1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

ব্যাগ বিভ্রাট

ছবি  : ইন্টারনেট 

ব্যাগ বিভ্রাট  
সবিতা বিশ্বাস 
                                             
চরিত্রলিপি                                                                                                
১) সুমন – মনিকার স্বামী                              
২) মনিকা – সুমনের স্ত্রী                                
৩) তিতির—সুমন ও মনিকার কন্যা                   
৪) মিনার মা—গৃহপরিচারিকা                           
৫) সান্টু—বেকার যুবক
৬) রিমলি—সান্টুর প্রেমিকা
৭) মিঠাই—রিমলির বান্ধবী
৮) মিলন – মনিকার বাবা
৯) প্রতিভা – মনিকার মা
১০) রাকেশ—সুমনের বন্ধু

প্রথম দৃশ্য
 
{মধ্যবিত্ত বাড়ির ড্রয়িং রুম কাম ডাইনিং রুমের চায়ের টেবিলে সুমন আর মনিকা | সুমনের পরনে বারমুডা টি শার্ট আর মনিকা হাউসকোট পরে আছে | চা খাওয়া শেষে সুমন চামচ দিয়ে কাপ প্লেট বাজিয়ে ঝুমুর গান গাইছে, মনিকা হাতের মোবাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছে জয়তী চক্রবর্তীর গলায় “বরিস ধরা মাঝে শান্তির বারি” |}
 
সুমন— লালে লাল পলাশবন/মন হল আজ উচাটন/মন মেতেছে মহুল ফুলের বাসে গো/আমার মন মেতেছে মহুল ফুলের বাসে/ও মোর সজনী, গোপনে সে আমায় ভালবাসে গো/গোপনে সে আমায় ভালোবাসে | তার ভালবাসার নাই ঠিকানা/যখন তখন আনাগোনা, থাকে আশেপাশে গো/থাকে আশেপাশে | মন মেতেছে মহুল ফুলের বাসে গো/মন মেতেছে মহুল ফুলের বাসে | ও সজনী গোপনে সে আমায় ভালবাসে গো/গোপনে সে আমায় ভালবাসে |
 
মনিকা—ওঃ সুমন! থামবে? এসব কি হচ্ছে? শান্তির বারির মধ্যে গোমূত্র দিয়ে দিলে! সকালবেলায় কি আজেবাজে গান গাইছ? কি যেন লাইনটা গাইলে—অ্যাই কি গাইছিলে? কি একটা ভালোবাসার কথা বলছিলে?
 
সুমন—(উচ্চস্বরে হেসে) ও হো—হো—শুনবে তুমি? দুর্দান্ত গান, মনি দুর্দান্ত গান--- গোপনে সে আমায় ভালোবাসে গো/ গোপনে সে আমায় ভালোবাসে |
 
মনিকা—(উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাতে কান চাপা দিয়ে) থামো, থামো বলছি | যত্ত সব আজেবাজে গান | এটা কোনো গান হল? কোথা থেকে এইসব সস্তা, চটুল গান আমদানি করো? নাকি এ তোমার মনের কথা | অ্যাই ঠিক করে বলতো কি ব্যাপার! ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো নাকি? দাঁড়াও দাঁড়াও মনে পড়েছে সেদিন বলেছিলে তোমাদের অফিসে দারুণ স্মার্ট, সুন্দরী একজন জয়েন করেছে | তুমি কি তার কথা বলছো?
 
সুমন— (ঠক করে টেবিলে কাপ নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াবে) এটা কি বাড়ি? নাকি স্কুল? খালি জেরা আর জেরা, জেরায় জেরায় একেবারে জেরবার হয়ে গেলাম | রবিবার ছুটির দিন, চা খেতে খেতে দোলা রায়ের একটা ঝুমুর গান গাইছি সেটাও সহ্য হলনা | অবশ্য ঝুমুর গানের কথা তোমাকে বলে লাভ নেই কিছু | এসব বিষয়ে তোমার কোনো ধারণাই নেই | ধুস্ থাকো তুমি আরাম করে, চোখ বুজে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনো | আমি চললাম |
 
মনিকা— (চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে সুমনকে বলবে) চললাম, চললাম মানে? কোথায় চললে চাঁদু? খবরদার! সকালে আমার মাথাটা গরম করে দিওনা | বাজারটা কে করবে শুনি? দাঁড়াও, এক পা-ও নড়বে না | আমি ফর্দ আর ব্যাগ নিয়ে আসছি | (মনিকা ভেতরে চলে যাবে)
 
সুমন--- (স্বগোতক্তি করবে) নাঃ! কাটতে পারলাম না | একটা দিন ও নিজের মত করে এনজয় করতে পারলাম না |
 
মনিকা---- (ফর্দ আর দুটো বড় বড় ব্যাগ এনে সুমনের হাতে ধরিয়ে দেবে) এই নাও, যা লেখা আছে সব ঠিকমত আনবে |
 
সুমন— (ফর্দ খুলবে, বিরাট লম্বা ফর্দ দেখে চমকে উঠবে) ওরে বাবা! এ যে বিরাট লিস্টি | এটা কি বিয়েবাড়ির ফর্দ লিখেছো নাকি? আমি এত সব আনতে পারবোনা | রবিদাকে হোয়াটস আপ করে দাও, পাঠিয়ে দেবে | জাস্ট মাটনটা এনে দিয়ে যাচ্ছি | আমার কাজ আছে, অমিতদার বাড়ি যাবো |
 
মনিকা— (মুখ ভেঙ্গিয়ে) বা, বা, বা বেশ বললে! পারবো না | আর রবিদার কথা বলছো? তুমি কি ভেবেছো আমি কল করিনি? রবিদার মা বাথরুমে পড়ে গেছে, তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করছে তাই দোকান খোলেনি |
বাজার তাহলে কে করবে? আমি? কান খুলে ভালো করে শুনে নাও, যেখানে খুশি সেখানে যাও কিন্তু তার আগে বাজার করে তবেই যাবে | তুমি ভালো করেই জানো, আমার কথা না শুনলে কি হবে?
 
সুমন— কি হবে মানে? কি হবে? তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো নাকি?  
ওই একটা কাজই তো পারো, কিছু হল কি না হল ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি হাঁটা |
 
মনিকা—না মশাই, আজ আর বাপের বাড়ি যাচ্ছি না | আর লাঞ্চ করতে হোটেলেও যাচ্ছি না | আজ তোমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি আসছেন, অতএব শ্বশুরের সুপুত্র লিস্ট মিলিয়ে চটপট বাজারটা করে আনো | অবশ্য যা ডোজ দিলাম
(হেসে গড়িয়ে পড়বে)  না গিয়ে উপায় আছে? তোমার দৌড় আমার জানা আছে সুমন বাবু! বলে কিনা বাজার যাবেনা! হি—হি—হি--- (হাসি)
(রাগে গজগজ করতে করতে সুমন ব্যাগ আর ফর্দ নিয়ে বেরিয়ে যাবে) (নেপথ্যে বাইক স্টার্ট দেবার শব্দ)
সুমনা--- (স্বগোতক্তি) কিন্তু এত বেলা হল মিনার মা তো এখনো কাজে এলোনা! রবিবার দেখে সেও কি ডুব দিল নাকি? আর একটু পরেই তিতিরকে নিয়ে মা বাবা চলে আসবে | কিচ্ছু কাজ হয়নি, জলখাবার করতে হবে | ধ্যাত্ ভাল্লাগেনা | (মঞ্চ থেকে চলে যাবে)
 
(দ্বিতীয় দৃশ্য)
 
{মনিকার বাবা মা মিলন বাবু আর প্রতিভা দেবী নাতনি তিতিরকে (পাঁচ বছর বয়স) নিয়ে বড় বড় দুটো ট্রলি ব্যাগ নিয়ে মঞ্চে{গ্রিল ঘেরা বারান্দা} ঢুকবে |}
 
তিতির— (হাতে একটা বার্বি ডল) মা—মা—ও মা, মা মা---আ---
 
মনিকা— (ঘর থেকে তড়িঘড়ি বেরোবে, নাইটিতে হাত মুছতে মুছতে ) ও মা! তোমরা এসে গেছো? (মা বাবাকে প্রণাম করবে) |
 
 তিতির—আমিও এসেছি | তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না? (মুখ ঘুরিয়ে থাকবে)
 
মনিকা—তাইতো, তাইতো! আমি তো দেখতেই পাইনি | কোথায়-- কোথায় আমার তিতু সোনা! (কানামাছি খেলার মত ভঙ্গি করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরবে |) এইতো আমি পেয়ে গেছি আমার সোনা মাকে | 
 
তিতির—আমি কথা বলবো না তোমার সঙ্গে, আমার বেবিকে একটুও আদর করলে না তুমি | তোমার সঙ্গে আড়ি-আড়ি-আড়ি |
 
মনিকা—কই কই কই তোমার বেবি? কি সুন্দর! এটা কে দিয়েছে তোমায়? দিদুন? (তিতির মাথা নাড়বে) উ—উ—উ—উম মা | এই তো কত্ত আদর করে দিলাম তোমার বেবিকে | এবার তুমি খুশি হয়েছ? বেবিকে নিয়ে একটু খেলা করো, আমি দিদুন-দাদানের সঙ্গে কথা বলি | (তিতির মায়ের হাত ছাড়িয়ে মঞ্চের একপাশে বসে পুতুল খেলবে)
 
প্রতিভা—--মনি সুমন কই রে! তাকে তো দেখতে পাচ্ছিনে |
 
মিলন--- দেখতে পাবে কি করে? দেখো হয়তো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে | যা কুঁড়ে জামাই তোমার! তখন পই পই করে বলেছিলাম, ও ছেলে একটা মাকাল ফল, কোনো গুণ নেই, তা তোমরা মা-মেয়ে জামাইয়ের রূপ দেখে পাগল হয়ে গেলে | এখন বোঝো!
 
প্রতিভা— খবরদার! একদম বাজে কথা বলবে না | বুড়োর কথার ছিরি দ্যাখো, বলে কিনা মা-মেয়ে জামাইয়ের রূপ দেখে--- মাগো মা! এ কথা শোনাও পাপ |
 
মিলন--- পাপ? পাপের কি হল? বলোনি, বলোনি তুমি? আহা! কি সুন্দর কার্তিকের মত ফিগার!
 
প্রতিভা—হ্যাঁ বলেছিলাম, বলেছিলাম | তা ভুলটা কি বলেছিলাম শুনি! জামাই আমার রূপে কার্তিক | তুমি যখন আমায় বিয়ে করেছিলে অসুরের মত চেহারা ছিল তোমার | আমার হাতে পড়ে তবে তো শ্বশুর হলে!
 
মিলন--- অসুর থেকে শ্বশুর! মাঝখানের চ্যাপ্টারগুলো বেমালুম গায়েব করে দিলে! এই—এই—জন্যে তোমার সঙ্গে কোনদিন---
(তিতির দাদান-দিদুনের ঝগড়া শুনে ভয় পেয়ে কেঁদে মাকে জড়িয়ে ধরবে )| (মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মনিকা আদর করবে)
 
মনিকা--- আঃ মা | থামো তোমরা, এসেই শুরু করে দিলে | সুমন মোটেও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে না, বাজারে গেছে | তোমরা এখন চলো, হাত মুখ ধুয়ে জলখাবার খাবে | লুচি আলুরদম করেছি | আর বাবা তোমাকে বলছি আগেরবারের মত পালাই পালাই করবে না | দু’দিন থাকবে |
 
 মিলন— দু’দিন কিরে! এবার তো আমরা থাকবো বলেই এসেছি | দেখছিস না, কতগুলো লাগেজ গুছিয়ে এনেছে তোর মা |
 
মনিকা--- থাকবে মানে? ক’দিন?
 
মিলন--- কদিন কিরে? বলতে পারিস বছরের বেশিরভাগ সময়টা তোদের সাথে কাটাবো | একেবারেই যে বাড়ি যাবোনা, তা নয় | বাড়িতে ভাড়া বসিয়েছি, খোঁজ খবর না করলে তারা চেপে বসবে | জবরদখল করাও বিচিত্র নয় | তাই--- মাঝে মাঝে---
 
প্রতিভা— হ্যাঁ রে মনি, এবার আমরা সব গুছিয়ে এনেছি | প্ল্যান প্রোগ্রামও রেডি | তোর বাবা বলল, তোদের দুটো ঘর বলে আমাদের এখানে থাকাই হয়না | একটাতে তোরা থাকিস, আর একটাতে তিতির দিদিভাইকে পড়াতে আসে, ছবি আঁকাতে, নাচ গান শেখাতে | তাই—
 
মনিকা—(হতভম্ব হয়ে) তাই? তাই কি করবে? কি প্ল্যান করেছো?
 
মিলন— তাই এবার তোদের শোবার ঘর লাগোয়া আর একটা ঘর তৈরী করবো | দুটো ঘরের মাঝখানে দরজা থাকবে | তাহলে আর ব্যালকনি দিয়ে তোদের ঘরে যেতে হবেনা | কাল থেকেই রাজমিস্ত্রি আসবে | প্ল্যান, এস্টিমেট সব রেডি | সুমনকে কিচ্ছু করতে হবেনা | অফিস থেকে পারসোনাল লোন তুলে আমার হাতে দিলেই হবে | কোনো ব্যাপারে তোদের মাথা ঘামাতে হবেনা | তোদের কিচ্ছু চিন্তা করতে হবেনা | তোর মা যতই আমাকে বুড়ো বলুক আমি এখনো সুমনকে বলে বলে গোল খাওয়াতে পারি | বুঝলি? এই দ্যাখো, হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলি কেন মনি? নে চল চল | ওদিকে লুচি ঠান্ডা হয়ে গেল! চলো দিদিভাই, তাড়াতাড়ি চলো | (নাতনিকে নিয়ে দাদু দিদা মঞ্চ থেকে চলে যাবে)
 
মনিকা— (মাথায় হাত দিয়ে) হা ভগবান! বাবা এসব কি বলছে? আমাদের ঘরের পাশে, আবার মাঝখানে দরজা! ইমপসিবল, এটা হতেই পারেনা | সুমন আসার আগেই বাবার প্ল্যান বাতিল করতে হবে, নাহলে বাবা সুমনকে ঠিক রাজি করিয়ে ফেলবে | সে তো আবার শ্বশুরকে অসুরের মতই ভয় করে | সত্যি সত্যি যদি বাবা ঘর করে আর ওরা এখানে পার্মানেন্টলি থাকে তাহলে বাবা-মাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হবে | ওঃ কি যে করি! আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না | সুমন যে কেন এখনো আসছে না! ( মঞ্চ থেকে চলে যাবে)
 
(তৃতীয় দৃশ্য)
 
{বাজারের চায়ের দোকানে ভাঁড়ে চা খেতে খেতে সুমন, রাকেশ গল্প করছে}
 
রাকেশ— সত্যি এবারের প্যারালিম্পিক্স দারুণ এনজয় করেছি | ভারত অতগুলো পদক পাবে জাস্ট ভাবা যায়নি | সরকারের উচিত ক্রিকেট ক্রিকেট না করে এদিকে একটু বেশি করে নজর দেওয়া |
 
সুমন— একদম ঠিক বলেছ রাকেশদা | গ্রামের কত ছেলে মেয়ের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও মাঝপথে সব বন্ধ করে দিতে হয় শুধুমাত্র অভাবের জন্য | আমাদের শিলিগুড়ির মেয়েটা! কি ট্যালেন্ট! অথচ অফ সিজনে চা বাগানে কামিন খাটে | এই করলে কি কনটিনুইটি থাকে?
 
রাকেশ—হান্ড্রেড পার্সেন্ট কারেক্ট বলেছিস | তুই অত দূর যাচ্ছিস কেন? আমাদের বাজারেই মাছ বিক্রি করতো – কি যেন নাম--- আচ্ছা ছাড়, ওসব কথা থাক এখন, আমাদের সেই প্ল্যানটার কি হলো?
 
সুমন—কোনটা বলোতো? হ্যাঁ—হ্যাঁ মনে পড়েছে | হা-হা-হা-- অপারেশন মন্দারমণি | সে তো দেরী আছে, কিন্তু একটা প্রবলেম —
 
রাকেশ— সুমন, নো-নো, ওসব প্রবলেম ট্রবলেম গুলি মারো | বাড়িতে এই ট্রিপ নিয়ে বৌয়ের সাথে নো ডিসকাসন | সারাক্ষণ ল্যাংবোটের মত লেপ্টে আছে সব | এবার শুধু আমরা চারজন, আমি, তুই, অর্ণব, নিলাদ্রী | একদম কলেজ লাইফের মত, খানা পিনা একেবারে জমিয়ে মস্তি! হা—হা—হা—
 
সুমন— এই রাকেশদা, খুব দেরী হয়ে গেল | আমি যাই – বাজারটা এখনো কমপ্লিট হয়নি |
 
রাকেশ --- আরে যাবি—যাবি, অত তাড়া কিসের? এই সুমন, দেখ—দেখ ওটা সান্টু না? সকালেই কি মাঞ্জা দিয়েছে মাইরি! দাঁড়া ডাকি, এই সান্টু--- সান্টু-----
 
সুমন--- রাকেশদা আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ | আজ সত্যিই একটু তাড়া আছে |
 
রাকেশ--- কিরে, শ্যালিকা আসছে নাকি বাড়িতে? ওহ্ তোর তো আবার কপাল খারাপ, তোর বউয়ের কোনো বোন নেই | বুঝলি সুমন, শ্যালিকা হল ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ | ফ্রিতে চার্ম বেশি | (নিজের রসিকতায় নিজেই হাসবে)
 
সান্টু— (বড় একটা প্যাকেট নিয়ে মঞ্চে আসবে) রাকেশদা কিছু বলবে? আজ একটু ব্যস্ত আছি | বৌদিকে বোলো আমি নেক্সট উইকে কাজটা শিওর করে দেবো |
 
রাকেশ— আচ্ছা, আচ্ছা সে বলে দেব’খন | কিন্তু তোর কি ব্যাপার! সকালেই এত মাঞ্জা দিয়ে চললি কোথায়? ব্যাগে কি আছে রে? হেব্বি সেন্টু বের হচ্ছে! (সান্টুর চুলে হাত দিয়ে) পুরো শারুখ খান লাগছে মাইরি | কিন্তু কিছু একটা চেপে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে | লগতা হে কুছ গড়বড় হ্যায় |
 
সান্টু— কি যে বলোনা রাকেশদা! গড়বড় আবার কি! সুমনদা যাবে? চলো তোমার বাইকেই যাই | (ব্যস্ত হয়ে চলে যাবে)
 
সুমন—ঠিক আছে চল | এই নে চাবি, গাড়ি স্টার্ট দে | চলি গো, রাকেশদা |
 
রাকেশ— যাবি? কিন্তু বুঝলি সুমন, কেস ঠিক লাগলোনা | ডাল মে কুছ কালা হ্যায় | আরে রেশন ডিলার ঘনশ্যাম গোলদারের মেয়েটাকে কব্জা করেছে ব্যাটাচ্ছেলে | ওই রিমলির সব ভালো, একটু তোতলা আছে এই যা | জপিয়ে জাপিয়ে বগলদাবা করতে পারলেই রাজত্ব রাজকন্যা সব ওর | ব্যাটা কোটি টাকার লটারি পেয়ে যাবে | কিন্তু এত সকালে কোথায় যাচ্ছে কোথায়? নাঃ পাত্তা লাগাতে হচ্ছে | গন্ধটা ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না | তোর বাইকেই তো যাচ্ছে, নোটিশ করিস |  
 
সুমন— করবো, করবো | তুমি পাত্তা লাগাও রাকেশদা, জানতে পারলে আমায় জানিও | আমি চললাম | বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসবে |
(মঞ্চ থেকে দু’জনেই চলে যাবে)
 
(চতুর্থ দৃশ্য)

(মনিকার শোবার ঘর | স্নান করে শাড়ি পরেছে, চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মায়ের সঙ্গে কথা বলছে | তিতির একগাদা পুতুল বিছানায় ছড়িয়ে খেলা করছে)
 
মনিকা— দেখলে মা তোমার জামাইয়ের কান্ডটা দেখলে? এতখানি বেলা হল, বাবুর এখনো বাজার সেরে বাড়ি ফেরা হলনা | পুরো বাজার উঠিয়ে আনলেও তো এত সময় লাগবেনা |
 
প্রতিভা— আমিও তো তাই ভাবছি, কি অত বাজার করছে! এত বেলা হল, ছেলেটা টিফিন করেনি | এরপরে পিত্তি পড়ে যাবে তো! মনি সুমন কি বাইক নিয়ে বেরিয়েছে?
 
মনিকা— হ্যাঁ, তা তো গেছেই | বাইক ছাড়া বাবু এক পা চলতে পারেন না | আসলে পক্ষীরাজে না চড়লে হিরো হবেন কি করে? মাঝে মাঝে পাড়ার সুন্দরী দিদি বৌদিদের লিফ্ট দিতে হবেনা?
 
প্রতিভা— মনি এসব কি হচ্ছে? মুখটাকে লাগাম দাও | পুরুষমানুষের পিছনে সারাদিন খ্যাঁচ খ্যাঁচ করতে নেই, তাহলে তার মন তো অন্যদিকে যাবেই | তারপরে যদি আবার সুমনের মত হ্যান্ডসাম পুরুষ হয়!
 
মনিকা— মা—আ--তুমিও মুখে লাগাম দাও | বাবা ঠিকই বলে মাঝে মাঝে তুমি ভুলে যাও সুমন তোমার জামাই, ছেলের মত |
 
প্রতিভা— ছেলের মত কি রে! ছেলে বল, কিন্তু যাই বলিস মনি আমার সুমনের জন্যে খুব চিন্তা হচ্ছে | মার্কেটে যা ভীড়! তোর আক্কেলটা কি বলতো, ছেলেটাকে এতক্ষণ একটা ফোন করিসনি?
 
মনিকা—কাকে ফোন করব মা? ফোন নিয়ে গেলে তো? সকালবেলাতেই আমার সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে ফোন না নিয়েই বাবু গজগজ করতে করতে বাইকে স্টার্ট দিলেন |
 
প্রতিভা—তোকে কতবার পইপই করে বলেছি, কোথাও বেরোনোর সময় ঝগড়া করবিনে, পেছনে ডাকবিনে | তা সেসব কথা তো তোর কানেই যায়না | এখনো এলোনা, ছেলেটা আবার অ্যাক্সিডেন্ট ফেন্ট করে বসলো না তো!
 
মনিকা— (চীত্কার করে উঠবে) মা---- থামো | এসব কি বলছো তুমি?
 
মিনার মা— (মঞ্চে ঢুকবে) আরে বাবা, ওসব কিচু হয়নিকো | দাদাবাবুকে দেখলাম কোতায় যেন যাচ্চে, গাড়ির পেছনে ওই ছোড়া সান্টু বসে আচে |
 
মনিকা—দেখলে মা দেখলে, তুমি বলছিলে কি না কি হয়েছে | একবার বাইরে বেরোতে পারলেই হয়, আড্ডা, আসর বাসর করে তবে তিনি বাড়ি আসবেন |
 
মিনার মা— (মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসবে) ও কি বললে গো বৌদি? বাসর করলি তুমার সাতেই করবে, অন্য জাগায় যাবে কেন? আমার দাদাবাবুর কি চরিত্তির খারাপ নাকি? তাই না মাসিমা, কতাডা ঠিক বলিনি?
 
মনিকা— হয়েছে, আর মাসিমাকে সাক্ষী করতে হবেনা | বেলা দশটায় এসে আর ডায়লগ দিতে হবেনা? তোমাকে যে কাল অত করে বলে দিয়েছিলাম তিতিরকে নিয়ে মা বাবা আসবে,একটু আগে এসো | সে কথা বুঝি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছো?
 
প্রতিভা— সত্যি মিনার মা, গেরস্ত বাড়িতে এত বেলা পর্যন্ত বাসি ঘরদোর ফেলে রাখলে অমঙ্গল হয় | এক ঘন্টা আগে আসতে পারোনা!
 
মিনার মা—  জানি মাসিমা সপই জানি | কিন্তু আমার তো দুটোই হাত না কি? ভগমান তো আমারে মা দুগ্গার মত দশটা হাত দেয়নিকো | আবার এক বাড়ি কাজ করলি তো পেট চলেনা | পাঁচ বাড়ি খেটি খেতি হয় |
 
সুমনা—পাঁচ বাড়ি? মিথ্যে কথা বোলোনা মিনার মা | আট বাড়ি কাজ করো তুমি | দিনদিন কাজ বাড়িয়েই যাচ্ছ | সামাল দিতে পারছোনা, তবুও |
 
মিনার মা--- দেখো বৌদি, পিন করি কতা বোলোনি | মাগনায় তো তোমরা আমারে কেউ মাইনে দাওনা |  আমার ক্ষ্যামতা থাকলি আট কেন ষোলো বাড়িতে কাজ করবো | তুমরা কি আমারে মাইনে বেশি দিবা? তা য্যাকন দিবা না ত্যাকন অত কতা কেন? তুমাদের না পুষায় অন্য লোক দেকে নাও | মিনার মা অত কতা শুনতি রাজি না, এই আমি পস্কের করে বলে দিলাম | গতর থাকতি আবার কাজের অভাব?
 
মনিকা— আঃ—মা তোমার অত কথা বলার দরকার কি? একটু চুপ করে থাকতে পারোনা! দেখছো, আমি কথা বলছি | মায়ের কথায় কিছু মনে কোরোনা মিনার মা | মায়ের বয়স হয়েছে, মাথার ঠিক নেই | (গলায় মধু ঢেলে) মিনার মা তোমার জন্য লুচি আলুরদম রেখে দিয়েছি, আগে খেয়ে নাও তারপরে কাজে হাত দাও |
 
মিনার মা— ও তুমি একন রেকে দাও বৌদি, যাবার সময় একটা টিফিন বাটি করে দিয়ে দিও, ছেলের জন্যি নে যাবো | ছেলেডা নুচি খেতি খুপ ভালবাসে | দুটো রসোগোল্লাও দিয়ে দিওখন | মাসিমা কি আর খালি হাতে মেয়ের বাড়ি এয়েচে? নিশ্চয় বড় হাঁড়ি নিয়ে এয়েচে | মেসোমশাইয়ের তো আবার নজর খুপ উঁচু | (কোমরে কাপড় জড়াতে জড়াতে) আমি যাই, আগে ঘরগুলো পস্কের করেনি | 
 
প্রতিভা—(চাপা গলায়) দেখলি মিনু তোর এই মিনার মা কেমন ধড়িবাজ | কেমন কায়দা করে মিষ্টির কথাটা বলল! আর তুই আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে কতগুলো কথা বললি ওকে | মা বুড়ো হয়ে গিয়েছে, মাথার ঠিক নেই | নিজের মাকে কাজের লোকের সামনে ছোট করতে তোর একটুও বাঁধলো না মনি? মিনার মা আমার সম্পর্কে কি ভাবলো বলত?
 
মিনার মা— (চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়াবে) আমারে কিছু বলচ মাসিমা?
মনিকা— (নকল হাসি হেসে) না, না কিছু বলছে না, মা বলছিল মিনার মা খুব পরিষ্কার কাজ করে | থালা-বাসন এমন ঝকঝক করে যে মুখ দেখা যায় | বলছি তোমার ছেলে এখন কেমন আছে গো? সেদিন বলছিলে পেটের ব্যথায় রাতে ঘুমোতে পারেনি |
 
মিনার মা— ভালো আছে বৌদি, ভালো আছে | তুমাদের আশিব্বাদে একন ভালো আচে | আর বোলোনি, ওই নেতুর পাল্লায় পড়ে তেঁতুল গুলা জল, ওই ফুচকা গো, তাই খেয়ে এমন হয়িচিল | ছেলি খেতি চায়নি তাও নেতু জোর করি—কি বলবা বলো, পাড়ার ছেলে কিছু বলাও যায়না | সবার সাথে সদ্ভাব রেকে চলতি হয়! তবে আমিও নেতুর মাকে ছেড়ি দিই নি | চাড্ডি কতা শুনিয়ে দিইচি | বলে কিনা—আমার ছেলের দোষ! ও- মা-গো- উনার নেতু একেবারে ধুয়া তুলসীপাতা! সেসব কতা বলতি গেলি সাতকাহন | যাই আমি কাজ সেরেনি, দেরী হলি উদিকি পাবলোর মা খচে বোম হয়ে যাবিনি | (চলে যাবে)
প্রতিভা— মনি আজ কি রান্না করবি, চল আমি গিয়ে সব্জিগুলো কেটে দিইগে |
তিতির—দিদুন আমিও মাকে হেল্প করবো |
প্রতিভা—তুমিও করবে? সোনা আমার | চল, চল আমরা সবাই যাই |
 
(সবাই মঞ্চ থেকে চলে যাবে)
 
(পঞ্চম দৃশ্য)
 
(ড্রয়িংরুম-- ঘেমে নেয়ে সুমন বাজার থেকে দুটো ব্যাগ নিয়ে ফিরবে)
 
সুমন— মনিকা—মনিকা—ও মাই ডার্লিং—দেখো আজ তোমার ফেভারিট জিনিস এনেছি |
 
প্রতিভা— (এক গ্লাস নুন চিনির জল এনে) বোসো বাবা বোসো, ফ্যানের তলায় বসে খানিক জিরিয়ে আগে এই নুন চিনির সরবতটা খেয়ে নাও বাবা | ইস্ একেবারে ঘেমেনেয়ে গেছে ছেলেটা! বাইরে যা রোদ্দুর! (আঁচল দিয়ে সুমনের মুখ মুছিয়ে দেবে)
 
মনিকা— মা! ও কি করছো? তোমার আঁচল দিয়ে ওর মুখ মুছিয়ে দিচ্ছো কেন? সরো, সরো আগে আমাকে  মাটনের প্যাকেটটা নিতে দাও, ধুয়ে দই দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখি | (ব্যাগ ঘাঁটবে, ফুলের মালা পাবে) এসব কি এনেছ সুমন? মাটন কই? ও মা মাগো! তোমার জামাইয়ের কান্ড দেখো, পাঠালাম মাটন আনতে, উনি সকালেই গোড়ের মালা নিয়ে হাজির |
সুমন—কি যা-তা- বলছো মনি? আমি মালা আনতে যাবো কেন? আমি কি বিয়ে করতে যাচ্ছি যে মালা টোপর কিনে আনবো?
মনিকা--- ও মাগো আমার কি হবে গো? এ তো সত্যি সত্যি টোপর নিয়ে এসেছে ---(কান্না)
সুমন—  (জিভ কেটে) ও হো-হো- দারুণ ভুল হয়ে গেছে | মনি, মনি প্লিজ আমার কথাটা শোন একবার—
 ( বিয়ের বেনারসি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রিমলি মঞ্চে আসবে, সঙ্গে ওর বন্ধু মিঠাই)
মিঠাই— সুমনদা মালা টোপর তুমি নিয়ে এসেছো?
প্রতিভা—  এই মেয়ে, তুমি কে? তোমার সঙ্গে এই মেয়েটাই বা কে? মুখটা অমন করে ঢেকে রেখেছে কেন? মালা টোপর মানে?
 
মিঠাই— ও রিমলি, আমার বন্ধু | আসলে আজকে ওর বিয়ে তো তাই লজ্জা পাচ্ছে |
 
মনিকা--- বিয়ে? একেবারে বিয়েতে পৌঁছে গেছো? ও বাবা গো, আমার কি হবে গো—ওরে তিতির রে, তোর বাবা বিয়ে করছে রে!
 
মিঠাই—আপনি ভুল বুঝছেন বৌদি, রিমলির বিয়ে ঠিকই, তবে বিয়েটা---
 
মনিকা—বিয়েটা--- বলো থামলে কেন? বিয়েটা? (রিমলির মুখের ঘোমটা সরিয়ে দেবে) কা-র কা—র সঙ্গে বিয়ে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না | তোমার বিয়ে, টোপর মালা আমাদের বাড়ি | এই রিমলি ঠিক করে বলো কার সঙ্গে বিয়ে?
 
রিমলি— (তোতলাবে) ব—ব—ব—লছি বৌদি, ব---ব---ব--- লছি | স—স---স----স---
 
মনিকা--- (কাঁদবে) ও মাগো আমার এ কি সর্বনাশ হল গো! শুনলে মা, তুমি শুনলে সুমন আবার বিয়ে করছে | এই যে সারাক্ষণ জামাইয়ের সুখ্যাতি করো, দেখলে তো তোমার জামাইয়ের পেটে পেটে কি শয়তানি বুদ্ধি! তিতির রে তোর বাবার আবার বিয়ে | ও মা—গো---
 
সুমন--- মনি কি হচ্ছে এসব? থামো, থামো বলছি | সিন ক্রিয়েট কোরোনা |
 
তিতির--- (হাততালি দেবে) কি মজা! কি মজা! বাবার বিয়ে! কি মজা! ও মা বাবার বিয়ে দেখবো |
মনিকা--- (ঠাস করে মেয়ের গালে চড় মারবে) বাবার বিয়ে দেখবে? করাচ্ছি বিয়ে! (সুমনের কলার চেপে ধরবে)
সান্টু— (হাতে ব্যাগ নিয়ে ঢুকবে) সুমনদা, কি কেলো মাইরি! --- এ কি বৌদি সুমনদাকে মারছেন কেন? কি করেছে সুমনদা?
মনিকা— কি করেছে? যা করেছে তা ভালই করেছে | (টোপর মালা হাতে নিয়ে) তোমার সুমনদা মাটন না এনে এগুলো এনেছে | তিনি বিয়ে করবেন ওই রিমলিকে | তা, তুমি কি বরযাত্রী?
মিঠাই -- না—না এসব কি বলছেন বৌদি? আপনি বুঝতে ভুল করছেন? রিমলির বিয়ে স—স—স—
রিমলি—আ—আ--- আমিও তা---তা---তাই বলছি, আমার বিয়ে স---- স---- স----
সান্টু--- সান্টুর সাথে | আমার সাথে রিমলির বিয়ে | মিঠাই তুমিও রিমলির সাথে থেকে তোতলা হয়ে গেলে?
মনিকা—  ম—ম—ম----মানে?
সুমন— মানে আবার কি? ব্যাগ বদল হয়ে গেছে | সান্টু আমার বাইকে উঠেছিল, ওকে মন্দিরে নামিয়ে দিয়ে আসার সময় ব্যাগ পাল্টে যায় | আর না বুঝে, না জেনে যত্ত সব উল্টো পাল্টা ব্লেম |
প্রতিভা—আমিও তো তাই—ই বলছি, সুমন আমার অমন ছেলেই নয় |
সান্টু--- আপনি থামুন মাসিমা, আমি বুঝিয়ে বলছি |                       
সুমনদা আমাকে মন্দিরে নামিয়ে চলে যাবার সময় আমিই ভুল করে অন্য ব্যাগ নামিয়ে নিয়েছিলাম | সুমনদা চলে যেতেই খেয়াল হলেও কিছু করার ছিলনা | সুমনদা বোধ হয় ফোনটা বাড়িতে ফেলে গেছে, ফোনেও যখন পেলাম না তখন মিঠাইকে ফোন করে বলি রিমলিকে নিয়ে আসার সময় যেন সুমনদার কাছ থেকে মালা টোপর নিয়ে আসে | মাইরি বৌদি, আপনি পারেনও বটে! টোপর আর মালা দেখেই ধরে নিলেন সুমনদা বিয়ে করছে | মিঠাইয়ের ফোন পেয়ে না এলে তো বিরাট কিচাইন হয়ে যেত | নিন আপনার ব্যাগ নিন বৌদি |
রিমলি—আ---মি ---ও---তো তাই বলছি | ব-ব-ব—দি পা-আ-ত্তাই দিচ্ছেনা |
সান্টু--- (রিমলির হাত ধরে) এবার থেকে আর তোমায় কোনো কথা বলতে হবেনা রিমু ডার্লিং, সব কথা আমিই বলবো | চলো মিঠাই, কুইক | (তিনজন চলে যাবে)

ষষ্ঠ দৃশ্য

(সুমন আর মনিকার শোবার ঘর) (মনিকা লুচির প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে, সুমন মুখ গোমড়া করে চেয়ারে বসে আছে )
সুমন— বিরক্ত কোরোনা মনিকা, আমি খাবোনা | আমার খিদে নেই |
মনিকা—মনিকা! তুমি আমায় মনিকা বলে ডাকছো? আমি তো ক্ষমা চাইলাম, বললাম আমার ভুল হয়ে গেছে | এমন ভুল আর কক্ষনো হবেনা | প্লিজ খেয়ে নাও সোনা, তুমি খাওনি বলে আমিও তো এতক্ষণ না খেয়ে আছি | (একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে প্লেট থেকে খাইয়ে দিতে যাবে এই সময় দরজা খুলে ঢুকবে মিনার মা, পিছন পিছন সান্টু, রিমলি, মিঠাই, প্রতিভা, মিলন, তিতির)
সান্টু— আমাদের বাঁচাও সুমনদা, রিমলি বাড়ি থেকে পালিয়েছে সেটা ওর বাড়ির লোক জেনে গেছে | মন্দিরের পুরোহিতকে কিডন্যাপ করেছে রিমলির বাবা | আমাদের বিয়ের কি হবে? এরপরে একবার যদি রিমলির খোঁজ পায় তাহলে আর কোনোদিন আমি ওকে পাবোনা | প্লিজ বৌদি, যেভাবে হোক আমাদের বাঁচান |
মনিকা--- আমি মানে আমরা কি করবো? তোমাদের জন্য আমার সংসার ভাঙতে বসেছে | পুলিস জানতে পারলে তোমাদের সাথে আমাদেরও থানায় নিয়ে যাবে | কে জানে এতক্ষণ হয়তো জেনেই গেছে |
সান্টু--- থানায় নিলেই হল? আমরা দু’জনেই অ্যাডাল্ট | ইয়ার্কি নাকি?
মিলন—তা তোমরা দু’জনেই যখন অ্যাডাল্ট রেজিস্ট্রি করোনি কেন? তাহলে এসব ঝামেলা হতনা | পুলিস তোমাদের চুলের ডগাও ছুঁতে পারতো না |
প্রতিভা--- আমি এটাই বুঝতে পারছিনা, তোমরা আমার জামাইকে এর মধ্যে জড়াচ্ছ কেন? প্রেম করার সময় কি তাকে বলে প্রেম করেছিলে?
রিমলি—না, না আ---আ--- মি এর আগে কো—কো—ক---
সান্টু—চুপ করনা ডার্লিং, তোমাকে আর কোঁকোর- কোঁ করতে হবেনা |
রিমলি--  তু—তু—তুমি আমায় মোরগ বললে? এই বিয়ে ক্যান—ক্যা---ক্যানসেল | চল মিঠাই বা—বা—বাড়ি চল | (মিঠাইয়ের হাত ধরে টানবে)
সান্টু--- (রিমলির হাত ধরে) রিমলি—রিমলি, আমার ইমলি সোনা ফুচকা তেঁতুল জল, অত রাগ করতে নেই সোনা | তোমার বাবা আমাদের ধরতে পারলে কচুকাটা করবে | এখন ভাবো পুরুত কি করে পাবো |
মনিকা—বেরিয়ে যাও—এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও | তোমাদের জন্য আমার বিয়ে ভেঙে যেতে বসেছে, আর আমার সামনে রোমান্টিক সিন হচ্ছে?
প্রতিভা--- একদম ঠিক বলেছিস মনি | বের করে দে এদের | আমার জামাই-মেয়ের সংসার ভেঙে তাদের চোখের সামনে সোহাগ হচ্ছে?
সান্টু—(হাতের মুঠি পাকিয়ে) দেখুন মাসিমা, এখন মটকা গরম হয়ে আছে, এর মধ্যে উল্টো-পাল্টা কমেন্ট করবেন না | রিমলি এখানে থাকলো, আমি সুমনদার বাইক নিয়ে বেরোচ্ছি পুরুত আনতে |
মিলন--- (ধুতি পরে পইতে গলায় দিয়ে আসবে) কোথায় চললে? বাইরে বেরোলেই পুলিস খপ করে ধরবে | বোসো এখানে, মনি দুটো আসন পেতে দে | এই মিলন সান্যাল থাকতে বিয়ে হবেনা মানে? বিয়ে আমি দেবো | তোমার ওই মন্দিরের পুরুতের বদলে মন্ত্রটা ঢের ভালো জানি | মনির মা, হাঁ করে দাঁড়িয়ে না থেকে উলু দাও |
প্রতিভা—দেখ মনি, তোর বাবার কান্ড দেখ | বুড়োর ভীমরতি হয়েছে |
মিনার মা--- তুমি চুপ করো তো মাসিমা, দেকচ দু- দুটো জেবন নিয়ে টানাটানি চলচে! কে বাঁচে, কে মরে তার ঠিক নেই | একন অত কতা ভাবার সময় আছে নাকি? মেসোমশাই ভালো কাজই করচে | ও বৌদি হাঁ করে দেকচ কি? সিন্দুরের কৌটোডা নিয়ে এসো দিকি |
তিতির—ও মা বাবার বিয়ে কখন হবে? আমি বাবার বিয়ে দেখবো |
মিলন--- বাবার বিয়ে দেখতে নেই সোনা | কাকার বিয়ে দেখো | আজ তুমি হলে ‘নিতকনে’ | যাও বাবার কোলে চড়ে কাকার বিয়ে দেখো | কি হল সান্টু, আরে স্ট্যাচু হয়ে গেলে নাকি? মালা পরাও রিমলিকে | এই যে মেয়ে, মিঠাই হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? মিঠাই পরে খাবে, আগে বিয়েটা হোক | (সব কুশীলব মঞ্চে থাকবে, মালা বদল হবে রিমলি আর সান্টুর) (মিনার মা উলু দেবে, প্রতিভা শাঁখ বাজাবে) (মনিকাও হাসিমুখে সুমনের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলবে)
মিলন — (মন্ত্র উচ্চারণ করবে) “যদিদং হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম”)
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment