাবুর। মেয়েটি বাড়ির পরিচারিকা বুঝতে অসুবিধা হয় না। গেট খুলে দিয়ে বলল, ' বসুন ', দাদাবাবু আসছেন।

“আচ্ছা…” বলে, পকেট থেকে রুমাল বের করে, মুখে কপালে, গলায় ঘাড়ে বুলিয়ে নিলেন। উপলের বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো। একটা সময় বাবা মৎস্যজীবী  ছিল। টালির বাড়ি ছিল উপলদের। তালপাতার পাখা বিক্রি করে মা কিনে আনত, ঘরের চাল-ডাল। বাবা জোগাড় করত বাকি সব। উপল পড়াশোনায় ভালো ছিল। অজয় ওকে বিনা পয়সায় পড়িয়েছে। আজ সব হয়েছে ওর। গ্যাজুয়েট হওয়ার পর অজয়বাবুই সুপারিশ করে বিডিও অফিসের কাজটা জুটিয়ে দিয়েছিলেন! সামনে এসে বসল, উপল। ঠোঁটে সিগারেট। জ্বালিয়ে নিল। তারপর এক টান মেরে বলল, “বলুন স্যার হঠাৎ কি ভেবে উপলের কাছে আসা ?”

“ভালো আছিস ?”

“হ্যাঁ, চলছে...”।

“বউমা ভালো ?”

“হ্যাঁ, ভালো”।

“বলছি, একটু মোবাইলে কি করে ক্লাস নিতে হয়, কিভাবে অপারেট করতে হয় শিখিয়ে দিবি ?

ভ্রু কুঁচকে উপল বলল, “বয়স হয়ে গেছে স্যার, এখন এসব শেখার প্রয়োজন আছে কি ?”

“ছাত্র-ছাত্রী পড়াই তো,তাই আর কি !”

"বেশ দেখুন, এদিকে আসুন, দেখাই”।

অজয়বাবুর হাসি ফুটল মুখে, ব্যস্ত হয়ে বললেন , “দে দে শিখিয়ে দে দেখি”।

বেশ কিছুক্ষণ বোঝানোর মধ্যেই ভিতরের ঘর থেকে ডাক এলো, “কই গো শুনছ ? ফোন এসেছে তোমার”।

বোঝানো থামিয়ে উপল বলল, “স্যার আপনি বসুন আমি আসছি”।

অজয়বাবু ঘাড় নেড়ে বললেন , “বেশ যা”।

অজয়  অভ্যাস করছিলেন , একটু আগে কিভাবে উপল  ওনাকে শেখালো সব, করতে করতে ফোনের অপারেটিং সিস্টেমে কোনো একটি অপশন ফোর্স ফুলি স্টপ করে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ফোন অফ হয়ে গেল।

অনেক চেষ্টা করলেও খুললই না! উপলের  ঘরের পর্দা হওয়ায় দুলছে, ফাঁকফোকর দিয়ে চেয়ারে বসে বসে উঁকি দিচ্ছিল অজয়বাবু। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর উপল বেরিয়ে এসে বলল, “স্যার, আপনি কালকে বিকালের দিকে আসুন, আমাকে একটু বেরোতে হবে”।

অজয়বাবুর মুখ শুকিয়ে এলো, “ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন , এটা বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ, একটু দেখে দিবি ? শিখতে না হয় কাল আসব”।

উপল একটু ভেবে বলল, “আপনি কালকেই আসুন, আমি দেখছি”। অজয়বাবু চুপ থেকে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করলেন, পেটে খিদে নামক বস্তুটা বেয়াদপি শুরু করেছে। পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলেন। চলার পথে মাধবীলতায় মোড়া, গ্রিলের অংশটা দেখে মনে পড়ল, বৃষ্টিলেখার এইখানেই বিয়ে হয়েছে। ওর স্বামীর মূল শহরের বুকে, ইলেকট্রনিক্সের দোকান আছে। একসময় ব্যাচের তুখোড় ছাত্রী ছিল, বৃষ্টিলেখা। অঙ্ক অনার্স নিয়ে বর্ধমান বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর মিষ্টি আর একটা হালকা গোলাপি রঙের জামার ছিট, উপহার হিসেবে এনেছিল।  সেদিন সেটা গ্রহণ করার পর অজয়বাবু বলেছিলেন , “পরের বার মিষ্টিটা যেন তোর টাকায় পাই, মনে থাকবে ?” বৃষ্টিলেখা হেসে উঠে বলেছিল, “নিশ্চয়  স্যার, আপনি আমায় এত সাহায্য করেছেন, পা ভেঙে গিয়েছিল, ব্যাচে যেতে পারিনি, আপনি বাড়ি এসে পড়িয়ে দিয়েছিলেন, আমার সব মনে আছে”।

অজয়বাবু হালকা হাসলেন  এসব ভেবে! বিয়েতেই শেষ দেখেছিলেন  এমনকি, বৌভাত অবধিও মনে ছিল স্যারকে ডাকার কথা, তারপর মেয়েটা হাইস্কুলে চাকরি পেল, অথচ, স্যারকে নিজের টাকায় মিষ্টি খাওয়ালো না! তবুও একবার গেটের সামনে থেকে  আওয়াজ দিলন  অজয়বাবু। উপরের বেরিয়ে আসা ব্যালকনি থেকে বেগুনি রঙের চুড়িদার পড়া বৃষ্টিলেখা উঁকি দিয়ে বলল, “কে?”

“ বৃষ্টিরে! আমি আমি! তোর স্যার রে! অঙ্কের স্যার। বর্ধমানে ব্যাচ ছিল, পড়তে যেতিস, খেয়াল নেই ?”

বৃষ্টিলেখা একটু ভেবে বলল, “দাঁড়ান আসছি”।

দরজায় পুরোনো স্যারকে দেখে, ঢক করে একটা প্রণাম করে বলল, “অনেকদিন পর দেখলাম তাই একটু চিনতে অসুবিধা হয়েছিল। কিছু মনে করবেন না স্যার।”

“ না রে ঠিক আছে। হ্যাঁ, কেমন আছিস মা ?”

“ভালোই। ভিতরে আসুন”।

অজয়বাবু গেটের ভিতরে ঢুকে চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, সবুজে ঘেরা বাগান দুপাশে। বেনামি ফুলের বাহারে সেজে উঠেছে, পাঁচিলের ধার গুলো। পাখির ডাক শোনা গেল, ভিতরে ঢোকার আগে।

“বসুন স্যার! এত রোদে, হঠাৎ আজ এইদিকে এলেন যে!”

“আর বলিস না, এসব স্কুল কলেজ  বন্ধ হয়ে গিয়ে আমার চিন্তা আরো বেড়েছে। একেই তো অঙ্কে এত কাঁচা ছেলেমেয়ে গুলো, তার মধ্যে এখন আবার অনলাইন ক্লাস। ফোনে এসব কিভাবে কি করব, সেই জন্য এসেছিলাম উপলের কাছে”।

বৃষ্টিলেখা একটু হেসে বলল, “ওহ আচ্ছা। শরীর ভালো তো ?”

“হ্যাঁ... ভালো। ওই একটু”, কথা শেষ না হতেই, বৃষ্টিলেখা  বলল, “শরবতটা খেয়ে নিন। বাড়ি যাবেন তো নাকি এবার ?”

অজয়বাবু খেয়ে নিলেন তখুনি শরবতটা। তারপর বললেন , “হ্যাঁ, যাব, এবার উঠি”।

“বেশ, আসুন। পরে সময় করে আসবেন”। বৃষ্টিলেখা যেন একটু অপ্রস্তুত, ঠিক আতিথেয়তা করার মানসিকতা আর নেই। অজয়বাবু বেরিয়ে চলে আসছিলেন, পিছু ফিরে বললেন, “ফোনটা অফ হয়ে গেছে, একটু দেখে দিবি কি হয়েছে ?”

বৃষ্টিলেখা হাতে নিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখল, “তারপর বলল, চার্জ নেই মনে হয়। বাড়িতে গিয়ে চার্জ দিয়ে দিন”।

“আমি ফুল চার্জ দিয়েই এনেছিলাম। নতুন ফোন”।

“তাহলে আপনি পারলে একটু দোকানে দেখিয়ে নিন”।

অজয়বাবু আবার পকেটে ফোনটা ভরে, হাঁটা দিলেন। পেটের খিদে এখন ঝিমিয়েছে একটু, ধীরে ধীরে হেঁটে বাড়ি ঢুকলেন  অজয়বাবু। খেয়ে নিয়ে হাত-পা টান করে শুলেন। শরীরটা দিনদিন আর সায় দিচ্ছে না, ওজন কমে গেছে। শীর্ণ শরীর নিয়েই এখনো ছেলেমেয়েদের জন্য খেটে যাচ্ছেন। গণিতের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে সাহায্য করে যাচ্ছেন। অথচ আজ লেন্সটা জুম-ইন-জুম আউট করতে না পারার জন্য কত কি কটূ কথা শুনতে হল!

অজয়বাবু চোখ বুজে শুয়েছিলেন, বাইরে থেকে ডাক এলো রাজুর।

“ও মাস্টারকাকু, যাবেন নাকি দোকান ? দুপুরে বললেন যে, বিকালে আসতে”।

অজয়বাবু উঠে এলেন, তারপর বললেন, “পাঁচ মিনিট দাঁড়া, আমি আসছি। গাড়ি করে যাবি তো?”

“হ্যাঁ, আসুন আসুন জলদি আসুন” ।

অজয়বাবুর ভীষন মনখারাপ, ছাত্র-ছাত্রীদের আজও ক্লাস নেওয়া গেল না। ফোনটা হাতে নিয়ে পকেটে ভরলেন, তারপর বেরিয়ে পড়লেন, একটা ব্যাগের ভিতরে ছাতা নিয়ে।

রাজু  অজয়বাবুকে শহরের মোবাইলের দোকানটার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল, মাস্টারকাকু আমি মায়ের জন্য ওষুধগুলো কিনে আসছি, ততক্ষনে কাজ সেরে আপনি এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন, বুঝলেন ?”

“বেশ বেশ, হেলমেট ঠিক করে পড়ে নে, বাবা”।

অজয়বাবু এবার দোকানে ঢুকলেন। নিয়ম করে এখন দোকান খুলছে শহরে সে বিষয়ে রাজু  আগেই বলেছিল। এবার দূর থেকে একজন হঠাৎ ডেকে উঠে বলল, “স্যার ? স্যার ? কেমন আছেন স্যার ?”

অজয়বাবু চশমার ঘষা অংশতে দেখতে চেষ্টা করলেন , মেয়েটা কে ?

“কে তুই ?”

“স্যার আমি মৌমিতা ! মনে আছে ?”

“মৌমিতা ? ওহ হ্যাঁ, ব্যাচের যাকে খুব বকাবকি করতাম, একদম পড়াশোনা করতিস না। তাই তো ?

“হ্যাঁ স্যার, লজ্জা পেল মৌমিতা।

“ক্লাস এইট থেকে টেন অবধি, অঙ্কতে কখনও পঞ্চাশের বেশি তুলতে পারিস নি বলে তোকে কত বকেছি বল”।

“হ্যাঁ স্যার, আপনি তো কাকাকে ডেকে সব বলে দিলেন, আর আসা হল না ব্যাচে। কাকার ইচ্ছে ছিল, সাইন্স নিয়ে পড়ব, সেটা হল না বলে, আর পড়ালো না”।

“মনে পড়েছে সব এখন জলের মত পরিষ্কার। তা এখন এখানে কাজ করিস নাকি?”

“হ্যাঁ স্যার, কাকা তিন বছর হল মারা গেছেন, কাকিমা, ছোট বোনের  দায়িত্ব আমায় নিতেই হল”।

“সে কি, কি হয়েছিল কাকার ?”

“সেরিব্রাল”।

“ভালো করেছিস মা। বোন কে ভালো করে মানুষ কর”।

মৌমিতা এবার জিজ্ঞেস করল, “স্যার, এখানে কি জন্য এসেছেন ?” 

অজয়বাবু বিস্তারিত সব খুলে  বললেন।

মৌমিতা বলল, “একটু বিলটা দিন স্যার!”

“এই রে, বিল আনতে তো মনে নেই মা!”

মৌমিতাকে অন্য ডেস্কে বসে থাকা ছেলেটা বলল, “তাহলে হবে না। পরশু আসতে বলো”।

মৌমিতার অপারগ মুখের দিকে তাকিয়ে অজয়বাবু বলল, “বেশ পরে আবার আসব। আসলে ছেলেটা কিনে নিয়ে গিয়েছিল তো, আমি বিলটার ব্যাপারে জানিনা”।

মৌমিতা দোকানের বাইরে বেরিয়ে এসে বলল, “আপনি ফোনটা আমায় দিয়ে যান স্যার, আমি কি হয়েছে দেখে আপনার বাড়ি দিয়ে আসব। কালকেই”।

“কত লাগবে?”

“ কিছু লাগবে না স্যার, নতুন ফোন একবছরের ওয়ারেন্টি আছে। কোন পয়সা লাগবে না”।

অজয়বাবুর মুখে হাসি ফুটল, মৌমিতা র মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ভালো থাক মা!” 

মৌমিতার আওয়াজ পেয়ে অজয়বাবু এগিয়ে এলেন, ভাতের ফ্যান ঝরাতে দিয়েছেন সদ্য। ঘরটা বিশেষ সাজানো নয়। চারিদিকে জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে পড়ে আছ।  মৌমিতা  চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল, “স্যার অনেকদিন আগে এসেছিলাম একবার, ত্রিকোণমিতি বুঝতে। মনে আছে?”

“সব মনে আছে। তোর কাকা এনেছিল তোকে। আর আমি বলেছিলাম গবেট তুই একটা”।

মৌমিতা হেসে উঠে বলল, “আমি কোনোকালেই আপনার প্রিয় ছাত্রী ছিলাম না। তাই না? কিন্তু আপনি আমার প্রিয় স্যার, সারাজীবন থাকবেন...”।

অজয়বাবুর স্মৃতি বড্ড প্রখর হচ্ছে। মেয়েটা পিছিয়ে ছিল। সবার থেকে, সবাই যেখানে নাম ছড়িয়ে দিচ্ছিল অজয়বাবুর, সেখানে এই মেয়েটা, নাম ডুবিয়ে দিচ্ছিল। পুরোনো কথা মনে আসতেই অজয়বাবু বললেন , “যাক তবু ঘেন্নার পাত্রকে মনে রেখেছিস”।

“এরকম বলবেন না স্যার। আপনিই তো প্রথম যিনি আমায় হাতে ধরে শেখাতে চেষ্টা করেছিলেন। আপনার সাহায্য নিয়েই সাহস করে মাধ্যমিক দিয়েছিলাম। বাকিদের মত হয়ত এতটা কাছের হতে পারিনি কিন্তু আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় স্যার "। কথার শেষদিকে এসে ফোনটা বের করে বলল, "এই নিন স্যার। ফোন ঠিক হয়ে গেছে”।

“তাই ? দেখি দে দে”। অজয়বাবুর মুখে শ্বেত মধুর হাসি দেখে মৌমিতা  বলল, “আপনি আগের মত গম্ভীর নন আর তাই না ?”

অজয়বাবু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “বয়সের জোর নেই মা আর। থাইরয়েড ধরা পড়েছে। ক্রমশ শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে, সুগার ধরা পড়েছে, তিনমাস আগে। বাঁ চোখের অপারেশন করতে হবে, ছানি পড়ছে। হাঁটুর যন্ত্রনায় এক একরাত ঘুম হয় না”।

বাড়ির ভিতরে, শেষ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, অজয়বাবুর ছেলে, অনমিত্র। এক নজরে মৌমিতাকে দেখে বলল, "কে ইনি ?”

“বাবু, এই তো মৌমিতা। আমার পুরোন ছাত্রী। তোকে বলেছিলাম না, যে দোকান থেকে তুই কিনেছিলি ফোনটা ওখানেই আমি গিয়েছিলাম; সারানোর জন্য ? ও ওখানেই কাজ করে”।

মৌমিতা  হাত জোড় করে নমস্কার করে। অনমিত্র  ফ্রিজ থেকে জল বের করে খেয়ে নেয় তারপর ঢেকুর তুলে বলে, “এখন এভাবে কারোর বাড়ি যাওয়া আসা ঠিক নয়। চেষ্টা করবেন, বাইরে থেকে দিয়ে যাওয়ার”।

মৌমিতা এমন আচরণ প্রত্যাশা করেনি। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছিল। অজয়বাবু বললেন , “আহ অমন বলতে নেই, ও তো সবই প্রটেকশন নিয়ে এসেছে”।

“তবুও..”।

“বাবু এবার একটু শিখিয়ে দে”।

অনমিত্র, কানে হেডফোন গুঁজে নিয়ে বলল, "এখন সময় নেই, রাতের দিকে দেখছি”।

মৌমিতা শান্ত হয়ে বলল, “স্যার আমি শিখিয়ে দেব ?”

“পারবি রে ? পুরোনো ছাত্র-ছাত্রীরাও এড়িয়ে যাচ্ছে, শেখাচ্ছে না। একটু সময় লাগবে তো বল শিখতে ?”

অজয়বাবুর হতাশ দুহাতের মুঠো চেপে ধরে মৌমিতা মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল, “মন খারাপ করবেন না স্যার, আমি রোজ সন্ধ্যেবেলা আসব, দোকান থাকুক না থাকুক। যতদিন না আপনি শিখে ফেলেন, আধুনিক মোবাইলের সমস্ত খুঁটিনাটি”।

অজয়বাবু মুচকি হেসে বলেন, অঙ্কতে ভীষন কাঁচা ছিলি বলেই, ব্যাচ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, তবুও আমাকে শেখাবি ?”

“শেখাবো স্যার। কোথাও যেতে হবে না আপনাকে”।

এরপর মৌমিতা  প্রায়ই আসত অজয় বাবুর কাছে। আড়ালে থেকে ক্লাস করানোর সময়, সমস্ত অপারেটিং বুঝিয়ে দিয়ে যেত। সময় নিয়ে শিখিয়ে দিয়েছিল, কিভাবে পিডিএফ ডাউনলোড করতে হয়। কোন সাইট ভালো, কোনটার  হ্যাকিং পসিবিলিটি বেশি। শিখিয়েছিল, গুগল মিটে কিভাবে অনলাইন ক্লাস নিতে হয়, ছাত্রছাত্রীদের মেইলে কিভাবে, উত্তর দিতে হয়, ও প্রশ্ন পাঠাতে হয়। এছাড়াও কেবলমাত্র বুড়ো আঙুলের নিপুণ কৌশলে কি করে টাইপ করতে হয়, তাও দেখিয়ে দিয়েছিল। প্রতিদিন অভ্যেস করাতো এসে।

অজয়বাবু চাপা আফসোস নিয়ে বলতেন , “ফিরতে রাত হলে কাকী বকে?”

প্রশ্ন এড়িয়ে যেত মৌমিতা। অন্য প্রসঙ্গ আনত। তখনই তিনি বুঝতে পারতেন, ঝড় সামলেই আসে মেয়েটা।

যেদিন হাত উঁচিয়ে অজয়বাবু থামিয়ে দিলেন মৌমিতাকে, সেদিন মৌমিতা  যুদ্ধ জয়ের হাসি হাসল। কারণ এখন ওর প্রিয় স্যার নিজেই সব গুছিয়ে করে নিতে পারবে । থামস আপ দেখিয়ে সাহস দেয় অজয়বাবুকে। দেওয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখে, সাইকেল করে আসা যাওয়া করতে করতে আজ দেড় মাস হয়ে গেল। মৌমিতা যাওয়ার সময় প্রণাম করে বলল, “কিছু অসুবিধা হলে ডাকবেন স্যার”।

“কিছুই নিলি না, উপকারের বদলে”।

“দেবেন কিছু ?” আবার হাঁটু গেড়ে বসল মৌমিতা , প্রিয় স্যারের হাঁটুর কাছে।

“বল, কি লাগবে মা!”

ব্যাচে আপনি আমার সাথে কথাই বলেননি সেরকম। একবার টিচার্সডেতে আপনাকে প্রথমবার প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, মনে আছে ?

“আছে”।

“জানতে চেয়েছিলাম, আপনার প্রিয় ছাত্রী কে? প্রশ্নটা শুনে অনেকেই হেসেছিল। অবশ্য আমি হাসির খোরাক ছিলাম। এটা ঠিক। যে ব্যাচে সবার শেষে বসে থাকতাম, স্যারও ডাকেননি কখনো, সে ছাত্রী হাসির খোরাকই”।

বাঁ চোখের আল বেয়ে গড়িয়ে আসা জল মুছে দিয়ে অজয়বাবু বললেন, “প্রিয় ছাত্রী” ?

কথা শেষ না হতেই অনমিত্র এসে বলল, বাবা এখুনি চলো, পাশেরবাড়ির  শিখা জেঠিমার খিঁচুনি উঠেছে আবার।

তড়িঘড়ি ছুটল, অজয়বাবু। প্রিয় স্যারের কাছে, সর্বদা অবজ্ঞার ছাত্রী, আজ মর্যাদা পেয়ে যেন চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। চুপচাপ নীরবে চলে গেল, শেষবারের মত, একাকী।

এদিকে অজয় বাবু ফোন করে আর পায় না মৌমিতাকে। এ কটা দিনে একেবারে যেন মেয়ে হয়ে উঠেছিল, সে। চায়ের বাসন টুকু অবধি ধুয়ে মেজে দিয়ে যেত। বয়স্ক মাকে, মশারি টাঙিয়ে দিত। এখন সন্ধ্যে হলেই কেমন একটা একাকীত্ব নেমে আসে, বয়সের উঠোনে। সুপারি গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদ আলো ঢেলে যায়, বেনামি ফুলের উপর। বেলি ফুলের উপর, নয়নতারার উপর…অযত্নে বেড়ে উঠেছে কিছু গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যাতায়াতের পথে। তাদেরও আলো দিয়েছে চাঁদ! কাঁঠাল, আম, পেঁপে গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে। ইদানিং শিউলির সুবাস আসে বেশ। শরৎ উঁকি দিচ্ছে, শিউলির গন্ধে। এই নিয়ে মন ভুলিয়ে রাখলেও, রাতে হঠাৎ হঠাৎ বুকে বড্ড চাপ লাগে। হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া মেয়েটার জন্য। মানুষ হারাতে হারাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও, চিরকাল হারিয়ে যাবে সবাই, এ মানিয়ে নিতে অক্ষম সে। একটা বিন্দুমাত্র পাওয়ার কিছু বস্তু পেলে মৌমাছির মৌচাকের মত আগলে রাখতে চায়। অজয়বাবুর সব ছিল, হারাবার সময়ও সব হারিয়েছে, কেবল হারায়নি, মৌমিতা ।

মৌমিতার  ফোনে কোনোভাবেই রিং হচ্ছে না। অন্য কোনো নম্বর নেই, তাই ভোর হতেই বেরিয়ে পড়লেন  অজয়বাবু। সঙ্গী ওই বহুকাল অব্যবহৃত সাইকেলটা।

মৌমিতা  যেখানে কাজ করে, সেই দোকানের কাছে বেলা অবধি বসে রইলেন  অজয়বাবু। দোকান খোলার সময় তিনি জানতে চাইলেন, “মৌমিতা  কাজে আসে?”

ছেলেটা পানের পিক পাশে ফেলে বলল, “না আসে না। শরীর খারাপ। কিছু দরকার?”

“ঠিকানা জানো ?”

“ওই তো, তারামা মেডিকেল হলের পিছনে যে কটা টালির বাড়ি আছে, তার মধ্যে একটা বাড়ি”। ছেলেটা দায়সারা উত্তর দিয়ে চলে গেল। অজয়বাবু সাইকেল চালিয়ে আবার গেলেন। কলোনির মত ছোট্ট এলাকাতে ছোট্ট ঘর, মৌমিতার কাকিমার।

“কি চাই?”

“মৌমিতা আছে ঘরে?”

“ আপনি ওই অঙ্কের স্যার”?

“মৌমিতা  বলেছে বুঝি?”

“হ্যাঁ”।

ওর কাকিমা এটা শুনে কি বলতে যেন ঘরে ঢুকে পড়ল। আবার বেরিয়ে এলো। পর্দা টেনে দিল, অন্য ঘরের।

মৌমিতার কাকিমা হলুদ চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “বসুন”। অজয়বাবু চারদিক তাকিয়ে দেখল, জিনিসপত্র মিলিয়ে মোট ঘরটা ভীষণ ঘিঞ্জি। পাপোশের চারদিক ছিঁড়ে গেছে। মেঝের সিমেন্ট ভেঙে গেছে ইতিউতি।  স্টিলের বাসন পড়ে যাওয়ার আওয়াজ এলো, বন্ধ ঘর থেকে। মৌমিতার কাকিমাকে ছুটে যেতে দেখলেন , অজয়বাবুর আর বসা হল না, চেয়ারে। ছুটে এসে দেখেন, বিছানা থেকে একরকম ঝুলে গেছে, মেয়েটা। নিচে নীল রঙের ছোট গামলা রাখা, তাতে বমি করার চেষ্টা করে চলেছে সে নিরন্তর। নাকে মাস্ক পরে, হাত গ্লাভস পরে, ওর কাকিমা বুক মালিশ করে দিচ্ছে। অজয়বাবু থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন , "ওর কি হয়েছে ?"

মেয়েটার সাড়া নেই। থেকে থেকে সাঁই সাঁই শব্দ উঠে আসছে, বাধাপ্রাপ্ত নিঃশ্বাসের। অজয়বাবু ছুটে এসে মাথাটা ধরলেন  মৌমিতার। ওর কাকিমা হাত ছিটকে দূরে সরিয়ে বলল, “করোনা হয়েছে মৌমিতার। কেন ধরলেন? মরবেন না কি?”

“তাহলে ওকে এভাবে বদ্ধ ভাবে কেন রেখেছেন?” অজয় বাবু মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলেন, প্রশ্নটা করতে করতে উঠে দাঁড়ালেন।

“কি করব? যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা হচ্ছে সেখানে বেড ফাঁকা নেই, দুদিন ধরে বসে ছিলাম গিয়ে, কেউ নেয়নি। বাড়ি নিয়ে চলে এসেছি। প্রাইভেট নার্সিংহোমে কেউ নেবে না, নিলেও যা টাকা লাগবে আমার নেই”।

অজয়বাবু দু’চোখের পাতা মেলাতে পারছিলেন না, মৌমিতার করুণ অবস্থা দেখে। মেয়েটা বালিশের সাথে ক্রমাগত লড়াই করে চলেছে….নিশ্বাস ওর সায় দিচ্ছে না। অজয় বাবু তড়িঘড়ি ফোন করলেন, জনা কয়েক, পরিচিতদের। প্রত্যেকের থেকেই একটা অমানবিক উত্তর এলো, করোনা পেশেন্ট এডমিট নেব না। হাসপাতাল যান। ফ্রি তে সবই পাবেন। পুলিশকে জানান, কাজের কাজ হবে। ওর কাকিমা উঠে এসে একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই নার্সিংহোমে ভর্তি নেবে। পাশের বাড়ির মেয়েটা আমায় কার্ড দিয়েছিল। ও চলে গেছে, ডিউটিতে। কিন্তু আমি টাকার ভয়ে পারিনি যেতে”। অজয়বাবু একমুহূর্ত নষ্ট না করে এম্বুলেন্স ডাকলেন, ওই নার্সিংহোমের। তারা সুরক্ষার বিধি মেনেই, তুলে নিয়ে গেল মৌমিতাকে।

অজয়বাবুকে শেষ একবার চোখে দেখে নিল, মৌমিতা।

এরপর যখন মৌমিতার   জ্ঞান এসেছে, তখন দুদিন পেরিয়ে গেছে। ভালো রেসপন্স করছে মৌমিতা। একজন নার্স এগিয়ে এসে জানতে চাইল, কষ্ট হচ্ছে কিনা, ঘাড় নেড়ে না বলল মৌমিতা।  প্লাস্টিক বন্দী একটা ছোট্ট ঘর, বাইরে সাদা প্লাস্টিক মোড়া জীবন ছুটছে, জীবন বাঁচাতে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল, বর্গক্ষেত্র আকারের কাঁচ থেকে অজয় স্যার উঁকি দিচ্ছেন। হাত নেড়ে বোঝালো সব ঠিক আছে। উঁকি দিল কাকিমাও।

বালিশে মাথা ফেলে নিস্তর জীবনের পথে যাত্রী মৌমিতা হেসে উঠল। একজন নার্স, অক্সিজেন পাইপ চেক করতে এসে, এই দৃশ্য দেখে বলল, “ভর্তির দিন থেকে উনি আছেন, কোথাও যাননি। ভীষণ ভালোবাসেন উনি”।

মৌমিতা দু’চোখ বুজে নেয়। আলতো স্বরে প্রশ্ন করে জানতে চায়, ওদের রিপোর্ট হয়েছে কিনা, নার্স জানায়, “হয়েছে, নেগেটিভ এসেছে!”

ফেসশিল্ড এবং সাদা প্লাস্টিক পরিহিত  একজন এগিয়ে এসে বিল ধরিয়ে বলল, বিকালের মধ্যে পে করে দেবেন। “পেশেন্ট এখন নরম্যাল তবুও অবজারভেশনে রেখেছি”।

মৌমিতার কাকিমার হাত থেকে বিলের অঙ্কের   রসিদ নিয়ে অজয়বাবু বেরিয়ে আসেন । মাস্ক খোলেন মুখ থেকে, এখন রাস্তা প্রায় ফাঁকা, ধুলো পিচের মারকুটে খেলার সময় চলে গেছে। বিছিয়ে আছে, শুকনো পাতা, ঝরা ফুল, দানা পাঁপড়ি! এখন একটা এটিএম দরকার।

অজয়বাবু বুঝতে পারলেন এতদিন তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের যা শিখিয়ে এসেছেন সব সিলেবাস ভিত্তিক। আর সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনা দিয়ে কখনও ভালো খারাপের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। জীবনে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবিকতা, সততা, গুরুজনদের প্রতি সম্মান, এই সব আউট অফ সিলেবাসের বিষয়গুলি শেখার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে ওঠে।  

একটু একটু করে অজয়বাবুর প্রায়শ্চিত্তর ওজন হালকা হচ্ছে, মৌমিতা বাড়ি ফিরলে, অজয়বাবু বলবেন ওনার প্রিয় ছাত্রীর নাম…।

সমাপ্ত

dmajumdarbu@gmail.com
পূর্ব বর্ধমান



No comments:

Post a Comment