1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

আড়ালে শত্রু

ছবি : ইন্টারনেট

 

আড়ালে শত্রু

কল্যাণ সেনগুপ্ত

প্রথম দুদিন মুচকি হাসি। তারপর হাত জোড় ভঙ্গিতে কেমন আছেন ? একদিন নিজেই হাঁটতে হাঁটতে  দাড়িয়ে পড়লেন। অমায়িক দাঁত কপাটি বার করে বললেন " নমস্কার দাদা, আমি সুকান্ত গাঙ্গুলি। এসেছি  পার্কের গেটের উল্টোদিকের  গলিতে । আপনাদের দেখি রোজ এক সাথে হাঁটতে । তাই চলেই এলাম এক সাথে হাঁটতে, আড্ডা দিতে "।

স্বপন চায়ের থেকে মুখ তুলে  বললে "ভাড়া? "

গদগদ স্বরে বললেন" "না গলির শেষে একটা আধা তৈরি বাড়ির খাঁচা ছিল প্লাস্টার ছিল না ? সেই বাড়ি কমে পেয়ে গেলাম"। একটু থামলেন । "সবার  মুখ চেয়ে বললেন "বুঝতেই পারছেন ,কেরানীর জীবন । কিছু টাকা আটকে আছে অফিসে। পেলেই শেষ করব"।

অসীম বললে বসুন " রিটায়ার্ড? কে ,কে আছেন বাড়িতে ?"

আমতা আমতা করে বেশ  সলজ্জ  ভঙ্গিতে বাজারের ব্যাগ এক হাত থেকে অন্য হাতে নিতে নিতে বললেন  "বুঝলেন কিনা, এখানে আমি একাই। এক ছেলে ,এক মেয়ে। তবে অন্য রাজ্যে" ।

বউ?

মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। "আর বিয়ে? । ওটা আর  জীবনে হয়ে উঠল কই?"

স্বপন, বিপ্লব আর অসীম পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলে। কিছুটা সহানুভূতি ঝরে পড়লে। আহা! এই বয়সেই বউ চলে গেছেন ।

আরেকবার করলে পারতেন।তবু বুড়ো বয়সে দেখবার কেউ থাকত"।

সুকান্ত বাবু কিছুটা সহজ করে দিলেন " মাথা খারাপ?এই দুজনের পর আবার বিয়ে?"

"বলেন কি ? আপনি তো নমস্য ব্যক্তি মশাই। বিয়ে না করেই"?

"কেন? খুব অবাক চোখে তাকালেন। কি এমন করলাম ? দুটি কি খুব বেশী?"

"না, না একদম বেশি নয় । কিন্তু ঐ যে বললেন বিয়ে করেন নি?"

রহস্য বাড়িয়ে বললেন "কখন করবো? আর কেই বা বিয়ে করবে দুই  ছেলে মেয়ে নিয়ে? সবারই তো সখ আহ্লাদ আছে"। রহস্য  আরো ঘনীভূত হল। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে  বললেন" বুঝলেন না? যার যেমন ভাগ্য"।

স্বপন বললে " ছেলে মেয়ে কি এমনি এমনি পেলেন? নাকি কেউ দিয়ে গেল?"

লজ্জায় কথা ঘোরালেন " আর বলবেন না।  ছেলে মেয়ে নিয়েই তো আটকে গেলাম। নাহলে এতদিনে বৃদ্ধাশ্রমেই চলে যেতাম। ওটা খুব নিশ্চিন্ত জায়গা আমার জন্যে।  আজ কলকাতা কাল ব্যাঙ্গালোরে,পরশু দিল্লি এই ছোটাছুটি আর পোষাচ্ছে না"।

ওনার ব্যাপারটা কিন্তু বোধগম্য হলনা। বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করা টা অশোভন।

বিপ্লবের ছেলে থাকে ব্যাঙ্গালোরে। বললে" ব্যাঙ্গালোরে কে থাকে ছেলে না মেয়ে? কোথায় থাকে ?

" আরে ,ওত নাম কি জানি? খোকন কি যেন বলে জেপি নগর না কি"?

"হ্যা ,ওই একটা জায়গা আছে, আমিও শুনেছি মেয়ের কাছে। এবার যখন যাবেন তখন আমিও যদি ওখানে থাকি তাহলে জোর আড্ডা দেওয়া যাবে"।

বত্রিশ পাটি বার করে কেমন কেরানী সুলভ  হাসি খেলে গেল মুখে " সে আর বলতে"।

আজ যাই। বাজার টা করে বাড়ি ফিরব। মিস্ত্রি আসবে বাড়িতে"

সুকান্ত বাবু এই গলির শেষে একটা একতলা বাড়িতে এসেছেন। দু তিন বছর ধরে পড়েই ছিল আধা তৈরি।ছাদের একদিক ঢালাই আরেকদিক টিনের। জানলার ফ্রেম বসেনি সব জানালায়। গ্রিল দেওয়া আছে।  সামান্য একটা দুটি শোবার ঘর, একটি বাথরুম ,একটি রান্নাঘর তাও প্লাস্টার করা হয় নি। মনেহয় ট্যাক্স বাঁচানোর জন্যে ।খুব হিসেবী সেটা বোঝা যায়। রোজ সকালে প্লাস্টিক থলি নিয়ে বাজারে যান । পার্কে অসীম,স্বপন বিপ্লবের সাথে আলাপ। অসীম পুলিশের উপর তলার  দূর্দন্ড প্রতাপশালী অফিসার ছিল। ও প্রথম বললে " এই হচ্ছে নির্ভেজাল সহজ সরল ,ভাতে মাছে বাঙালি।কিন্তু দেখেছিস চোখ দুটো খুব উজ্জ্বল। তাকালে মনেহয় যেন  ভিতর টা দেখতে পাচ্ছেন"।

ছাপোষা কেরানি র মত চলা ফেরা কিন্তু বেশ মাঝে মধ্যে রহস্যের রেশ রেখে যান।

নিজেই এসে পার্কে আলাপেই সবাইকেই স্যার স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন। অসীম ই বাধা দিয়ে বলে" কেউ স্যার নয় দাদা। সবাই ভাই বা দাদা ভাই"।

চোখ টা চকচক করে ওঠে। ঘর নাড়িয়ে বিনয়ে গদগদ হয়ে বললেন " তবু প্রথম আলাপ । যদি কিছু মনে করেন" ।

একদিন হাঁটতে হাঁটতে স্বপন বললে  সুকান্ত বাবু মানুষ টা জানিস একটু অন্য রকম।

অন্য রকম বলতে?

একটু রহস্য রেখে চলেন।

যেমন ?

এইতো এসেছেন ।কিন্তু ওনাকে আমি রেল লাইনের ধারে র বস্তিতে দেখেছি দুদিন।

অসীম উৎসাহিত হয়ে উঠলে " তাই ? খুলে বল দেখি।

চা তে চুমুক বললে " আমি মাঝে মাঝে শর্টকাট করি ওখান দিয়ে।সেদিন রেল লাইনের ধারের বস্তি তে যেতে যেতে  ওনাকে দেখলাম একটা ঝুপড়ির সামনে দুজন জন মহিলার সঙ্গে দাড়িয়ে দাড়িয়ে  কথা বলছেন। দুজন মহিলা কিছু বোঝাচ্ছেন উনি মাথা নীচু করে শুনছেন।মহিলাদের বেশভূষা আমার ভালো ঠেকে নি।

বিপ্লব বললে" হয়ত ,কাজের লোকের সন্ধানে গেছেন ওখানে। বা কাজের লোক আসেনি।

না,না ।একটু দাড়িয়ে পড়ে স্বপন বললে " তোদের বলিনি । আমি আরো দুদিন ওনাকে ওখানে দেখেছি। তবে আলাপ ছিল না তখন।

কিরকম? বলছেন তো একাই থাকেন।

একদিন আরেকজন ছোট ছেলেকে কাঁধে হাত রেখে আঙ্গুল তুলে দূরে কিছু দেখিয়ে কি একটা  জিজ্ঞাসা করছিলেন । আমি পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখেছি। আরেকদিন চালাঘর টার বাইরে কতগুলো বাচ্চা ছেলেদের সাথে সাথে কথা বলছেন।

তাই? তাহলে  তো বেশ রহস্য ডানা বাঁধছে।অসীমের মূল্যায়ন বদলে গেল। বেশ কলার তোলা ভাষায় বললে " দেখেছিস ?কি বলেছিলাম?

বিপ্লব বললে " তোর সবেতেই  সন্দেহ।

উনি হালকা শরীর ।বেশ জোরে জোরে হাঁটেন । কথা বলেন খুব বিনয়ী হয়ে। বলেন কম শোনেন বেশী। কিছুদিনের মধ্যেই বেশ জমিয়ে নিলেন। রহস্য আরো জমে উঠল যখন বিপ্লব একদিন মুখ খুললে ওনার অনুপস্থিতিতে। বললে " অনেকটা রাত হবে ।ওনার বাড়ির রাস্তা ধরে আসছিলাম দেখি দু দুটো গাড়ি বাড়ির সামনে দাড়িয়ে। কিন্তু সাধারণ পোশাকের দুজন লোক দাড়িয়ে বাইরে। ঘুসুর ঘূসুর করছে। পাশ দিয়ে যাবার সময় চুপ করে গেল। খুব উৎসুক হয়ে দূরে গিয়ে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। আধ অন্ধকারে কিছুক্ষন বাদে দুজন ষণ্ডা মার্কা দুটো লোক বেরিয়ে এল ।এদিকওদিক দেখে গাড়িতে উঠল। গাড়িটা চলে গেল।

স্বপনের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে । বিপ্লবের হাত চেপে ধরলে । দ্যাখ , আমার রোমকূপ সব খাড়া হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে এসে কি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ব নতুন বন্ধুর জন্যে?

অসীম নতুন ভাবে দেখছে ।গম্ভীর হয়ে বললে " এটা আমি থানায় জানাবো ভাবছি। লোকটা সাসপিসাস, তারপর যা বলছে আর যা করছে সেটা মিলছে না। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল ওনার ছেলে মেয়েকে কিন্তু দেখিনি আমরা।

সকালের হাঁটা সুকান্ত বাবুর আলোচনায় ভাঁটা পড়তে লাগল। স্বপন বললে " উনি কিন্ত ব্যাগ থেকে  ছেলে মেয়ের ছবি আমাকে একদিন দেখিয়েছিলেন।

ব্যাপারটা জমে গেল আরো যখন অসীম এসে বললে এক সকালে " আমার চোখ ভুল দেখে না। দেখলি তো কি বলেছিলাম ? মিলল তো?

সবাই অবাক হল " কি মিলল? একটু শুনি।

দ্যাখ আমার কাজের মাসি ওনার বাড়িতে ঠিকা কাজ করে। আমি গোয়েন্দা মানুষ ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওর বাড়িতে কি কি আছে ।কে থাকে?

কি বলল জানিস?

কি বললে ।সমবেত জিজ্ঞাসা

কিছু নেই প্রায়। একটা চৌখাট, একটা আলনা, দুটো চেয়ার, একটা পড়ার টেবিল। অগুনতি বই। আর কিছু সামান্য বাসন। এমনকি ঘরে কোনো বউ,ছেলে মেয়ে কারুর কোনো ছবি নেই। ঘরে শুধু একটা বড় ক্যালেন্ডার ঝুলছে। তাতে ভারতের ম্যাপ।

অসীম উত্তেজিত হয়ে বললে " ঠিক সন্দেহ করেছিলাম।সিওর , বিদেশী উগ্র পন্থী দের সঙ্গে যোগ আছে। আমি আজই থানায় জানাবো।

এদিকে উনি প্রায় রোজই হাঁটতে আসেন। নিজের গ্রামের গল্প করেন । স্বপন জিজ্ঞাসা করলে একদিন " দাদা আপনি ব্যবসা না চাকরি কি করতেন?

এক গাল হেসে বললেন " আমাদের মত ছা পোষা মানুষ চাকরি ছাড়া আর কি করবে?

কোথায় ছিলেন ?

ওই দুর্গে একটা কন্ট্রাক্টর এর আন্ডারে চাকরি করতাম।

বিপ্লব বললে " কোন দুর্গ?

বিপ্লবের পিঠে হাত রেখে সুকান্ত বাবু বললেন " আরে, অন্য কিছু নয়। দুর্গ এমপির একটা জায়গা।

আচ্ছা। বুঝলাম।

স্বপন একটা অন্য দিকে আঙুল তুললে।" কোনো মহিলা সংক্রান্ত ব্যাপার নেই তো?

বস্তিতে মহিলাদের সঙ্গে কি গুজগুজ ফুসফুস করছেন ?

বিপ্লব বললে " মনেহয় না বুঝলি। তাহলে বাচ্চাদের সঙ্গে কি প্রেম? ওই প্রাইমারি স্কুল টায় খুব যায় শুনেছি নতুন বই খাতা নিয়ে।

সেদিন বোধহয় রবিবার ছিল। জোর গরমের পর সন্ধ্যে থেকে বৃষ্টি পড়ছে। কখনো জোরে কখনো ঝিরঝির করে। রাস্তাঘাট নটা দশটার সময় হঠাৎ করে কেমন ফাঁকা হয়ে গেল। শো শো শব্দ । কেমন বাইরের পরিবেশ ত পাল্টে গেল।

স্বপন একাই বাড়ি ফিরছিল ।একটু রাত হয়ে গেছে। ছাতা নেই ।ঝিরঝিরে বৃষ্টি তে বাস স্টপেজ থেকে আসতেই ভিজে চুপচুপে । বাড়ির সামনে বেশ কিছু লোকজন বর্ষাতি পড়ে দাড়িয়ে। কি হল আবার? দূরে দুটো পুলিশের ভ্যান। কাছাকাছি আসতেই। টর্চের আলো পড়লে। ওপাশ টা আলোয় ঝলসে গেল। কোথায় যাবেন ?

হাত চোখের কাছে তুলে  বললে "বাড়ি সামনে ,ফিরছি"। কি হল কে জানে পাড়ায়? স্বপন এর সেই নকশাল দিনের কথা মনে হয়। প্রচুর পুলিশ বর্ষাতি গায়ে। দুজন বড় মাপের  সাধারণ শার্ট আর প্যান্ট পরা এগিয়ে আসেন। একজনের মুখের দিকে তাকিয়ে টুপি আর মাস্কের আড়ালে খুব চেনা লাগে। আরো কাছে আসতে স্বপনের চোখ দুটো বিস্পারিত হয় । সুকান্ত বাবু ! আশ্চর্য্য, এখানে কি করছেন ?সঙ্গের লোক টির মুখ চেনা । ছবি দেখেছেন ,মনেহয় পুলিশের বড় কর্তা। সুকান্ত বাবু কে এই অবস্থায়। সম্পূর্ন অচেনা লাগে। এগিয়ে এসে হালকা করে পিঠে হাত রেখে  বললেন " স্বপন বাবু চারিদিকে এত পুলিশ দেখছেন ।পাড়ায় গন্ডগোল হতে পারে ।বেরোবেন না তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান"।হতচকিত স্বপন  প্রায় হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ঢোকে। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে নিজের উত্তেজনা সামলে ভাবতে থাকে সুকান্ত বাবু এই পুলিশের মধ্যে কি করছেন ?ওনাকে কি ধরেছে পুলিশ ? উনি কি ইনফরমার? কেন বললেন এ পাড়ায় কোনো গন্ডগোল হতে পারে? এরমধ্যে অসীমের ফোন আসে " শুনেছিস, পুলিশ রাস্তায় ছয়লাপ। বলছে গন্ডগোল হতে পারে। কে জানে কি হল আবার"।

স্বপন বললে " রাস্তায় সুকান্ত বাবু কে দেখলাম ,সঙ্গে পুলিশ

দ্যাখ, কি বলেছিলাম । পুলিশ ধরেছে ঠিক।

বলতে বলতে দু উ উম , দু,উ,উম কান ফাটানো শব্ধ ভেসে আসে। কাচের জানালা থর থর করে কেঁপে ওঠে। বেশ কিছু বুটের দৌড়ে যাবার শব্দ বৃষ্টির রাত কে খানখান করে। বউ বললে কি হল বল তো? পাড়ার মধ্যে পুলিশ এত কেন? জানলার ফাঁক দিয়ে স্বপন দেখতে পায় পুলিশ আর কিছু সাধারন মানুষের দৌড়াদৌড়ি।  কানে তালা লেগে যাওয়া বোমের শব্দ । মধ্যরাতে গিয়ে থামল সব ।পাড়া নিস্তব্ধ হল। শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল স্বপন।

পরদিন  হাঁটতে যেতে দেরি হয়েছিল। পার্কের কোনায় অসীম আর বিপ্লব ঘাড় নামিয়ে খবরের কাগজে। ওরা কি জানে কাল রাতে কি হয়েছে?

সামনে যেতেই চোখে পড়ল  কাগজে সুকান্ত বাবুর ছবি সঙ্গে কমিশনার। তলায় লেখা ভারত সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত সুনীল শ্রীবাস্তব ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার ।আশ্চর্য্য ,সুকান্ত বাবু আবার কখন সুনীল শ্রীবাস্তব হল? গতকাল পার্ক সার্কাস রেল বস্তি থেকে পাকিস্থানের চার উগ্র পন্থী কে গ্রেপ্তার করেছে। এরা নাকি কলকাতায় পাঁচটি জায়গায় এক সাথে হানা দেবার প্ল্যান করছিল। খবর পেয়ে ।সুনীল শ্রীবাস্তব একাই কাছাকাছি একটি বাড়িতে এসে ওঠেন । বেশ কিছুদিন বস্তির ছোট ছোট  ছেলে মেয়েদের পড়ানোর ছুতোয় বস্তির সব লোকজনদের আর উগ্রপন্থীদের খবর যোগার করেছেন । তাদের গতিবিধি নজর করেছেন । শেষে গতকাল বৃষ্টির রাতে সেন্ট্রাল ফোর্স নিয়ে সঠিক ঘরে গিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে চারজন কে ধরেন।  এরা পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিছু এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে কিন্তু বস্তির সমস্ত গলি ঘুপচি উনি আগেই চিনে রেখেছেন বলে এক জায়গায় লুকিয়ে পড়া স্বত্বেও চারজন কে পিছন থেকে এসে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গ্রেপ্তার করেছেন। এরকম অভিযান আরো অনেকবার দেশে নানান জায়গায় এই অকুতোভয় মানুষ টা করে ধরেছেন  অসামাজিক মানুষ দের। এবার কলকাতা বেঁচে গেল বিরাট ক্ষতির হাত থেকে।

কাগজে বেরিয়েছে উগ্রপন্থী দের ছবি আরেকটা ফ্রেমে।

কাগজ থেকে মুখ তুলে তিনজন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে পরস্পরের মুখের দিকে

অসীম শুধু বললে " আমাদের মাইরি বোকা বানিয়ে দিল ? আশ্চর্য্য, এত ভালো বাংলা উচ্চারণ ,বুঝবার উপায় নেই। কি নিখুঁত সাহসী পরিকল্পনা। একদম একা এসেছেন এতটুকু ছদ্মবেশ ধরতে পারিনি। হাঁটাচলা,কথা বার্তা, আচার আচরণের মধ্যে কেউ ধরতে পারবে না।

একদম  পাতি অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী।

স্বপন বললে " আশ্চর্য্য , সেদিন রাত্রে দেখেই মনে হয়েছিল একদম অন্য মানুষ। ঝকঝকে স্মার্ট ।প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ কিছুই মনে হয় নি।

বিপ্লব বললে " দেখিসনি? উনি কলকাতায় একসময় অনেকদিন কাজের সূত্রে ছিলেন।ছেলে মেয়ে দুজন ই  কলকাতায় দত্তক নেওয়া ছেলে মেয়ে । কাগজ লিখছে উনি ভারতবর্ষের সাত আটটা ভাষা অনর্গল বলতে পারেন। নিখুঁত অভিনেতা বলতে হবে। অসীম বললে " আমার পুলিশের চোখ তবুও বুঝতেই পারলাম না । এই নাহলে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত গোয়েন্দা অফিসার।

সুকান্ত বাবুর ওরফে সুনীল শ্রীবাস্তব এর মুগ্ধতায় সকালের হাঁটাটাই বরবাদ হয়ে গেল সেদিন।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment