![]() | |
|
ভগবানের আগমন
অর্পণ ভট্টাচার্য
(চরিত্র দু জন। একজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক, ভগবান)
শনি বার অফিস থেকে ফিরে,
রেডিওতে ব্যাকগ্ৰাউন্ডে গান বাজছে (আমার সাধ না মিটীলো আশা না ফুরিলো...)
মাঝ বয়সি ভদ্রলোক তারাতারি বাথরুম থেকে বেরিয়ে রেডিওটা বন্ধ করলো (পরনে একটা সাদামাটা ধুতি কানে পৈতে জড়ানো)
ভদ্রলোক- মা দেখা দে, নয় টাকা দে। মাথা ভরা টাক দিলি আকার দিলি না বলে (গান গাইতে শুরু করে)
দে মা টাকা দে। এই না না না... বেশি আশা একদম ভালো না তুই আমায় বরং পয়সা ই দে..!
বলে খালি গায়ে সিংহাসনের দিকে যায় সশটাঙ্গে প্রনাম করে বলে
মাআআ মা গো, সময় তো গড়িয়ে গেল কিছু আশার আলো দেখ মা, সকালে অফিস থেকে ফেরার পথে চন্ডির গুমটী থেকে চিয়ার লটারির ১০ সেম করে দু দুটো কিনেছি মা, একটা ৯ এর ঘরে লাগিয়ে দাও মা।
দেখো বাবা আমি কথা দিচ্ছি সত্য নারায়ণ এর দোকানের গুজীয়া আমি তোমায় শিওর খাওয়াবো। প্লিজ একটা নাম্বার লাগিয়ে দাও মা..
এই ছি ছি ছি তোমায় ১০ টা কালাকাঁদ খাওয়াবো একদম পাক্বা। তোমার ৫টা আমার ৫ টা। এই না না ৭ টা তোমার ৩ টে আমার। তাহলে ডিল ফাইনাল তো বাবা ভোলেনাথ। আর ৯ এর ঘরে লাগলে তোমার এই কাঠের সিংহাসন আমি পাথরের করে দেবো, নারকেল নাড়ু আমসত্ত্ব দিয়ে পূজো করবো, গেঁদার জেয়গায় গোলাপ দিয়ে পূজো করবো মা।
উঠে পরে একটা টাওয়েলে গা মুছতে মুছতে আবার গুন গুন করে গান গাইছে।
(হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পার করো আমারে)
কলিং বেল বেজে উঠলো
দরজা খুলে
ভদ্রলোক- এই কে বাওয়া তুমি, এলাকায় নতুন নাকি? আগে তো দেখি নি এলাকায়!
ভগবান- আমি? আমার নাম ভগবান আমি এসেছি আপনার সাথে....
ভদ্রলোক- দূঃখিত, ভগবান বাবু আপনি রং নাম্বার লাগিয়েছেন আমি না কিছু অর্ডার করেছি, আর না এই জেয়গায় সেলসম্যান এলাও। তুমি এবার আস্তে পারো ভগবান বাওয়া। (দরজা বন্ধ করে দেয় মুখের উপর)
আবার গান ধরে (হরি হরি যতৈ কর না হরি তোমায় দেখা দেবে না)
অতঃপর কলিং বেল আবার বেজে উঠলো।
দরজা খুলে রেগে গিয়ে..
ভদ্রলোক- এই বললাম না আমায় জ্বালিও না। আমার বারির দেনা, ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, পরের বছর অফিস থেকে ছাঁটাই করে দিতে পারে তার চিন্তা, তার বৌ এর লোনের চাপে এমনি ই জ্বলছি তুমি এসেছো তার উপরে জ্বালাতে!
ভগবান- আমার কথা টা শুনন, এই একটু আগে আপনি জাকে ডাকছিলেন আমায় উনি পাঠালেন।
ভদ্রলোক- এই তুমি কে বলোতো মজা করছো? দেখবে দরয়ান ডাকবো!
অতঃপর ভগবান নামক ব্যক্তি বলে ওঠেন--
আপনার নাম গোপাল কুমার আচার্য,
আপনার বাবার নাম গনেশ কান্তি আচার্য,
আপনার বৌ এর নাম দূর্গা দেবী আচার্য,
আপনার ওফিসের নাম বালাজি ইন্টারন্যাশনাল,
আপনার মাসিক বেতন....
ভদ্রলোক- এই দারাও দারাও দারাও তুমি কে হে বাছা বল তো? এত খবর পেলে কোথায়, এই তুমি চর নয় তো !!
ভগবান- না স্যার,
লোক- ই ই ই তাহলে গোয়েন্দা? এই আমি কিন্তু কিছু করিনি বলে দিলাম।
ভগবান- আমি ভগবান।
লোক- মানে! তাই নাকি! আপনি মশাই সত্যি ভগবান?
ভগবান- হ্যাঁ
লোক- আরে বাওয়া আসুন আসুন আগে বলবেন তো কি মুশকিল, বুঝলেন ভগবান বাবু আপনি যে স্বয়ং ঈশ্বর তা আগে জানলে সত্যর দোকান থেকে ঐ গুজিয়া টা...
ভগবান- থাক আমার হাতে সময় খুব কম ১ মিনিটের মধ্যে জা খুশি চেয়ে ফ্যাল দেখি। আমি তোর মনস্কামনা পূর্ণ করব।
ভদ্রলোক- (চোখ বন্ধ করে) আমার প্রমোশান, ছেলে মেয়ের ভালো নাম্বার, লটারির টাকা, চাকরিটা যেন থেকে যায়, আর হ্যাঁ পারলে আমার গিন্নি টাকেও আপনার সাথে নিয়ে যান।
ভগবান- তথাস্তু। তবে আপনাকে কিছু কথা বলে রাখা ভালো, ভালো কাজ করে জান প্রমোশন ঠিক হবে, আপনার সন্তানের মনোযোগ দিয়ে পরাশনা করলে ভালো নাম্বার নিশ্চিত পাবে, লটারি কপালে থাকলে পাবেন, তবে সব হবে ঐ শেষের টা ছারা।
ভদ্রলোক- এই কেন ভগবান বাবু?
ভগবান- আপনার গিন্নির ইচ্ছে আমি জেন আপনাকে আমার সঙ্গে করে নিয়ে জাই। এখন আমি যদি দু জন কেই নিয়ে চলে যাই তাহলে আপনার সংসারের কি হবে?
ভদ্রলোক- কি বলছেন কি ভগবান বাবু! এতো কেলেঙ্কারি কান্ড।
ভগবান- তাহলে আর বলছি কি। আর তাছাড়া আমাদের স্বর্গলোকে এখন জনসংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে। প্রত্যেক মাসে মাসে এখন স্বর্গ আর নরক এই দুই জায়গা মিলিয়ে নিয়মিত 'ভূত গণনা' আর 'দেব গণনা' চলছে।
ভদ্রলোক- বাবা বলেন কি?
ভগবান- আর তাছাড়া ওটা তো আমার ডিপারমেন্ট ও নয়। ওটা জম দার। ওনাকে সময় করে বলে দেখবো একবার। ওই জনদা, দেবরাজ ইন্দ্রের সবার মাঝে মাঝে আসেন, একটু আমদ প্রিয় মানুষ তো.. তাস ফাঁস খেলে।
ভদ্রলোক- ও বাবা তাই নাকি? এই তাহলে কি হবে? তাহলে বরং ছেড়েই দিন গিন্নি কে। আসলে সত্যি বলতে আমার গিন্নি একদম অবুজ প্রানী, ভূল করে বলে ফেলেছে! ক্ষমা, ক্ষমাই পরম ধর্ম। আপনি কি বলেন?
ভগবান- তাহলে আমি চলি? বাইরে আবার অনেকক্ষণ আমার বাহন টা অপেক্ষা করছে। অনেক দূরের রাস্তা তো! সেই স্বর্গ, সময় লাগবে যেতে।
ভদ্রলোক- আসুন ভগবান বাবু, তবে গিন্নি জিগ্গেস করলেন কি বলবো?
ভগবান- বলবেন পাশের পাড়ার ইশ্বর এসেছিলেন, রং এর মিস্ত্রি।
ভগবান উঠে চলে যায়...
লোকটি বিভোর হয়ে চোখ বন্ধ করে জোর হাতে প্রনাম করতে থাকে
ঠাকুর তুমি দেখা দিলে ঠাকুর....আমার কি সৌভাগ্য আজ ভগবান বাবু এই চিয়ারে বসেছিলেন আর এই টেবিলের উপর হাতও রেখেছিলেন। ওরে বাবা আজ আমি এই চেয়ার, টেবিলই পুজো করবো...
যাই সত্যনারায়ণের গুজিয়া আর ভুলুর দোকানের আমসত্ত্ব টা কিনে আনি (এই বলে ভদ্রলোক সোফা থেকে মানিব্যাগটা নিতে যায়)
এই আমার মানিব্যাগ আমার মানিব্যাগ..! ওতে তো আমার মাইনের টাকা, এটিএম এর কার্ড, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, লটারির টিকিট সব আছে
তাহলে ভগবান বাবু....
এই ভগবান, ভগবান আরে আমার ব্যাগ ও ভগবান.....
ভগবান গো সব গেলো সব নিয়ে চলে গেল গো...
ওরে কে কোথায় আছিস ভগবানকে ধর। ওকে ধরে আন, ধর ওকে......।।
(পুরো টাই ব্যাক ভয়েসে থাকবে, স্ক্রিন অফ হয়ে গেছে)
...(সমাপ্ত)...
![]() |
No comments:
Post a Comment