1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

রাত বারোটার ফোন

ছবি : ইন্টারনেট

 রাত বারোটার ফোন 

সোমা মল্লিক 

    চোখ খুলতেই এক অজানা ভালোলাগায় মনটা ভালো হয়ে যায় সীমার।আজ দুদিন অঝোর ধারায় শ্রাবন তার সুরত্রন্তীতে শব্দলহরী গেঁথে চলেছে আপনমনে।বিছানা ছেড়ে উঠে কিচেন থেকে এক কাপ কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।

    দশতলার উপর থেকে নীচের দিকে তাকালে কলকাতার সব কিছু ছোট লাগে। দোকান, মানুষজন, এক হাঁটু জল ঠেলে চলন্ত গাড়িগুলো। কলকাতার এটা একটা বড় বৈচিত্র। এক পশলা বৃষ্টি হতে না হতেই ভাসমান শহরে পরিণত হয়।

      সীমার মনে ভীড় জমায় অগণিত বর্ষস্মৃতি।সীমাদের আদি বাড়ি জয়নগর।বড় বাগান নিয়ে দোতালা বাড়ি। একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে সীমা। এই বর্ষার দিনে কত্ত মজা হত।

    সন্ধ্যায় বাবা, জেঠু, কাকা বাড়ি ফিরলেই,বড়মা মুড়ি মাখতো আচারের তেল দিয়ে। সাথে থাকতো মায়ের হাতে বানানো গরম গরম তেলেভাজা। ঠাকুমা মাকে সাহায্য করত। আর কাকী জানালার বাইরে হাত বাড়িয়ে রবীন্দ্রসংগীতের সুর তুলতে তুলতে  বৃষ্টির স্পর্শ নিত।

    জেঠু মুড়ি খেতে খেতে হাঁক দিয়ে বলত, বড়বৌ আজ রাতে খিচুড়ি করো।মেজবৌ খিচুড়িটা বেশ বানায়। সাথে বেগুনভাজা, পাঁপড়ভাজা, আর ডিমভাজা। আর শোনো গাওয়া ঘি দিতে ভুল না।

  কাকী এসবে কান পাততো না । আপন খেয়ালে গান করে যেত। খুব মিষ্টি ছিল কাকীর গানের গলা। কাকা সুযোগ খুঁজতো কখন আড্ডার সভা থেকে ছাড়া পেয়ে কাকীর কাছে যাবে। কিন্তু দাদুর কথার চাপে উঠতে পারত না।

     বর্ষার রিমঝিম শব্দ, সাথে গাওয়া ঘিয়ের উপর লঙ্কা আর পাঁচফোড়নের গন্ধ মিশে একটা অদ্ভুত সুবাসের ভালো লাগা। সে অনেক দিনের কথা।সবটাই অতীত।দাদু ঠাকুমা অনেকদিন মারা গেছে।

    জ্যেঠুর দুই ছেলে। কর্মসূত্রে একজন ব্যাঙ্গালোর, একজন মুম্বাই।সীমা কলকাতায় আর দাদা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পৈতিক বাড়ির মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে বয়স্ক লোক গুলো। শিকড়ের টান ছেড়ে অন্য কোথাও মন ঠিকবে না। তাছাড়া আরও একটা সমস্যা আছে। বড় বড় থামওয়ালা বাড়িতে থেকে অভ্যস্ত।ফ্লাট ওদের কাছে দেশলাই বাক্স।

    কাকীর কোনও সন্তান হয়নি।ঠাকুমা কাকীকে নিয়ে সে সময় কত মন্দিরে ঘুরে ঘুরে মাদুলি তাবিজ কবজ, কোনও গাছের শিকড়ও হয়তো বাকি ছিল না কাকীর হাতে বেঁধে দেয়নি।

    এলোমেলো চিন্তাজাল ভালোই পসার জমিয়ে বসেছিল অন্তরমহলে। হুঁশ ফিরল মুঠোফোনের শব্দে।এই কঠিন সত্যিটি সক্কাল সক্কাল দরজায় কড়া নাড়বে সীমার জানা ছিল না। সবিতাদির ফোন। 

-দিদিমনি আজ আর যেতি পারবুনি। কাল খুব ভিজিচি। কাল সক্কাল সক্কাল যাবুকন। আজ দিনটি একটু কষ্ট করে সামলে নাও গো।শরীরখানা খুব ম্যাজম্যাজ করছে। কাল ফিরতি পথে খুব ভিজিচি গো দিদিমনি।ভোর রাত থেকে জ্বর।

    সীমা সহনুভূতি জানিয়ে বলল, এবাবা ডাক্তার দেখিয়ে নাও। কিছু ওষুধ খাও। কাল আসতে হবে না। আজ শনিবার, কাল রবিবার। আমার দুদিন ছুটি। কোনও ভাবে আমি সামলে নেব। তুমি চিন্তা কর না। আর এত বৃষ্টির মধ্যে আসবেই বা কি করে। 

      মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল সীমা। সবিতাদিকে ভালোমানুষী তো দেখিয়ে দিল।এবার কি করবে?বাড়ি একটাই মেয়ে তার উপর সকলের ছোট, সবার আদুরের মনি সীমা।সংসারে কোনও কাজ পারে না। কর্মসূত্রে কলকাতায় একা থাকার সুবাদে চা কফি আর ডিমটোস্ট সবিতাদির কাছে শিখেছে।

    ছুটির দিনে শোয়া আর খাও ছাড়া আর কিছু করে না।অবশ্য বেশীর ভাগ ছুটির দিন দেশের বাড়িতে চলে যায়। আর কলকাতায় থাকলে যদি বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে দেখা করে,সেটাও সন্ধ্যের পর।বাকি পাঁচদিন তো অফিসের চাপে নেপাল থেকে নেপচুন দৌড়াতে হয়।বিশ্রাম বলতে রাতের বিছানা।এক নামকরা মেডিসিন কোম্পানির ম্যানেজিং পোস্টে আছে সীমা।

     ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল নটা বাজে। খিদেতে পেটে ছুঁচো ডন মারছে। সোফা থেকে জামাকাপড় গুলো ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে, মেশিন চালিয়ে দিল।সিদ্ধান্ত নিল আপাতত ডিম টোস্ট করে কাজ চালিয়ে নেবে। পরের কথা পরে ভাববে।রান্নাঘরে ঢুকে কোনও ভাবে ডিমটোস্ট করল।

     খেতে শুরু করেছে এমনি সময় রিকের ফোন।বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বন্ধুদের দলের মধ্যেই একজন রিক। রিকের সাথে সীমার বন্ধুত্বের গভীরতা অনেকটায়। রিক অনেকবার সীমাকে প্রপোজ করেছে। সীমা রিককে বলেছে, তোকে ভালো লাগে, তবে জীবনসঙ্গী হিসাবে ভাবি না।

      বাড়ি থেকেও অনেক বার বিয়ের তারা দিয়েছে। মা তো রেগে অনেক দিন কথা বলেনি। মার বক্তব্য,একা মেয়ে বাড়ির বাইরে থাকলে বাড়ির লোকের কত চিন্তা হয় সেটা বোঝার বয়স তো হয়েছে।সীমা ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে।সীমার মতামত, দাদা বড়। দাদা আগে বিয়ে করবে।

-কি রে সীমু কি করছিস?

-আর বলিস না, আজ সবিতাদি ছুটি নিয়েছে।আমি এখন গৃহিনী হয়ে গৃহের কাজ করছি।

-আমি যাব সাহায্য করতে?

-দরকার নেই।

-আমি তো যাচ্ছিই। মা আজ খিচুড়ি বানাচ্ছে। তুই খিচুড়ি ভালোবাসিস মা জানে। মার অর্ডার তোকে পৌঁছে দিতে হবে।

-আরে না না এই বৃষ্টির মধ্যে আসতে হবে না। আমি ঠিক চালিয়ে নেব। তাছাড়া তোদের কলকাতা তো জলে ভাসছে।

-কলকাতা আমাদের তোর নয় বুঝি। আর তাছাড়া কলকাতার সবটাই জলে ভাসছে না। তোর বালিগঞ্জ জলে ভাসছে। আমি আসছি চারচাকা নিয়ে।

-তাহলে এক কাজ কর, তোর খাবারও নিয়ে চলে আয়। এক সাথে খাবো।

-আপনার কথা শিরোধার্য ম্যাডাম।

     ফোন রেখে সীমার ঠোঁটের কোণে একটা লাজুক হাসি উঁকি দিল। রিক সবসময় ফোন কাটার আগে লাভ ইউ বলে একটা কিস দিয়ে তারপর ফোন রাখবে। কতবার সীমা বলেছে, আরে আমি তোকে ভালোবাসি না। তখনই অভিনেতাদের স্টাইল অঙ্গভঙ্গি করে বলবে, ওরে আমিই তোর প্রাণনাথ রে সীমু। আমাকে তাড়াতাড়ি নিজের আঁচলে বেঁধে ফেল। না হলে বেহাত হয়ে যাব।

   স্নান সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।নিজেকে নিজেই নিখুঁত ভাবে দেখতে দেখতে সীমার মনে হল শাড়ী পরবে। আলমারি খুলে পেস্তা রঙের শিফন শাড়ীটি বের করল।

    কাল দুপুর থেকে শহরটা বৃষ্টির দখলে। সব জানালার কাঁচ বন্ধ করে দিয়ে বিছানার পাশে জানালা খোলা রাখল। জানালার ওপারেই ব্যালকনি। বৃষ্টি যতই দৌড়ঝাঁপ করুক বিছানা দখলে নেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।বিছানায় শুয়ে খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির রবীন্দ্রনৃত্য দেখতে সীমার ভালো লাগে।

    কলিং বেল বাজতেই বিছানা ছেড়ে উঠে যায় দরজা খুলতে। দরজার লকে হাত দিয়ে কি ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সীমা। তার মধ্যে আরও একবার বেল বাজলো। এবারে সীমা দরজা খুলল এক মাথা ঘোমটা টেনে।

     দরজা খুলতেই রিক চমকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, শাড়ি পরে ঘোমটা টেনে আছিস কেন?

-প্রাণনাথ, তোমার জন্যই তো অপেক্ষা করছি।

-আমি তো জানি প্রিয়ে। তাই এই বিকট বর্ষণ উপেক্ষা করে তোমার কাছে এসেছি।

    হাসি থামাতে না পেরে সীমা হো হো করে হাসতে লাগল। রিক তার সাথ দিল।খাবার টেবিলে হাতের প্যাকেটটি রাখতে রাখতে রিক জিজ্ঞাসা করল, হঠাৎ শাড়ি পরলি? আমার জন্য?

-তোর জন্য কেন পরতে যাব? ইচ্ছে হল তাই পরলাম।

    বেডরুমের জানালায় এসে দাঁড়াল সীমা। রিক তার পাশেই। বৃষ্টির জলে ব্যালকনি ভিজে ন্যাতা।

-দেখ রিক বৃষ্টির পড়ার ধরণ দেখা মনে হচ্ছে যেন রবীন্দ্র নৃত্য করছে।

-আরও একটা জিনিস তোর চোখে পড়েছে না সীমু।

-কি রে?

-দেখ ঐ সুপারী গাছ দুটি বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার সুযোগ নিয়ে নারকেল গাছের সাথে অসভ্যতামীতে মেতেছে।

-উঃ, তোর শুধু বাজে কথা।

    রিক কোনও উত্তর না দিয়ে আচমকা সীমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা কিস দিল। সীমা রিকের বহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে চুপচাপ খাবার টেবিলে এল। 

   রিক বারবার সরি বলতে লাগল। সীমা ওর কথায় কান না দিয়ে বলল, খেতে বস। খুব খিদে পেয়েছে।

     খাওয়া সেরে সিগারেট ধরিয়ে রিক ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। সীমা টেবিল পরিষ্কার করে রিকের পাশে এসে দাঁড়াল। বৃষ্টি থেমে গেছে। ছাড়া ছাড়া উড়ন্ত কালো মেঘের ধারে ধারে ঝিকিমিকি করছে রোদ। মেঘবতী গলায় পরেছে ঝকমকে রুপোর হাঁসুলী।

 -রিক চল বেরোয়। এত সুন্দর আবহাওয়া ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

-কোথায় যেতে চাইছিস?

-চল তো বেরোয় আগে। তারপর ভাববো।

    এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করে শেষে এসে থামল প্রিন্সেপ ঘাটে।গাড়ি পার্কিং করে সীমার বায়ানাতে এগিয়ে চললো গঙ্গার পারে গাছের নীচে চেয়ারে বসতে।

   শহরের বর্ষা এবছর দেরী করেই এসেছে। তাপদগ্ধ ধরিত্রী জলস্নান করে জুড়িয়ে গিয়েছে।মেঘলা ভাঙা আকাশে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ছাড়া ছাড়া ধূসর মেঘের আড়ালে সূর্য ধীর পায়ে পশ্চিম দিগন্তে এগিয়ে চলেছে।

       বৃষ্টি থামার সাথে সাথে সীমা রিকের মত আরও অনেকেই বেরিয়ে পড়েছে ঘরের বাইরে। অন্য দিনের মত না হলেও বেশ ভীড়।আপন খেয়ালে বোকে চলেছে রিক। কথা শুরু করলে থামে না। পাশে সীমা হুম আর হ্যাঁ ছাড়া কিছু বলছে না।

   এক অজানা আতঙ্কে হিমেল স্রোতে মেরুদন্ড বেয়ে উপরে উঠে আসছে ক্রমশঃ। ঠিক একটা তৈলাক্ত সরীসৃপের মত। সীমার শরীর টা শিরশির করে উঠল ভয়ে।

    তাদেরই বয়সের একটা ছেলে। বেশ শক্তপোক্ত চেহারা।সীমার থেকে তার চোখ সরছে না। সীমা কয়েক বার লক্ষ্য করল। ছেলেটার চাউনিটা শিহরণ জাগানো।রিকের চোখে একবার এটা পড়লেই আর রক্ষে নেই। এখানে লঙ্কাকান্ড বেঁধে যাবে।

   পরিস্থিতি বুঝে সীমা রিককে বলল, চল ওঠ। আর এখানে ভালো লাগছে না।

-এই তো এলি। একটু বস।

-না চল।

    মেঘলা দিনে সন্ধ্যের আবছা আলো ক্রমেই ঘন হয়ে নামছে। স্ট্রিটল্যাম্প জ্বলে উঠেছে ইতিমধ্যে।অন্ধকারও দূর হয়নি।এক অদ্ভুত আলো আঁধারী খেলা।

    যে ভয়ে সীমার বুক কেঁপে উঠেছিল, সেটাই ঘটল।ওখানে থেকে উঠে রিক চায়ের স্টলে দিকে এগিয়ে গেল। সীমা পিছনে। ছেলেটি সীমার শাড়ীর আঁচল ধরে বলল, শুনছেন আপনার শাড়ীর আঁচল জলে পরে ভিজে যাচ্ছে। সীমা পিছনে তাকাবার আগেই রিক দুম করে এক ঘুসি মেরে দিল ছেলেটির মুখে।

     ছেলেটি আঁচল ধরেই গাছের নীচে বসে পড়ল। সীমা ছেলেটির হাতের মুঠো থেকে আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে রিককে সামলাতে ব্যস্ত হল। ততক্ষনে ওখানে কিছু লোক জমে গেছে। কোথা থেকে দৌড়ে এল ছেলেটির এক বন্ধু। রিকের উপর হামলে পড়ল। চলল দুজনের ধস্তাধস্তি।

    পুলিশ চলে আসতে পরিস্থিতি নরমাল হয়। সীমা রিককে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। গাড়ি থেকে সীমা  পিছনে তাকিয়ে দেখল ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির পিছনে।

-আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দে।

-আরে আমি কি করলাম? আমার উপর রেগে যাচ্ছিস কেন?

-আমি বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেছি সেটাই কর। আর কোনও কথা শুনতে চায় না।

-ঠিক আছে কোনও রেস্টুরেন্ট ঢুকে কিছু খেয়ে নিই।তুই রাতে কি খাবি?

-সেটা আমি বুঝে নেব।

    কয়েক ঘন্টা বৃষ্টি বন্ধ ছিল। আবার শুরু হয়েছে।একঘেয়ে রুগ্ন গলার কান্নার মত অবিরাম ঝরে চলেছে। সাথে ঝোড়ো হাওয়া। জমজমাট শহরের চাঞ্চল্য ভিজে ন্যাতা হয়ে গেছে। নিস্তদ্ধে ঝিমিয়ে পরেছে।

  রিককে ফোনে ব্লক করে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়ল।মনের মধ্যে উলঙ্গ অশান্তি খুব অস্থির লাগছে।ছেলেটা ওভাবে কেন দেখছিল? ভাবতেই সীমার কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। রিকের জায়গা যে থাকতো সে রেগে যেত। ঘটনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সীমা। ফোন বেজে উঠতে ঘুম ভেঙে যায়।

  ঘড়ি দেখল বারোটা বাজে। এত রাতে অজানা নম্বর থেকে কল। খুব চিন্তিত হয়ে ফোন রিসিভ করে।

-হ্যালো।

-আমি কি সীমার সাথে কথা বলছি?

-হ্যাঁ, কিন্তু আপনার পরিচয়।

-আমি বিবেক। বিকালে তোমাকে দেখে মাথা ঘুরে গেছিল। তোমার বন্ধু ঘুসি মেরে মাথা ঠিক করে দিল।

   সীমা চমকে উঠল। মানে বিকালের ঐ ছেলেটি ফোন করেছে। কিন্তু ফোন নম্বর পেল কি ভাবে? মনে মনে ভয় পেলেও মুখে তা প্রকাশ করল না।

-কি ভয় পেয়ে গেলে?

-ভয় না, ভাবছি আমার নম্বর কোথা থেকে পেলেন, সেটা ভাবছি।

-তোমার বন্ধুর পকেট ডায়েরি থেকে। ওর অকারণ লম্পঝম্পতে ডায়েরিটি আমার হাতে চলে এল।

-কি চায় আপনার? কেন ফোন করলেন? বিকালে ঝামেলার জন্য দায়ী আপনি।

-তোমার সাথে কথা বলব বলেই ফোন করলাম। তোমার শাড়ীর আঁচল জলে পড়েছিল সেটা বলা কি আমার অন্যায়?

-আপনি মিথ্যে বলবেন না। আপনি আমাকে অনেক আগে থেকেই দেখছিলেন বাজে ভাবে।

-তুমি তো দেখার মতই।অপূর্ব দৃশ্য।সাত জন্ম আমি দেখতে চাই এমন দৃশ্য। সূর্য অমিল রক্তাভা ছড়িয়ে লাল টমেটোর আকার নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দিগন্তের অপর পারে।তার কোলে এক অপরূপা। এই দৃশ্য উপভোগ করার ক্ষমতা সবার থাকে না। তোমার বন্ধুরও ছিল না।স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে ব্যস্ত মানুষ। মনে হয় এই নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করি। শান্তির পৃথিবী খুঁজি।যেখানে শুধু প্রকৃতির সাথে কথা বলব।আজ খুঁজে পেলাম সেই শান্তির পৃথিবীতে এক অপরূপার। সেটা থেকে কেমন করে চোখ ফেরাই।

-বাবাঃ, আপনি সাহিত্যিক নাকি? 

-ঐ একটু আধটু।আমি কিন্তু সত্যি তোমার প্রেমে পাগল।আমি সাত জন্ম তোমার প্রেমিক হতে চাই।প্রেমে পড়ার অদ্ভুত এক সুখ আছে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রেম আসে।

-কিন্তু আমি আপনার প্রেমে পড়িনি।

-একদিন তুমি আমার কথা ভাববে।মৃত্যু আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েও দৃঢ় বিশ্বাসে অপেক্ষায় থাকবো সেই দিনটির জন্য।আমার নিঘুম রাতের চোখের জল আর বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস হতে তুমি আসবে আমার কাছে।আমার ভাঙাচুড়া হৃদয়ে তোমার পদচিহ্নর আল্পনা আঁকতে তুমি আসবে।আমার হিজিবিজি কল্পনার জগতে রামধনুর সাত রঙের বাহার নিয়ে তুমি আসবেই। একদিন তুমি আমার কথা ভাববেই।

     সীমা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল।হঠাৎ করে সীমার কেমন এক অজানা ভালো লাগা ভর করল। তাহলে কি সত্যি সীমা ওর প্রেমে পড়ল।সীমার মনে পড়ল যতবার ওর চোখে চোখ পড়েছে বুকের মধ্যে একটা শিহরণ জেগেছে। তাহলে এটাই কি প্রেমে পড়ার লক্ষণ। 

সীমার ইচ্ছে হল একবার কল করতে। বেশ ভালো লাগছিল কথা বলতে।ফোন হাতে নিয়ে আবার রেখে দিল। যদি গায়ে পড়া ভাবে।

    ঘড়িতে সময় চারটে। ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সীমা। স্বপ্নে বিবেক হাত ধরে কোনও অচেনা রাস্তায় অজানা পথে হেঁটে চলেছে সীমা। কি শান্তি সেখানে। ফোন বেজেই চলেছে সীমার হুঁশ নেই।বেশ কয়েকবার বাজার পর ঘুম ভাঙলো সীমার।

-হ্যালো কে?

-আমি রিক। এটা বাবার নম্বর। তুই আমার নম্বর ব্লক করলি কেন?

-বেশ করেছি।

-শোন আমার বাড়িতে পুলিশ এসেছে। কাল ঐ ছেলেটি, যে তোর আঁচল ধরেছিল তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে কাল রাতে নন্দনের গেটের কাছে। আমাদের একবার থানায় যেতে হবে। তুই রেডি হো আমি আসছি।

   সীমার মাথায় কিছু আসছে না। থতমত হয়ে বসে থাকল বেশ কিছুক্ষন। যে মানুষটা চারটে পর্যন্ত কথা বলল সে মৃত। এটা কি ভাবে হয়। 

  তাড়াতাড়ি ফোন করতে গেল কাল রাতে যে নম্বর থেকে কল এসেছিল সেই নম্বরে। কি অদ্ভুত নম্বর নেই। সীমা মনে করতে লাগল। না নম্বর ডিলিট করে নি সীমা। তাহলে নম্বর গেল কোথায়..........

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment