ডেট এক্সপায়াকর্ড

ছবি  : ইন্টারনেট 

ডেট এক্সপায়াকর্ড 

উত্তম চক্রবর্তী

রাত তখন দেড়টা হবে। অশোক ব্যানার্জি তার পুরানো বাজাজ স্কুটারটা নিয়ে মেডিক্যাল সপ বন্ধ করে সরু গলির সর্টকাট রাস্তাটা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। অশোক ব্যানার্জির বাড়ি সেই নিমতায়। ওর বাবার স্থাপন করা ওষুধের দোকান নাগের বাজার সাতগাছিতে। অশোক ব্যনার্জির দুজন কর্মচারী, একজন থাকে কাছেই কলতলাতে, আরেক জন থাকে বি টি রোডের কাছেই কাশিপুরে। একটু আগেই তিনজন মিলে দোকানের সার্টার বন্ধ করে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। অশোক থাকে নিমতার পাইক পাড়াতে। পান্তু পাড়া দিয়ে এসে সুভাষ পল্লি থেকে এই রাস্তাটা ধরলে ওর অনেকটা সর্টকাট হয়, আর বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছতে পারে অশোক।  

আজ বিকেল থেকেই অশোক ব্যানার্জির মনটা ভালো না। ওর পঞ্চাশ ওষুধের  দোকানে অশোক হয়ত আজ পনের বছর যাবত বাসছে, কিন্তু এতোদিনে  এই আজই অশোক প্রথম শুনল যে ওদের দোকানের ইনজেকশন নিয়ে গিয়ে অসুস্থ এক বৃদ্ধা পেসেন্টকে দেবার আধ ঘণ্টার মধ্যেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। গোরাবাজারের প্রায় পঞ্চাশ ষাট জন যুবক এসে কি ঝামেলাটাই না করল আজ। দোকানের সামনের কাঁচের পার্টিশন ভেঙে, টেবিলের ওপরের কাঁচ ভেঙ্গে , ওষুধের শোকেসের কাঁচ ভেঙ্গে দিয়ে সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা তখন। ভাগ্য ভাল পাশের দোকানের দাস কাকু সময় মত পুলিশে খবর দেওয়ায় পুলিশ এসে অবস্থা সামাল দিয়ে  দোকান বন্ধ করে ওদের বাড়ি ফিরতে সাহায্য করে। নইলে হয়ত একটা খুনখারাপি হয়ে যেত আজ অশোকের দোকানে।

অশোক ব্যানার্জির বয়স এখন চল্লিশ, আগে চাকরী করত। বাবা মারা যাবার পর অশোকই এই দোকানের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। অশোকের দিদির বিয়ে হয়েছে শিলিগুড়িতে। বাড়িতে শুধু বিধবা মা , অশোক, ওর স্ত্রী সুমী ও একমাত্র ছেলে চঞ্চল। চঞ্চল এখন ক্লাস এইটে পড়ছে, পড়াশুনাতেও খুব ভালো। অশোক অন্ধকার সরু গলিটাতে ঢুকবার পর থেকেই শুনতে পাচ্ছিল পিছনে হাওয়াই চটি পরে কেউ আসছে। অশোক দুবার তাকে জায়গা দেবার জন্য গলির একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ল, কিন্তু পিছনে অন্ধকারে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেল না। ভাবল হয়ত মনের ভুল। অশোক আবার ওর স্কুটার নিয়ে এগিয়ে যায়। রাত দেড়টার সময় স্বাভাবিক ভাবেই পথে একটা লোকও নেই। শুধু কয়েকটা কুকুরের মড়া কান্না শোনা যাচ্ছিল। অশোক শুনেছে কুকুরের কান্না  নাকি অশুভ লক্ষন। অশোকের একটু ভয় ভয় করতে থাকে।

হটাত সেই সময়েই স্কুটারটা ভস ভস শব্দ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার সরু গলির ভিতর অশোক স্কুটারটাকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে বেশ ভাল করে এদিক ওদিক চেক করে দেখল সামনের চাকায় একটা সাপ জড়িয়ে মরে আছে। অশোক একটু ঘাবড়ে গেল। এই এতো রাতে এখানে সাপ এলো কোথা থেকে ? এটাকে এখন চাকা থেকে সরাতে হবে। অশোক এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে অনতিদূরে একজন বিধবা বয়স্কা মহিলা সাদা থান পরে দাঁড়িয়ে ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। অশোক ভাবল আসে পাশের বাড়ির কেউ হয়ত কোন কারণে বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়। জিজ্ঞাসা করল,’ আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন মাসীমা ?’

মহিলা ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বললেন,’জানিস না, ওষুধের এক্সপায়ারি ডেট চলে গেলে কোম্পানিকে ফেরত দিতে হয় ? আজ তোর অপদার্থতার জন্য নাতির বিয়ের ঠিক আগেই আমাকে বেঘোরে মরতে হল। তুই কি বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবি ভেবেছিস ?’

পরদিন সকাল বেলা ঐ গলির ভিতরেই অশোকের স্কুটার ও তার পাশেই ওর মরদেহ পাওয়া গেল। কিন্তু কোন সাপ বা কিছুই ছিল না ওর স্কুটারের চাকায়। পুলিশ পোস্ট মর্টেম করে জানায় বিষাক্ত সাপের কামড়ে অশোক মারা গেছে। ওখানেই গলির ভিতর একটা মনসা মন্দিরও নাকি আছে।    

...(সমাপ্ত)...