1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

ভয়ের রকমফের

 

ছবি  : ইন্টারনেট

ভয়ের রকমফের

সৌমেন দেবনাথ

কথায় আছে, ভয় করলে ভয়, ভয় না করলে কিসের ভয়। ভয় থেকেই ভয়ের উৎপত্তি। মাকে কখনো ভয় করিনি, কিন্তু মা আমাকে হাজার রকমের ভয় দেখিয়েছেন। শিয়ালের ভয়, বাঘের ভয়, বাবার ভয়। পৃথিবীতে কম সন্তানই মাকে ভয় করে, কিন্তু বাবার চেয়ে মায়ের কাছেই বেশি মার খায়। বাবাকে ছোটবেলা থেকেই খুব ভয় করেছি। যমের মত ভয় পেতাম। বকতেন, শাসন করতেন, চোখ রাঙাতেন। বুঝতে শেখার পর থেকে বাবাকে আরো বেশি ভয় পেতাম। দেখতাম সংসারের রশিটা তাঁর হাতে। সবাই তাঁকে ভয় পান। তাঁর উপর সবাই নির্ভরশীল। রেজাল্ট খারাপ করলে টাকা দেবেন না বলে ভয় দেখাতেন, পড়তে না বসলে ভাত খেতে দেবেন না বলে ভয় দেখাতেন। এসব দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি। পরিবারের সদস্যরা একদিকে, বাবা একদিকে। বাবার অনুপস্থিতিতে সবাই বাবাকে নিয়ে সমালোচনা করতাম। মা ভয় দেখিয়ে বলতেন, তোদের বাবা বাড়ি আসুক সব বলে দেবো। শুনে চুপ হয়ে যেতাম। রূপকথার দৈত্য বা ভূতের চেয়ে বাবাকে বেশি ভয় পেতাম। আমি চাকরি পাওয়ার পরপরই বাবা অবসরে যান। মনে সাহস হলো, আর বাবাকে ভয় পাবো না। সাংসারিক রশি তাঁর হাত থেকে ছুটে আমার হাতে এলো। কিন্তু বাবাকে ঘিরে সেই ভয় আজো গেলো না। বাবা বলেন, খুব রোজগার শিখেছো? তোমার রোজগার খাবো না। আমার জমানো টাকা আছে। বাড়ি আছে, জমি আছে। বুঝতে পারলাম বাবাদের হাত থেকে কখনো রশি ছোটে না। 

বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করলাম। ভয়ে নিজের পছন্দের কথা তাঁদের কাছে বলতে পারিনি। এমনকি ভয়ে পছন্দের মানুষটিকেও পছন্দের কথা বলিনি। বৌকে প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতাম। ওমন সুন্দর মেয়ে নিয়ে সংসার করাও ভয়েরই, বেশি সুন্দরীদের মন বেশি সহজে পাওয়া যায় না। বেশি সুন্দর মেয়েদের বাবা মা বিয়ে দিতে পারলে প্রশ্বাস ছেড়ে বাঁচে। তেমনি বেশি সুন্দর মেয়ে বিয়ে করলে বিয়ের পর স্বামীর কাঁধে বেশি ভার পড়ে। মন রক্ষা করা, পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে রক্ষা করাও জটিল। কার সাথে হেসে হেসে কথা বলে, ভয়ে জিজ্ঞাসাও করতাম না। যদি ছুটে যায় সেই ভয়ও ছিলো। সুন্দরীদের তো বিয়ে বেঁধে থাকে না। মাথায় চুল ছিলো বেশি। খোঁপা করতো, দেখতে খুব ভালো লাগতো। ভয়ে বলতেও পারিনি। চাওয়া ছিলো অনেক। মুখও ছুটতো। যার আছে খোঁপা তার থাকবেও চুপা। কাজ শেষে ঘরে ফিরতে ভালো লাগতো না। ঘরে ঢুকতে ভয় লাগলে পৃথিবীতে অজস্র সুখ আর সৌন্দর্য থেকে লাভ কী? মায়ের হাত থেকে রান্নার দায়িত্ব বৌয়ের হাতে গেলো, বৌয়ের রান্না মায়ের রান্নার সাথে তুলনা করতেও ভয় করে। তার হাতের রান্না নেহাত অভুক্তরাই খেয়ে বলবে, ভালো। বৌয়ের কথা শুনে মাকে বকি। মাকে বকতে ভয় লাগে না। বৌয়ের কথা শুনে একদিন বাবাকেও বকে বসলাম। বাবা চোখ তুলে তাকালেন। সেদিন বাবার চোখে চেয়ে ভয় পেলাম না। বাবা মাকে বকলে পর হবে না, কিন্তু বৌয়ের কথা না শুনলে ঘরে আগুন জ্বলবে। ভয়ের কারণ সেটাই। বৌয়ের প্রতি বিষয়ে তাই ভয় পাচ্ছি, তার কথা সব মেনে নিচ্ছি। যা বলে তাই শুনি। কখন সোনার নেকলেস চেয়ে বসে সেই ভয়েই থাকি। মাকে বাবাকে না চাওয়ার আগে তাই টাকা দেয়া বন্ধ করে সঞ্চয় করি। সামনের মাসে পুজো। বৌয়ের পরিবার থেকে কে কে আসবেন ঠিক নেই। ভয়ে থাকি, সঞ্চয় নষ্ট করা যাবে না। একদিন বৌকে রাগের মাথায় দুটো কথা বলতেই বৌ তার বাবা মার কাছে নালিশ না করে তার বড় দাদার কাছে নালিশ করলো। তার দাদা বড় রাজনীতিবিদ। যার ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। ওর দাদা এসে আমাকে শাসিয়ে গেলেন। বৌকে ভয় না পেয়ে উপায় আছে? বেশি বয়সে বিয়ে করেছি। বৌয়ের যৌনতার সাথে পেরে উঠা দায়, সে ভয়ও কাজ করে। অসন্তুষ্ট থাকলেও খোঁচা দিয়ে এখনো কিছু বলেনি। 

ওদিকে অফিসের কাজে ভয় লাগে। হিসাব নিয়ে আমার কাজ। কবে না হিসাবে গরমিল হয়! আবার বৌয়ের গর্ভে বাচ্চা এলো। বৌ আর বাচ্চা উভয়কে নিয়ে ভয় বেড়েছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ত ছুটতে হচ্ছে। একা ছিলাম ছিলো না ভয়। আজ আমার কাঁধে কত দায়িত্ব, আর তাই নানা ভয়। মায়ের নিয়ে ভয়, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ, কখন কি হয়! বাবার নিয়ে ভয়, হাটতে পারেন না, বাতের ব্যথা। কাজ শেষে বাড়ি এলে বৌ দেখি কাঁধ ধরে মুখের দিকে নিষ্পলকে চেয়ে থাকে। কোন চাওয়া নেই তার আর, শুধু সঙ্গ চায়। বদাভ্যাসগুলো তার আর নেই বললেই চলে। অসুস্থ শরীরেই আমাকে সেবার জন্য উদগ্রীব হয়। একদিনের সেই অপছন্দের ঘামভরা মুখেই চুমু দেয়ার জন্য ঠোঁট দুটো বাড়ায়। ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে। ঘরের মধ্যে ভয় না থাকলে পৃথিবীর আর কোন ভয়কে ভয় মনে হয় না।

sskumar7447@gmail.com

No comments:

Post a Comment