1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, March 31, 2021

কুলডিহার জঙ্গলে

 

কুলডিহার জঙ্গলে
সৌমিক ঘোষ

                উড়িষ্যার বালাসোর জেলায় ‘বন্য জীবন’ অভয়ারন্য কুলডিহার ২৭২.৭৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তারের মধ্যে টুরিস্টদের জন্য নির্দিষ্ট ৭০ বর্গ কিলোমিটার । অনুমতিপত্র , খাতায় এন্ট্রি মিটিয়ে সমুদ্রতল থেকে ১৬৯ মিটার উঁচু জঙ্গলের নির্জন পথে ঢোকা যায় । গাড়ি চলা সামলাতে ২০-২৫ ফুট অন্তর লাল মাটির বাম্পার ।পাখির ডাকে সজাগ হয়ে রাস্তার বাঁক , গাছপালায় নজর চলে যায় । ঢালু পথের মাঝে ঢালাই চাতালের উপরে নদীর জল ছুঁয়ে গাড়ি এগিয়ে চলে । তঙ্গনা , কমলা , বাসুধর , উয়াস্তল – কত নদীর নাম ।হঠাৎই পথের পাশে সুন্দর অর্কিডে ঘেরা শালগাছে চোখে পড়ে বাদামী , হলুদ রঙের ‘দৈত্য কাঠবিড়ালী’ ।

প্রায় দেড় ফুট লম্বা । ইঁদুরের মত মুখ । কালো রোমশ লেজ ঝুলিয়ে কচি পাতা খেতে ব্যস্ত ।আলো আঁধারিতে রাস্তা পেরিয়ে যায় কালো , বাদামী , লাল পালকের লম্বা লেজওলা বনমুরগী । ফাঁকা পাহাড়ী চাতালে একটু বিরতি । হাতিদের স্নানের জায়গায় পাথরের ফাটলে আর ঢালুতে বয়ে চলে বাসুধর নদী । ১৯৮৪ সালে তৈরি ‘কুলডিহা রেস্ট হাউসে’ লাঞ্চ করেই সামনের ফাঁকা সমতলে্র ‘সল্ট পিট’ – এ আসা বন্যজন্তুদের গল্প শুনে আবার গাড়িতে চলা । বাঁদিকের জঙ্গলে হালকা ধূসর রঙের একটা বাচ্চা হাতি চোখে পড়ে । কয়েক মুহুর্তের চাহনি । একটা ছোট হুংকার দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায় । দুপুর থেকে বিকালের পড়ন্ত আলোয় জঙ্গলের বাইরে ‘রিশিয়া বাঁধ’ এ পৌঁছে যায় গাড়ি । তঙ্গনা নদীর লাগোয়া উত্তর – পশ্চিমে বিশাল ‘রিশিয়া হ্রদ’ সারা বছর চাষের জলের যোগান ও বৃষ্টিচক্র বজায় রাখে । বাঁধের ঢালু জমিতে টং – টং শব্দ । গলায় ফাঁপা কাঠের মাঝে লোহার বল বা টুকরো লাগিয়ে গরুদের চরাতে এনেছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা । অসাধারণ সূর্যাস্ত  ।পরদিন দুপুরে জঙ্গলের পথে দেখা – এক ঝাঁক হরিণ ।ড্রাইভারের কাছে জানতে পারি ওড়িয়া ভাষায় ‘কুলডিহা’ বোঝায় – ‘ছোট ছোট কুলগাছে ঘেরা ছোট মাটির বাড়ি’ । সেরকম বাড়ি চোখে পড়ে না । কিন্তু দেখা যায় বাঁশপাতি পাখি , হলুদ বেনে বৌ , নীল ও খয়েরি মাছরাঙা । রাস্তার পাশে ছোট থেকে বিশাল উইঢিবি । গড়শিমুলিয়াতে উয়াস্তল নদীর এক উচ্ছ্বল ঝর্ণা দেখা যায় ।বনবিবির থান দেখে , জঙ্গলের পথ শেষ । গেটে লেখা – ‘বিদায় অরণ্য’ ।

soumikghosh57@gmail.com
হুগলি

No comments:

Post a Comment