ছবি : ইন্টারনেট |
বিসর্জন
তাজিন আহম্মেদ
চিঠিটা হাতের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে নিষ্প্রাণ বস্তুর মতো বসে রইলেন কুলদীপের মা। চিঠিটা অবশ্য কোন ডাক মারফত আসেনি এসেছে পুলিসের হাত ধরে, যেটা তার মেয়ে জীবিত অবস্থায় লিখেছিল মায়ের উদ্দেশ্যে কিন্তু কখনো পোস্ট করতে পারেনি। কেন পারেনি তাও অজানাই রয়ে গেল।
যেমন এতোদিন তার কাছে অজানা ছিল তার মেয়ে উমার হারিয়ে যাওয়ার কারণ।
কিন্তু আজ তার হাতের মুঠোয় তার মেয়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। আজ তিনি বুঝতে পারছেন সেদিন কেন তার কুলদীপ তার চোখে চোখ রেখে বলতে পারেনি তার উমা কোথায়?
উত্তরে শুধু বলেছিল- উমা হারিয়ে গেছে ।
সেই বাদলারাতে ছেলে ব্যাগ ভর্তি করে তাদের সবার জন্য পুজোর কেনাকাটা করে আনতে পেরেছিল কিন্তু বোন উমাকে খুঁজে আনতে পারেনি ।
তারপর চার চারটি বছর পার হয়ে গেলেও ছেলে কুলদীপ তার বোনকে খুঁজে আনতে পারেনি, আর উমাও কোনোদিন পথ খুঁজে পিতৃগৃহে পৌঁছাতে পারেনি।
আজ কুলদীপের মা বুঝতে পারলেন সেদিন তার উমা হারিয়ে ছিল বলে বহুদিন পরে তারজন্য এসে ছিল নতুন শাড়ি। ছোট ছেলে ও মেয়ের জন্যও এসে ছিল নতুন পোশাক । এমনকি আসন্ন উৎসবের আনন্দে ভাঙাবাড়িটাও নতুন রূপে সেজে উঠেছিল।
তারপর আসতে আসতে আরো কতো উন্নতি হোল। পরের বছর ছোট মেয়ের বিয়ে হলো। কুলদীপের নতুন ব্যাবসা শুরু হলো, তারো বিয়ে হলো। এমনকি ছোট ছেলের পড়াশোনাতেও কোন ভাটা পড়েনি, ও এখন উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
এ ছাড়াও তাদের সাধের গাইগরুটা যাকে বিক্রি করার কথা ছিল তাকেও বিক্রি করতে হয়নি, সে এখন কুলদীপের ঘরে কোল আলো করে আশা প্রদীপের বার্তি দুধের যোগান দিচ্ছে ।
এই কয় বছর কুলদীপের মা বারবার ছেলেকে প্রশ্ন করেছেন-
তুই কি কোন খোঁজ করেছিস আমার উমা কোথায় গেল ও কোথায় আছে?
প্রতিবারই উত্তরে ছেলে বোনের হারিয়ে যাওয়ার কথায় শুনিয়েছে , কিন্তু এইবারে উত্তরে বলেছিল-ধরেনাও তোমার উমার বিসর্জন হয়ে গেছে ।
প্রতিবছর মাটির উমার বিসর্জন হয়, কিন্তু তিনি পরের বছর পতিতালয়ের উঠোনের মাটি অঙ্গে ধারণ করে নতুন জন্ম নিয়ে আবার পিতৃলয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু মানুষ উমাদের একবার বিসর্জন হলে তারা তাদের কাছে যাওয়া কামাতুর লোভী পুরুষদের পাপকর্ম তাদের অঙ্গে জায়গা দিয়ে তাদের কাছে ছেড়ে আসা পুণ্যে নিজেদের উঠানকে পবিত্র করতে পারে, এমনকি তাদের শ্রমের অর্থও লোকালয়ে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু তাদের আর কোন দিন পথ খুঁজে পিতৃগৃহে পৌছানো সম্ভব হয়না।
No comments:
Post a Comment