1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

থীম বদল

ছবি : ইন্টারনেট

থীম বদল

দিব্যেন্দু গড়াই

পুজো আসতে আর মাত্র বাইশ দিন বাকি। উত্তর কোলকাতার হাতিবাগানে ভীড়ের চাপে পা ফেলা দায়। শপিং চলছে পুরোদমে। এমনকি দুদিন তুমুল বৃষ্টিও লোকজনকে দমাতে পারেনি। তবে দমেছে একজন। বলা ভালো একটি পুজো কমিটি। কারণ তাদের এবারের থিমপুজোর প্ল্যান আর বৃষ্টির সম্পর্ক হল আদায়-কাঁচকলায়। ইসরো চন্দ্রযান-৩ পাঠানোর পরেই আপদকালীন তৎপরতায় পুজো কমিটি ঠিক করেছিল এবারের থিম হবে চন্দ্রপৃষ্ঠ। বিস্তীর্ণ চাঁদের এবড়ো-খেবড়ো জমি, তাতে বিক্রম ল্যান্ডার এর মডেল থাকবে একপাশে। প্যান্ডেল হবে চন্দ্রযান-৩ এর অনুকরণে। পুরোটা হবে খোলা জায়গায়। আলোর কারিকুরিতে কালো আকাশ তৈরি করা হবে। ভলিন্টিয়ার সব মেয়ে। পরনে শাড়ি। ব্যাপক সাড়া পড়ে যাবে পাবলিকের মধ্যে।

আজ সকালে আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবাণীতে কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গুল্টেদার (ভালো নাম রমাকান্ত দাঁ) ব্লাডপ্রেসার উর্ধ্বগগনে। ওদিকে চেয়ারম্যান পকাইদার (ভালো নাম সনাতন সিমলাই) ব্লাডপ্রেসার নামতে নামতে তলানিতে ঠেকেছে। বারবার বাথরুমে যাচ্ছেন। তাও ভাল প্রেসিডেন্ট অফাদা (ভালো নাম নিশিকান্ত জোয়ারদার) সিনে নেই। উনি দিন দশেকের জন্য শিলং গেছেন ঘুরতে। ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

-‘এখন কি করা যাবে সেটা সবাই ভাব। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে মহালয়ার দুদিন পর থেকে নবমী অব্দি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ পার্সেন্ট। সুর্যের মুখ দশমীর আগে দেখা যাবে না।’

স্ট্যান্ড ফ্যানের ঘোরার সাথে তাল মিলিয়ে পায়চারি করতে করতে বলল গুল্টেদা।

ভাঁড়ের পর ভাঁড় চা আর প্যাকেটের পর প্যাকেট সিগারেট পরবর্তী কয়েকদিন ধরে পুজোকমিটির ক্লাব ঘরে অন্তর্হিত হতে লাগল। জোর তর্কবিতর্ক, হা-হুতাশ এমনকি কান্নাকাটির রোলও উঠল সে ঘরে। কেউ একজন বলেছিল পাড়ার মুখের ‘ইন্ডিয়া’ দোকানের বিরিয়ানির প্যাকেট দেওয়া হোক দর্শনার্থীদের। তাহলে ভীড় ভেঙে পড়বে এই পুজোয়। বৃষ্টি-বন্যা-ভূমিকম্প কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে পিলপিল করে মানুষ ওদের ঠাকুর দেখতে আসবে। তবে সে প্রস্তাব একদিনের মাথায় ক্যানসেল হয়ে যায়। কারণ স্থানীয় থানা বলে দিয়েছে বিরিয়ানির ভীড় সামলানোর মত যথেষ্ট লোকবল তাদের হাতে নেই। অবশ্য পুলিশ রাজি হলেও পুজোর বাজেট বিরিয়ানি-প্রস্তাবে এঁটে উঠতে পারত না বলেই সবার মত। 

এদিকে দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে। আকাশের মুখ অধিকাংশ সময়ই ভার। ভীড় করে মেঘ আসছে আর যাচ্ছে। যাওয়ার সময় দু-এক পশলা ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে। যেন বলে যাচ্ছে ‘এ তো সবে প্র্যাকটিস-ম্যাচ, আসল টেস্ট খেলা পুজোর ষষ্ঠীর দিন থেকে শুরু হবে।’

থীম পুজোর থীম শেষ অব্দি ঠিক হল অফা’দা ফেরার পর। যা একটা আইডিয়া দিল না, এক্কেবারে তাক লেগে গেল সবার। তারপর আর কি, তরিঘড়ি পুজো-প্রস্তুতিতে লেগে গেল সবাই। বাজেট তো বাড়লই না, বরং লাইটিং এর খরচ অনেক কমে গেল। ভলিন্টিয়ার মেয়েদেরই রাখা হল, শুধু শাড়ির জায়গায় রেইনকোট। প্রতিমার প্যান্ডেল চন্দ্রযানের আদলে না হয়ে আরও সাদাসিধে হল। পাথরের গুহা। গুহার মাথায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থাও করা হল। সঞ্চিত জলের পরিমাণ বেশী হয়ে গেলে সেই জল উপর থেকে নেমে আসবে নীচে। দর্শক চাক্ষুষ করবে জলপ্রপাত। 

অবশেষে পুজো এল।

আর পুজোর পাঁচটা দিনই ভীড় ভেঙে পড়ল জগদ্বন্ধু পার্কের পুজোয়। বৃষ্টি মাথায় করে অগুণতি দর্শনার্থী ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে রইল ঘন্টার পর ঘন্টা। সবাই দেখতে চায় কলকাতার প্রথম পুজো যার এবারের থীম পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিময় অঞ্চল, মৌসিনরাম। 

প্রেসিডেন্ট নিশিকান্ত জোয়ারদারের এবারের মেঘালয় ভ্রমণ সার্থক।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment