1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

সম্পর্ক

 

ছবি  : ইন্টারনেট

সম্পর্ক

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়


আমেরিকান এম্বাসির সামনে ভদ্রলোক ও ওনার স্ত্রীকে প্রথম দেখেছিলাম।আমার সেদিন টুরিস্ট ভিসা পাবার ইন্টারভিউ।মে মাসের শেষে পনেরো দিনের জন্য আমার আমেরিকায় যাবার কথা।সকাল সাড়ে নটায় আমাকে ইন্টারভিউ এর সময় দেওয়া হয়েছে।নটার একটু আগেই পৌঁছে দেখি এর মধ্যেই বিরাট লাইন ।এত লোক হুড়োহুড়ি করে আমেরিকা যাচ্ছে দেখে বেশ অবাক হলাম।লাইনে আমার আগে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক লোকজন দাঁড়িয়ে।কমবয়সী বেশ কয়েকটি ছেলেমেয়ের দল লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ খোস গল্প গুজব জুড়েছে।হিহি হাহা আর ইংরেজির ফুলঝুরি ছুটছে।মে মাসের গরমে নটার আগেই আমার ঘেমে ওঠা মুখ আর ঘামে ভেজা জামা দেখে দারোয়ানের বোধহয় দয়া হলো। একটু দূরে রাস্তার উল্টো দিকের একটা বট গাছ দেখিয়ে আমার পিছনে দাঁড়ানো সকলকে বললো 

" এনার থেকে সবাই ওই বট গাছের ছায়ায় গিয়ে লাইন দিন।"


আমরা গোটা দশেক লোক বট গাছের ছায়ায় লাইন দিলাম।ওখানেই সেই প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ার সাথে আলাপ।দেখেই মনে হয় অবাঙালি ও মফস্বলের লোক।জিজ্ঞাসা করে জানলাম আসানসোলের কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গের কোনো  অজগ্রাম থেকে ভিসা ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন।ভদ্রলোকের বয়েস প্রায় ষাট বছর।ধুতি আর ফতুয়া পরা আর কাঁধে চেক গামছা।গালে কাঁচা পাকা দুদিনের না কমানো দাড়ি আর মাথার চুল সব সাদা।খেতে খামারে কাজ করা লোকেদের মতো কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, গাল দুটো তোবড়ানো আর গায়ের রং কষ্টি পাথরের মত কালো।মহিলা একটি অতি সাধারণ ইস্তিরি না করা সুতির শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।দুজনেরই পায়েই সদ্য কেনা হাওয়াই চটি।

আমি ওনাদের দেখে একটু উৎসুক হলাম।দেখি ভালো করে হিন্দিতেই কথা বলতে পারছেন না।ভোজপুরিতেই ওনারা মনে হলো বেশি স্বচ্ছন্দ।কলকাতায় এসে শহুরে ব্যবস্থাপনায় কেমন যেন একটু দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।তাও বট গাছের তলায় দাঁড়ানোয় ওনাদের একটু খুশি লাগলো।আমি যেচে কথা বলাতে আরো খুশি হলেন।

" আমরা টিপসই দিয়েই কাগজ নিয়ে এসেছি।"ডকুমেন্ট এর জেরক্সগুলো আমাকে দেখাতে দেখাতে কথা শুরু হলো।

ইতিমধ্যে আমাদের লাইন সচল হয়েছে।সাড়ে নটায় গেট দিয়ে আমাদের একে একে ঢোকানো শুরু হলো।ওনারা মনে হয় কোনো এজেন্ট ধরেছেন, যে ওনাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে চা খাবার নাম করে কেটে পড়েছে।অবশ্য এজেন্টকে অফিসের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হয় না।ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন এজেন্ট কে দেখতে না পেয়ে।অতঃপর এপয়েন্টমেন্ট এর কাগজদুটো আমিই খুঁজে বার করে ওনাদের হাতে দিতে ওনারা খুব খুশি হলেন।


ভিতরের বসার জায়গায় আমরা যে যেখানে যেমন চেয়ার খালি পেয়েছি তেমনি বসেছি।ওনাদের সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।  সামনের ডিসপ্লে বোর্ডে  এপলিকেশন নম্বর আর কাউন্টার নম্বর এলেই উঠে দাঁড়িয়ে সামনে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা জায়গায় হাজির হতে হবে। এই ঘেরা জায়গাটিতে তিনটি কাউন্টারে এক এক করে ইন্টারভিউ হচ্ছে।

চেয়ারে বসে আছি।একটু দূরে দেখি হালকা উত্তেজনা।সেই ভদ্রলোক আর মহিলার নাম নাকি অনেকবার ডিসপ্লে বোর্ডে এসেছে ,কিন্তু ওনারা সাড়া দেননি।দেবেন কি করে?ওনারা তো বুঝতেই পারেননি।আশেপাশে লোকজন ওনাদের বলাতে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়েছে।ভদ্রলোক ঘাড়ের গামছা দিয়ে মুখ মুছে একটু উত্তেজিত হয়ে একটি কমবয়সী সাহায্যকারী মেয়েকে ভোজপুরিতে কিছু বলছেন।গুটিকয়েক ছেলেমেয়ে লোকজনদের লাইনে দাঁড়াতে, কাগজ ঠিকমতো সাজাতে সাহায্য করছে।একটি ছেলেকে ডেকে ব্যাপারটা কি জিজ্ঞাসা করলাম এবং ওনাদের যে দোভাষী লাগবে সেটাও জানালাম।মনে হয় কাজ হলো।দেখি ওনাদের শান্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।ইতিমধ্যে আমার নম্বর আসাতে ইন্টারভিউ দিতে আবার লাইন দিলাম।এক লালমুখো সাহেব ইন্টারভিউ নিলেন।ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল।ইন্টারভিউ দিয়ে অন্য একটা গেট দিয়ে বের হতে হয়।বেরোনোর আগে দেখলাম সেই ভদ্রলোক আর ওনার স্ত্রী তখন বসেই আছেন।



দু সপ্তাহ পর আমার ফ্লাইট।মাঝরাত্রে কলকাতা থেকে প্রথমে হংকং এবং সেখান থেকে চার ঘণ্টা পরে অন্য একটি প্লেনে চড়ে সানফ্রান্সিসকো।প্রায় বারো ঘন্টার যাত্রা।হংকং এর বিশাল এয়ারপোর্টে ঘুরে বেড়াচ্ছি।একশো আঠারো নম্বর গেটে আমার পরবর্তী ফ্লাইট।মদের , গয়নার, বইয়ের,জামাকাপড়ের, চকোলেটের ইত্যাদির দোকান পেরিয়ে আমি আমার গেটের দিকে গদাইলস্করি চালে এগোচ্ছি।হটাৎ পিছনে ভোজপুরিতে কথাবার্তা শুনে চমকে উঠলাম।গত দুসপ্তাহে বহু ঝামেলার মাঝে আমি সেই দুজনার কথা একদম ভুলে গিয়েছি।পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রৌঢ় আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন।বড়ো মিষ্টি সেই হাসি।ওনারা একজন চেনা মুখ পেয়ে খুশি হলেন।দুজনেরই পরনে একই ড্রেস।স্ত্রী ঘোমটা দেওয়া সেই সুতির কাপড়টাই পরে বিদেশ চলেছেন।সাদা ধুতি,সাদা ফতুয়া পরা ভদ্রলোকের চেক গামছাটাও স্বস্থানে বিরাজমান।পায়েও সেই হাওয়াই চটি ,কিন্তু এবার যেন একটু ময়লা হয়েছে।সেই সাথে যোগ হয়েছে একটি নতুন কাপড়ের ব্যাগ, যাতে মনে হয় দৈনন্দিন কাপড় জামা,টুকিটাকি জিনিস আছে।ওনাদের সুটকেস নিশ্চয়ই আমারটার  মতো বিমানের পেটে আছে।ভদ্রমহিলা একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছেন।ওনার খুঁড়িয়ে হাঁটার কারণ জিজ্ঞাসা করেই হংকংয়ের বিমানবন্দরে আমাদের কথোপকথন শুরু হলো।

" জুতা কাটা হায়।" ভদ্রলোকের কথায় একটু ঘাবড়ে গেলাম।কুকুর কামড়াতে পারে, কিন্তু জুতো কামড়াতে পারে শুনে একটু অবাক হবারই কথা।পরে বুঝলাম পায়ে ফোস্কা পড়েছে  হাওয়াই চটি পরে।আমাদের পাশেই ড্রোন বিক্রি করার এক সুবিশাল দোকান।সকাল সকাল ডিপার্চার টার্মিনাল কিছুটা ফাঁকা।আমরা তিনজনেই সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে।

" এগুলো রিমোট দিয়ে আকাশের অনেক উঁচুতে উড়িয়ে ওপর থেকে ছবি তোলা যায়।" আমি সহজ ভাষায় হিন্দিতে ওনাদের বোঝানো শুরু করলাম।ওনারা মাথা নাড়লেন।ইতিমধ্যে আমি ওনাদের নাম জেনেছি এবং এও জেনে নিয়েছি যে আমরা একই বিমানে সানফ্রান্সিস্কো যাচ্ছি।

"   ওখানে আপনার কে থাকে?ছেলে না মেয়ে?"

" ছেলে।ওখানে চার বছর হলো কাজ করে।"

" এই কি প্রথমবার যাচ্ছেন?"

"এই প্রথম প্লেনে চড়লাম তো আমরা।ভীষণ ভয় লাগছিলো।খালি মনে হচ্ছিল যদি পড়ে যায়।মাঝে মাঝে আমার স্ত্রীর পেটটা কিরকম করে উঠছিল।আমারতো কানে একটা ফটফট শব্দও হয়েছে।এখন দেখ আর কিচ্ছু নেই।শুনলাম আরো বারো ঘণ্টা লাগবে।আমাদের তো এখনই ভয় করতে শুরু হয়েছে।"

ভদ্রমহিলা দেখছি কনুই দিয়ে স্বামীকে দুবার খোঁচা দিলেন।কিছু আমাকে দিতে বলছেন বলে মনে হলো।ভদ্রলোক ফতুয়ার বাঁ পকেট থেকে একটা ভিসিটিং কার্ড বার করলেন।তারপর আমার হাতে দিয়ে বললেন "আমার ছেলের কার্ড।"

" ডঃ নীলেশ প্রাসাদ

এম টেক( আই আই টি,মুম্বাই)

পি এইচ ডি(ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়)

 সাইয়েন্সটিস্ট, নাসা(আমেস সেন্টার, ক্যালিফোর্নিয়া)"

আমি রীতিমতো অবাক হলাম।এই গ্রাম্য দম্পতির ছেলে এত কিছু করেছে।নিরক্ষর বাবা-মায়ের তো ছেলের কার্ডটা পর্যন্ত পড়ার ক্ষমতা নেই।কিকরে সম্ভব হয় এমন অদ্ভুত ঘটনা পৃথিবীতে? এখানে কি জিন নিজের গতিপথ পাল্টে অন্য দিকে বয়।নাকি মিউটেশন হয়ে ছেলেটি অস্বাভাবিক মেধার অধিকারী হয়েছে।এমন সব হাজার চিন্তার ভিড়ে আমি ওনাদের সাথে আমাদের নির্ধারিত গেটের পানে এগিয়ে চললাম।




বিমান ল্যান্ড হতে তখন আরো দেড় ঘন্টা বাকি।নিজের সিটে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।গতরাত্রে একফোঁটা ঘুম আসেনি।টয়লেটে যাবার পথে মাঝের দশটি সিটের সারির মাঝামাঝি দেখি ওনারা দুজনায় গুটিসুটি মেরে কম্বল চাপা দিয়ে সিটে একে অপরের গায়ে হেলে শুয়ে আছেন।দুজনেরই দুটি পা সিটের ওপর তোলা।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ভদ্রলোকের পাশের সিটটি দেখি ফাঁকা আছে।হয়তো সিটের মালিক পায়চারী করছেন।অনেকেই বিমানের সামনে পিছনে হাঁটা হাঁটি করছেন দেখলাম।তাদেরই কেউ হয়তো এই সিটের দাবিদার।ভদ্রলোকের পাশের সিটে বসে গায়ে ঠেলা দিকে ডাকলাম।তড়বড় করে ঘুম থেকে উঠে আমাকে পাশে দেখে এক সারল্য ভরা অমায়িক হাসি দিলেন।

" বেটা, এখানের দেওয়া কিছু খাবার খাইনি।দুজনে কেবল বিস্কুট আর জল খেয়ে আছি।বাথরুমেও ভয়ে যায়নি।ওটার দরজা আবার বন্ধ করতে আমরা পারি না।"

" ছেলে আসবে তো এয়ারপোর্টে নিতে?" আমি জিজ্ঞাসা করি।

" হ্যা, হ্যা সে তো আসবেই।তুমি একটু আমার সুটকেশটা নিতে সাহায্য করো।"

আমি সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়লাম।

"কতো দিন থাকবেন বলে এসেছেন?"

" ছেলে তো ছমাস থেকে যেতে বলছে।কিন্তু ঠান্ডা পড়ার আগেই আমরা গ্রামে ফিরবো ঠিক করেছি।গ্রামে গিয়ে ছেলের বিয়েটা পাকা করতে হবে।পরের বছর বিয়ে।"

ভদ্রমহিলা জেগে উঠেছেন।আবার ওনার কনুইয়ের খোঁচা ভদ্রলোকের কোমরে পড়ল।ভদ্রলোক এবার ফতুয়ার ডান পকেট থেকে একটা সাদা খাম বার করলেন।তারপর সেটা থেকে অতি সাবধানে দুটি ছবি বার করে আমার হাতে দিয়ে হেসে বললেন

"দেখো বেটা, হামারা পসন্দ।"

গ্রাম্য সরল মুখের অধিকারিণী কম বয়সী দুটি মেয়ের পূর্ণাঙ্গ ছবি।একজন শাড়ি পরা,অন্যজন সালোয়ার কামিজ।এদের একজনকে পছন্দ করতে হবে নাসায় কর্মরত মেধাবী ছেলেটিকে।গ্রাম্য সরল মুখের মেয়েটি সুদূর আমেরিকায় পতিগৃহে এসে স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মন জয় করে ঘরকন্না করছে চিন্তা করেই মনটা কেমন ভালো হয়ে গেল।



বিমান থেকে নেমেই ওনারা ওয়াশরুমে ছুটলেন।দেখি ভদ্রলোক সঙ্গের কাপড়ের ব্যাগ থেকে দুটি মগ, নিমডালের দাঁতন বার করেছেন।আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম।ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আবার ওনাদের জন্য দোভাষী লাগলো।আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম।প্রায় ঘন্টাখানেক  জিজ্ঞাসাবাদ এবং ছেলেকে ফোন করার পর সাহেবরা ওনাদের সেদেশে ঢোকার অনুমতি দিলেন।

নিজেদের মাল নিতে এসে দেখি এক পুলিশ বেল্টের পাশে একটি স্ট্রলিব্যাগ ও একটি পুরোনো দড়িবাঁধা সুটকেস সরিয়ে তুলে নিয়ে যাবার তোড়জোড় করছে।অভিভাবকহীন মালদুটোতে বোমা টোমা আছে কিনা সেই নিয়ে সাহেবপুলিশ খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।হাঁ হাঁ করে ছুটে গেলাম।আমাদের ফ্লাইটের মাল যে যার সবাই নিয়ে চলে গেছে।অন্য প্লেনের পেটের মাল নেমেছে।আমার বড় খয়েরি স্ট্রলিব্যাগ আর ওনাদের নারকেল দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি পুরোনো সুটকেস ফেরত চাইতেই ইয়া লম্বা চওড়া সাহেবপুলিশ ভীষণ হম্বি তম্বি শুরু করলো।কোনো রকমে "সরি, সরি" বলে টিকিট দেখানোর পর সাহেবের মানভঞ্জন হতে,দুটো মালকে উদ্ধার করলাম।বিশাল  এর্রিভাল লাউঞ্জের কোন গেট দিয়ে বেরোলে  ছেলের নিরাপদ আশ্রয়ে ওনাদের দুজনকে তুলে দিতে পারব চিন্তা করে আমার প্রেসার বাড়তে শুরু করলো।আমাকেও তো আমার গন্তব্যস্থলে যেতে হবে।আমার ঘড়িতে স্থানীয় সময় রাত আটটা, কিন্তু বাইরে দৃষ্টি গেলে দেখলাম ঝকঝকে রোদদ্দুর আর মেঘবিহীন ঘননীল আকাশ।এত ঘননীল আকাশ আমাদের দেশে সচরাচর দেখা যায় না।ওনাদেরকেও দেখালাম।ভদ্রলোকের ঘড়িটা নিয়ে স্থানীয় সময়ে সেটা সেট করছি তখনই উনি আঙ্গুল দিয়ে কাঁচের বাইরের দিকে দেখিয়ে উচ্ছসিত হয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন " লো, হামার বাবুয়া আ গয়া।"

মহিলা জোর গলায় ডাকতে শুরু করলেন " ও বাবুয়া,ও বাবুয়া হামার।"

কোনো চিৎকারই কাঁচের দেওয়ালের ওপারে পৌঁছছে না।কিন্তু লাউঞ্জে বেশ কোলাহলের সৃষ্টি হওয়ায় বেশ কয়েকজন যাত্রী থমকে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখতে লাগলেন।হেল্প ডেস্ক থেকে দুই মেমসাহেবকে ছুটে আসতে দেখলাম।মেঝে পরিষ্কার করার দুটি ব্যাটারি চালিত গাড়ি আমাদের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো।ওই গাড়ির চালিকা দুই আফ্রিকান মহিলা হতভম্ব হয়ে বড় চোখ করে আমাদের দিকে চেয়ে আছেন।বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা তখনও চিৎকার করে যাচ্ছেন "মেরা বাবুয়া, মেরা বাবুয়া।"

 আমি বোঝাতে আবার সব শান্ত হলো।আমরা দ্রুত পায়ে সামনের গেট দিয়ে বাইরে একরাশ ঠান্ডায় বেরিয়ে বাবুয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।সুন্দর ,স্মার্ট, বুদ্ধিমান চোখ, মাঝারি উচ্চতা,চাপা গায়ের রং, সবুজ টি শার্ট আর জিন্স পরে বাবুয়া বাবা-মাকে নিতে এসেছে।আমি কার সাথে ওর মুখের মিল তা নিয়ে গবেষণারত হতেই দেখি বাবুয়ার পাশে লাল টি শার্ট আর জিন্স পরা, নীলচোখের এক সুন্দরী মেমসাহেব দাঁড়িয়ে।

"হ্যালো" বলে  বাবুয়ার সেই সুন্দরী সঙ্গিনী প্রৌঢ়র দিকে করমর্দনের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ভদ্রলোক সেসবের ধার ধারেন বলে মনে হলো না।মেমসাহেব দমে যাবার পাত্রী নন।উনি প্রৌঢ়াকে "হ্যালো মাম্মি" বলে জড়িয়ে ধরলেন।

আমাকে ওনারা কেউ ঠিক খেয়াল করেননি।আমি আমার স্ট্রলিব্যাগ নিয়ে এক পা দু পা করে পিছু হেঁটে সেই মহামিলনস্থল ছেড়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলাম।নীল আকাশের পশ্চিমকোনে সবে লাল,গোলাপি,হলুদ  রঙের খেলা শুরু হয়েছে।সম্পর্কের রঙিনতাগুলোও আকাশেও যেন তার ছাপ ফেলে চলেছে।

mukhopadhyayjaydip@ymail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment