![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
একুরিয়ামের রুপোলি মাছ
তৈমুর খান
—আরে বাস্! এত খাবার!
—এমন আর কী! এই তো কয়েকখানা লুচি আর আলুর দম। গতকালের একটু বাসি পায়েস।
—আহা, তাই দেখুন লুচিগুলো কত ফুলকো। আলুর দমটা মাংসের থেকেও দামি। আর পায়েসটা যেকোনো মিঠাইকে হারমানাবে।
—তোমাকে এসব ভালো লাগছে জেনে খুশি হলাম। আমি তো গ্রামেরই মেয়ে। তোমার দাদার সঙ্গে বিয়ের পর কলকাতায় আছি। কতরকম রান্না করি তোমার দাদার জন্য। কিন্তু সেসব উনি ছুঁয়েও দেখেন না। অনেক রাতে বাড়ি ফিরে এসে বলেন, বাইরেই খেয়ে নিয়েছি।
—দাদা বাইরে কী খান?
—তা জানি না ভাই। সারারাত কোনো সাড়াশব্দ পাই না। সকাল ১০ টা নাগাদ বিছানা ছেড়ে আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। বলেন, বাইরেই খেয়ে নেব।
—সত্যিই আপনাদের জীবনযাত্রা দেখে অবাক হচ্ছি। আমি তো এসেছিলাম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। একরাত্রি কাটিয়ে গেলাম। দাদার সঙ্গে ফোনেই কথা হয়েছিল। চাক্ষুষ দেখা হল না।
—তুমি আর কী দেখবে ভাই! একবেলা শুধু খাবারটুকুই খেলে। আরও কতকিছু তোমাকে খাওয়ানোর ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তা আর হল কই?
—থাক্ বউদি, আবার যদি চাকরি পেয়ে কোনোদিন আসি তখন না হয় খেয়ে যাব। আপনার মতো লক্ষ্মীমান্ত বউ যার ঘরে সে তো ভাগ্যবান!
—সে আর বোঝে ক'জন? তোমার দাদা যদি একবারও বুঝত!
কথা বলতে-বলতে বউদির দু'চোখ ছলছল করে উঠল। আমার দূরসম্পর্কের দাদা কাঞ্চন। একই গ্রামের মানুষ আমরা। চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারিনি তাই এখানে আসা। বউদিকে দেখে অনেকগুলো প্রশ্নে তাড়িত হলাম। একুরিয়াম ভেদ করে যেন একটি রুপোলি মাছ আমার চোখের সামনে পড়ে তড়পাতে লাগল।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment