1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, April 17, 2022

শেষ অধ্যায়

 

ছবি  : ইন্টারনেট 


শেষ অধ্যায়

উত্তম চক্রবর্তী

কার্ত্তিক চ্যাটার্জি তার বড় ছেলে কৌশিককে কিছুতেই বোঝাতে পাড়েন নি যে আমাদের সমাজে এখন পর্যন্ত এইভাবে দুটো অবিবাহিত ছেলে মেয়ের একসাথে একই ফ্ল্যাটে লিভ টুগেদার করে থাকাটা ভালো নজরে কেউই নেয়না। সমাজ কেন, আত্মীয় স্বজনরাই বা কি ভাববে ? মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আছে, কার্ত্তিক বাবুর দাদা, ছোট ভাই ও দিদিদের পরিবার আছে, কৌশিকের মামা মাসীরা আছে। এরা যদি জানতে পারে কৌশিক ব্যাঙ্গালোরে একটা অবিবাহিতা মেয়ের সাথে লিভ টুগেদার করে একসাথে থাকছে তাহলে ওঁর সমস্ত মান সম্মান ধুলায় মিশে যাবে।

কিন্তু কৌশিক আধুনিক যুগের ছেলে। একটা বিদেশী সফটওয়্যার কোম্পানিতে ভাল মায়নার চাকরী করছে। ব্যাঙ্গালোরে জয়নগরে বেশ ভালো একটা পস সোসাইটিতে ওর বান্ধবী তথা লাইফ পার্টনার বন্যা সেনগুপ্তর নিজস্ব একটা তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে থাকে। কৌশিক আগে একটা ব্যাচেলরদের মেসে থাকতো। সেবার নিউ ইয়র্ক থকে ফেরার সময় বন্যার সাথে প্লেনে আলাপ। তারপর মেলা মেশা এবং শেষে মেস ছেড়ে কৌশিক বন্যার ফ্ল্যাটে চলে আসে প্রায় এক বছর হয়ে গেল।  দুজন একসাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে ঠিক করেছে।

কার্ত্তিক চ্যাটার্জির দুই মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। সল্ট লেকে নিজের বেশ বড় একটা দোতলা বাড়ি। বড় মেয়ে কেয়া সপরিবারে থাকে মুম্বাইতে। জামাই নেভিতে চাকরী করে, ওদের একটাই পাঁচ বছরের ছেলে আছে। বড় ছেলে কৌশিক ব্যাঙ্গালোরে, এরপর ছোট ছেলে কিরণ এম টেক করছে আর সব শেষে আদরের ছোট মেয়ে দিয়া এবার বি এ ফাইনাল দেবে। নিজে প্রফেসর এবং আধুনিক মনস্ক হলেও কার্ত্তিক বাবু বা তার স্ত্রী পুত্র কন্যারা কেউই কৌশিকের এই ভাবে বিয়ে না করে একসাথে থাকাটা মানতে পারছিল না। কৌশিকের যুক্তি হচ্ছে কাউকে ভালবাসলে যে তাকে বিয়ে করতেই হবে তার কোন মানে নেই। একসাথে সাড়া জীবন কাটিয়ে দিলেই বা ক্ষতি কি ?

অবশেষে কার্ত্তিক বাবু বাধ্য হয়ে ছেলের আবদার মেনে নিয়ে ছেলেকে  বন্যাকে নিয়ে একবার ওদের সল্ট লেকের বাড়িতে আসতে বললেন। বন্যা দিল্লীর মেয়ে। বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন। মা তার দাদাদের সাথে দিল্লীতেই থাকেন। বন্যা একমাত্র মেয়ে, বি টেক করেই এই কোম্পানিতে চাকরী পেয়ে চার বছর যাবত ব্যাঙ্গালোরে একাই ছিল। এরপর কৌশিক ওর জীবনে আসে। খুব সুন্দর লম্বা ফর্সা চেহারার বন্যাকে কার্ত্তিক বাবুর পরিবারের সবারই বেশ ভালো লাগল। কৌশিক বন্যা দুজনেই বেশ খুশী। ওরা এক সপ্তাহ কলকাতায় থেকে ফিরে আসে ব্যাঙ্গালোরে।

এরপরেই বন্যার জীবনে এলো ওর অফিসের বস চন্দন সান্যাল। দিল্লীর ছেলে  লম্বা চওড়া সাহেবের মত চেহারার চন্দন আগে অন্য কোম্পানিতে ছিল। সেই চাকরী ছেড়ে বিশাল মায়নায় জি এম হিসাবে বন্যাদের কোম্পানিতে জয়েন করে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই বন্যার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। দুজন প্রায়ই একসাথে অফিসের কাজে ইউ কে বা আমেরিকায় যায় এবং সেখানে একই হোটেলে একসাথে থাকে। বন্যার এখন আর কৌশিকের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। ফলে দিন দিন কৌশিকের সাথে ওর সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরতে থাকে। শেষে বন্যা একদিন কৌশিককে জানিয়েই দিল যে ও মা হতে চলেছে।

কৌশিক ভেবেছিল বন্যা এই আটাশ বছর বয়সে মা হতে চাইবে না। কিন্তু এখন এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল। বন্যা কৌশিককে এটাও জানাল যে কৌশিক না, এই সন্তানের পিতা হল চন্দন সান্যাল। ওরা আগামী মাসে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে চলেছে। কৌশিক যেন ওর হয়ে সাক্ষী থাকে। পরদিন সকালে কৌশিকের মৃতদেহ পাওয়া গেল ওদেরই  ফ্ল্যাটের বাথরুমে। বেচারা কৌশিক  জীবনের  শেষ অধ্যায়ে বিষ খেয়ে জীবনটাকে শেষ করে দেওয়াই শ্রেয় মনে করেছে।  

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment