1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

দাম্পত্য


ছবি : ইন্টারনেট

দাম্পত্য
        রুচিরা মুখোপাধ্যায় দাস 

- "তুমি নাচটা আবার শুরু করো না, শুচি!"

         শুচিস্মিতার মনে ধাক্কা লাগে কথাটা। ভীষণ রকমের ধাক্কা। আর সেই সঙ্গে অপমান বোধ। এমনটা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। কখনোও না। এমনকি চার বছর আগে ভাস্কর যখন তাকে নাচ ছাড়তে বলেছিল তখনও না। সেদিন শুধুই মনে হয়েছিল, নিজের স্ত্রীকে দমিয়ে রাখতে চায় ভাস্কর। ছুটে গিয়েছিল ঠাকুমার কাছে। ভাস্করকে ছেড়ে। সংসার ছেড়ে। কিন্তু শরীরের ভেতর একটু একটু করে তখন বেড়ে উঠছিল ভাস্করেরই উত্তর পুরুষ। তাই হয়তো সেদিন বেরিয়ে আসতে পারেনি বিয়েটা থেকে! তার দাদা তো মুখের ওপরেই দিব্যি বলে দিয়েছিল -

- " ফিরে যা খুকি। ফিরে যা নিজের সংসারে। জানিসই তো দুদিন বাদে আমিও বিয়ে করবো। শ্বশুর শাশুড়ি নিয়েই আজকাল মেয়েরা সংসার করতে চায় না! সেখানে ডিভোর্সি ননদ...!" শুচিস্মিতা বলেছিল,

-" আমি প্রেগন্যান্ট দাদা। এই অবস্থায় তো ডান্স প্রোগ্রাম করতে পারব না। তুই দুটো বছর শুধু আমাকে একটু... তারপর আমি নিজের মতো বাড়ি দেখে নেব।"

- "তার মানে তুই বলছিস আমি আরো দু'বছর পর বিয়েটা করি?"

চুপ করে ছিল শুচিস্মিতা। কিই বা বলবে! কিভাবেই বা বলবে! ওরে, এ বাড়ি তো আমারও! এ বাড়ির কোনায় কোনায় স্মৃতি আমার! আজ বিয়ের পর এতটাই পর হয়ে গেলাম যে কদিনের ঠাঁইও হয় না! এ কথা শুধু মনেই রয়ে যায় তার। ঠাকুমাও তো সেদিন চুপ করেই ছিল। বরং শুচিকে আদর করে কাছে ডেকে বুঝিয়ে যা বলেছিল তার জন্য সেই মুহূর্তে সে একটুও প্রস্তুত ছিল না। 

- " আয়, আমার কাছে আয় খুকি! তুই এই পোয়াতি অবস্থায় কি করেই বা নাচবি বলতো? তার চেয়ে ভাস্কর যখন চায়না তখন কদিন না হয় বন্ধই রাখনা।"

- " আম্মা! ভাস্কর আমার প্রেগন্যান্সির কথা জানে না। আমি এখনো বলিনি। সুতরাং প্রেগন্যান্সির জন্যে ও আমাকে নাচ বন্ধ রাখতে বলছে সেটা নয়। তাছাড়া ম্যাটার্নিটি লিভ নেয়া আর পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া দুটো সম্পূর্ণ আলাদা।"

- "আমার কথা শোন খুকি! ফিরে যা মা! যে আসছে তার কথাও তো ভাবতে হবে! সে তবে কত ভালোভাবে বড় হতে পারবে। ভাস্কর তো এমনি ছেলে খারাপ নয়! তাছাড়া ওর কত বড় ব্যবসা। কত ঐশ্বর্য।

- "ঐশ্বর্যটাই সব আম্মা!"

- " সব না হলেও অনেকটা! অর্থ কষ্ট যাদের আছে তারাই সে কথা ভালো জানে।"

ঠাকুমার কথা শেষ হতে না হতেই চলে এসেছিল ভাস্করের ফোন।

- "কখন ফিরছ? শুচি! আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো না!"

ব্যাস। ভাস্কর এর ফোন যেন সেই মুহূর্তে আরও শক্তিশালী করে দিল ঠাকুমা আর দাদাকে। শুচিস্মিতা নীরব হয়ে রইল!

                  সেদিন কাউকেই পাশে পায়নি শুচিস্মিতা। গর্ভবতী অবস্থায় একা থাকার শক্তিও পায়নি। তাই চার বছর ধরে জোড়া তালি দেওয়া সম্পর্কের বোঝা সে বয়ে চলেছে। কিন্তু আজ তার মনে হচ্ছে সারা জীবন ভাস্কর তাকে ব্যবহারই করেছে। ভবিষ্যতেও করবে।

                       বিরাট বড় ব্যবসায়ী ভাস্কর। শান্ত, ভদ্র, মিষ্টি স্বভাবের। শেষ ছ'মাস ধরে তার কোম্পানি লকডাউন। জমানো টাকা দিয়ে সংসার চলছে। বাড়িতে পাঁচজন পরিচারিকার মধ্যে মাত্র একজন এখন অবশিষ্ট। অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এমতাবস্থায় শুচিস্মিতাকে নাচ আবার নতুন করে শুরু করতে বলে ভাস্কর। যখন পয়সা ছিল তখন নাচ ছেড়ে দেওয়ার হুকুম! আজ পয়সা কমে এসেছে তাই নেচে পয়সা রোজগারের হুকুম! এমনটাই মনে হচ্ছে শুচিস্মিতার। সে কি পুতুল!

                    ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে ঠাকুমার কাছে বড় হয়েছে শুচিস্মিতা। ঠাকুমাই তার কাছে তাই মায়ের মত। দাদার সাথেও তো কত ঝগড়া, কত মারপিট হতো একসময়। আবার মুহূর্তে ভাবও হয়ে যেত। সময়ের সাথে ঝগড়াঝাঁটি, মান অভিমানের ভাষাও যেন বদলে যায়! বদলে যায় ভালোবাসার রঙ! কী অদ্ভুত জীবন! সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে যায় ধীরে ধীরে! সব সম্পর্ক! ঠাকুমার সাথে সম্পর্কটাই যা বদলায়নি আজও। ঠাকুমা সেই ছোট্টবেলার মতো আজও কোলের কাছে টেনে নেয়। কপালের চুলগুলো সরিয়ে চুমু খেয়ে "আমার ছোট্ট খুকি" বলে আদর করে। ভাবতে ভাবতে শুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে ডোরবেল বাজালো। ভাস্করের কাছ থেকে আঘাত পেয়ে সবার আগে ঠাকুমার কাছেই সে ছুটে এসেছে আজ। দরজা খুলে দিল দাদা। অবাক হয়ে বলে উঠল,

- "কিরে, হঠাৎ চলে এলি যে! কাল রাতে ফোন করলাম। তখন কিছু বললি না তো আসার কথা!" কোন উত্তর দেয় না শুচিস্মিতা। মনে মনে বলে, নিজের বাড়িতে আসতে গেলেও কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসতে হবে নাকি! টুকুন মামার কোলে উঠে আদর খেতে থাকে। শুচিস্মিতা সোজা চলে যায় ঠাকুমার ঘরে। তাকে দেখে অবাক হয়ে যায় ঠাকুমা। তবু মুখে ফুটে ওঠে তার আনন্দের হাসি।

- "ও মা! খুকি তুই! কই টুকুনসোনা কই?"

- "ও দাদার কোলে।"

- "সে তো হবেই। মামা ভাগ্নেতে যে বড় ভাব।"

- "আম্মা..."

- "হ্যাঁ রে, ভাস্কর আসেনি? ওর কোম্পানি খুলেছে?" - "না।"

- "খুলবে খুলবে। অত ভাবিসনি। ঈশ্বর সহায় জানবি।"

- "তোমার নাত জামাইয়ের হঠাৎ ইচ্ছে হয়েছে আমি আবার ডান্স শুরু করি। প্রোগ্রাম করি।"

- "ওমা! এ তো খুব আনন্দের কথা।"

- "আনন্দ! তোমার কি একটুও মনে হচ্ছে না যে ও আমাকে টোটালি ইউজ করছে! এখন ওর রোজগার নেই। তাই ও চাইছে আমি ডান্স করে আবার রোজগার করি।"

- "তোকে কি সে কথা বলেছে ভাস্কর?"

- "দেখো আম্মা, টুকুন তখন পেটে ছিল তাই সেদিন একা থাকার ডিসিশনটা আমি নিতে পারিনি। কিন্তু আজ আর নয়। এই অপমান, এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের বোঝা আমি আর বইতে পারছি না। অথচ দেখো, এই নাচ দেখেই ভাস্কর আমাকে ভালোবেসেছিল! ডান্সের প্রোগ্রাম করতে রাত হয়ে গেলে বিয়ের আগে গাড়ি নিয়ে আমার জন্য ওয়েট করতো। আমায় বাড়ি পৌঁছে দিত। আমায় কত ভাবে নাচের জন্য ইন্সপায়ার করত। এত ভালোবাসা কোথায় যে গেল! এখন আমি শুধুই ইউজ হচ্ছি! তবে আমি আর নিজেকে ইউজ হতে দেব না। একা থাকবো। বাড়ি ভাড়া করে। ডান্স করে ইনকাম করব।"

বেশ কিছুক্ষণরবতার পর শুচিস্মিতা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল ঠাকুমার কাছে। চোখ তার ঝাপসা। ঠাকুমার কোলে শুয়ে জিজ্ঞেস করল,

- "আম্মা! তোমার সাথে দাদুনের সম্পর্কটা খুব সুন্দর ছিল, না গো?"

ঠাকুমা গম্ভীর হয়ে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বলে উঠল,

- "সুন্দর অসুন্দর জানিনে বাছা! ভাঙা গড়াও জানিনে! জোড়া তালি দেওয়া সম্পর্ক - এত কঠিন কঠিন ভাষাও জানিনে! তোর দাদুন সারাদিন বাইরে চাকরি করে পরিশ্রম করতো। আমি সংসার সামলাতুম। দশ দশটা ছেলেপুলে মানুষ করতুম। শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন করতুম। দিনের শেষে এক বিছানায় শুয়ে সম্পর্ক নিয়ে ভাবনার সময় কোথায় আর ছিল! তারও ছিল না! আমারও না!"

- "ঝগড়া হতো না তোমাদের?"

- "খুব হতো! আবার ভাবও হয়ে যেত মুহূর্তে! তবু দুজন দুজনের হাত ছেড়ে আলাদা হবার কথা মনেও আসেনি কখনও। তবে হ্যাঁ। দুজন পরামর্শ না করে, দুজন দুজনের মতামত না নিয়ে, কখনো এক পাও ফেলতুম না কেউ!" 

বলতে বলতে ঠাকুমার চোখ জলে ভরে গেল। চোখের জল সামলে নিয়ে ঠাকুমা আবার বলতে শুরু করলো,

- "মনোমালিন্যের কথা মনে চেপে রাখিসনি খুকি। যে কথাগুলো আজ বলতে আমার কাছে ছুটে এসেছিস, সেগুলো ভাস্করকে গিয়ে বল। মন খুলে ঝগড়া কর। যতক্ষণ মীমাংসা না হয়, থামিসনি। শুধু নিজের ভাবনা দিয়ে একটা সম্পর্ককে ভেঙে দিসনি খুকি! টুকুনের কথাও তো ভাবতে হবে। বাপ মা ছাড়া বড় হবার কষ্ট কী সে তোর থেকে ভালো আর কেই বা বুঝবে! ভাস্করের সাথে কথা বলার পরেও যদি তোর ভাবনাই সত্যি হয়, তখন আর কেউ না থাক, তোর পাশে আমি আছি।"

- "তোমাদের কথা শেষ হলো মা? শুচি, রাতে থাকবে তো আজ?"

শুচিস্মিতার বৌদি হঠাৎ ঘরে ঢুকে বলল।

- "না বৌদি। আমি এখনই বাড়ি যাবো। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।"

                টুকুনকে নিয়ে সেই মুহূর্তে বাড়ি ফিরে গেল শুচিস্মিতা। বেলার মা দরজা খুলে দিয়ে বলল,

- "ম্যাডাম, স্যার বেরিয়েছেন একটু। ফিরতে রাত হবে। আপনাকে অপেক্ষা না করে খেয়ে শুয়ে পড়তে বলেছেন।"

অপেক্ষা! সত্যিই আজ শুচিস্মিতা ভাস্করের অপেক্ষায়! এ অপেক্ষা যে অনেক বড় অপেক্ষা! অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে অনেক রাতে বাড়ি ফিরল ভাস্কর। ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে বলল,

- " এ কী শুচি! এখনও জেগে আছ যে! খেয়েছ?"

শুচিস্মিতা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।

একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাস্কর বলল,

- "বুকের ওপর থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেল শুচি! বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা। ভেঙে গেলে অর্থকষ্ট থেকেও মনোকষ্ট বেশি পেতাম! কোম্পানি নেক্সট মন্ডে থেকে খুলে যাবে। লকডাউন উঠে গেছে।"

শুচিস্মিতার কাছে ঘেঁষে বসল ভাস্কর। ধীরে ধীরে তার হাতটা ধরে বলল,

- "তুমি এবার নাচটা আবার শুরু করো না, শুচি! প্লিজ!"

- "কেন? তোমার তো কোম্পানি খুলে গেছে। তবে নাচের কি প্রয়োজন?"

শুচিস্মিতার হাত থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে অবাক হয়ে ভাস্কর বলল,

- "কোম্পানি খোলার সাথে নাচের কি সম্পর্ক?"

- "যথেষ্ট সম্পর্ক। তোমার রোজগার ছিল না তাই আমি নেচে আবার রোজগার করে আনবো। কোম্পানি যখন আবার রমরমিয়ে চলবে যখন পয়সা আসবে আগের মত তখন আবার আমায় নাচ ছাড়তে বলবে।"

চিৎকার করে বলে উঠল শুচিস্মিতা,

- "আমি কি তোমার হাতের পুতুল? যখন যেমন নাচাবে নাচবো? আমি সত্যিই আর পারছি না ভাস্কর। আমি মুক্তি চাই।"

অঝোরে কেঁদে ফেলল শুচিস্মিতা। প্রচন্ড রেগে ভাস্কর চিৎকার করে বলে উঠলো,

- "শাট আপ।" 

পিছন ফিরে দাঁড়ালো। খাটের পাশের আলমারিতে দুটো ঘুষি মারল। তারপর নিজেকে সংযত করে বলল,

- "তোমাকে একদিন নাচ ছাড়তে বলেছিলাম। কেন বলেছিলাম জানো? তোমার নাচকে আমি হিংসে করতাম। মনে হতো তুমি নাচকেই শুধু ভালোবাসো! আমাকে নয়! নাচ নয়। আমি তোমার প্রায়োরিটি হবো। এটাই ছিল আমার একমাত্র চাহিদা। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখতাম তুমি তখনও প্রোগ্রাম করে ফেরোনি। রাতে ডিনারটা একা করতে একটুও ভালো লাগত না। একা বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতাম তোমার জন্য। তুমি মাঝরাতে যখন ফিরতে তখন ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটলে তুমি বলতে তোমার প্রোগ্রাম আছে, তাই যেতে পারবে না। আমার কষ্ট হতো টিকিট ক্যানসেল করতে। আমি শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম। পুরোপুরি নিজের করে। ভেবেছিলাম তোমার নাচ না থাকলে, প্রোগ্রাম না থাকলে তোমায় পুরোপুরি পাবো। তোমার সময়টা থাকবে শুধুই আমার জন্য। কিন্তু ভুল! এখন একসাথে ডিনার করি। যখন তখন বেড়াতে যাই। যখন খুশি তোমাকে কাছে পাই। কিন্তু পাশে পাই না। তোমার শরীরটাই শুধু পাই। মন পাই না। আগে এক মুহূর্ত যদি তুমি আমার সাথে কাটাতে তবে সেই মুহূর্তটায় তোমার শরীর মন সবটা পেতাম। এখন সারা দিনে এক মুহূর্ত আমি তোমার মন পাই না।"

বলতে বলতে ভাস্কর শুচিস্মিতার দিকে এগিয়ে গেল। কাঁধে হাত রেখে আরো কাছে গিয়ে বলল,

- "শুচি! আমি শুধু তোমাকে চাই! তোমার মন। তোমার ভালোবাসা। সেই আগের মত। সেই আগের শুচিকে চাই। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলছি শুচি! একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছ তুমি। শুচি! আজ আমি এই উপলব্ধি করেছি, ভালোবাসার মানুষের ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে সে যা ভালোবাসে, তাকে মূল্য দিতে হয়। মর্যাদা দিতে হয়। তবে তাকে পরিপূর্ণ রূপে পাওয়া যায়।"

অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো শুচিস্মিতা। ভাস্করের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো হাউ হাউ করে। 

শক্ত করে আঁকড়ে ধরল দুজন দুজনের মন!

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment