1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

তুতেনখামেনের সমাধি

ছবি : ডাঃ রণধী দাশ 

তুতেনখামেনের সমাধি

ডাঃ রণধী দাশ 

প্রাচীন মিশর নিয়ে আমাদের জানার আগ্রহের কোনো শেষ নেই। মিশর কথাটা শোনামাত্র চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে... তার প্রথমটি যদি পিরামিড হয়, দ্বিতীয়টা নিশ্চয়ই হবে কিশোর ফারাও তুতেনখামেন। যদিও তিনি একজন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাজা ছিলেন না, কিন্তু তার সমাধি ছিল একমাত্র রাজকীয় সমাধি যা আধুনিক সময়ে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। সমাধিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এটি প্রত্নতাত্ত্বিকদের একজন মিশরীয় রাজার সমাধি কেমন হতো তা রেকর্ড করতে এবং প্রাচীন মিশর সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রভূত সাহায্য করেছিল। 

ফারাও Tutankhamun/ তুতানখামুন/King Tut প্রায় 1333 থেকে 1323 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন মিশর শাসন করেছিলেন প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসের একটি বিদ্রোহের সময়ে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি রাজা হন। তার বাবা ছিলেন Akhenaten ও Ankhesenamun তার সৎ বোন ছিল। 

টুটের বাবা আখেনাতেন দেশের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। আমর্না সময়কালে: তিনি প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের ঐতিহ্যগত বহুঈশ্বরবাদী রূপ কে বদল করতে চেয়েছিলেন, যা অ্যাটেনিজম নামে পরিচিত। তিনি চেয়েছিলেন যে মিশরীয়রা 2,000 দেবতার পরিবর্তে কেবলমাত্র একটি দেবতার পূজা করুক - সূর্য, যাকে বলা হয় রা বা আটেন, অর্থাৎ ফারাওকে ভগবান হিসাবে পুজো করতে বাধ্য করা হয়েছিল। 

পুরোহিত, অভিজাত এবং সাধারণ লোকেরা সম্ভবত এই পরিবর্তনটি অপছন্দ করেছিল, কিন্তু তাদের ফারাওয়ের আদেশ অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।

আখেনাতেনের মৃত্যুর পর নয় বছর বয়সী টুট সিংহাসন গ্রহণ করেন। তিনি পুরানো মন্দিরগুলি মেরামত করেছিলেন এবং দেবতাদের নতুন মূর্তির জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন, ধর্মীয় রীতিগুলিকে আগের মতো করে পরিবর্তন করেছিলেন। এমনকি তিনি তার নাম পরিবর্তন করেছিলেন: তার জন্মের নাম ছিল তুতানখাতেন (শেষ দুটি শব্দাংশ সূর্য দেবতাকে সম্মান করে), কিন্তু সিংহাসন গ্রহণের পর তিনি তুতেনখামুনে পরিবর্তিত হন। ওর জন্মের সময়তেই মা কিয়া মারা যান আর বাবাও মারা যাবার পর এই ছোট রাজা কে সিংহাসনে বসিয়ে রাজত্ব চালাতে থাকে মন্ত্রী আই, যে কিনা ছিলো ভয়ানক ষড়যন্ত্রী। 

রাজা হিসাবে, টুট ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন, শিকার ভ্রমণে যেতেন, ঘোড়ায় চড়তে এবং রথ চালানো শিখতেন এবং সামরিক দক্ষতায় প্রশিক্ষণ নিতেন।

কিন্তু Tutankhamun শাসন করার জন্য খুব বেশি সময় পান নি —তিনি মাত্র 19 বছর বয়সে মারা যান। 

বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন যে তার কি ভাবে মৃত্যু হয়... তার মৃত্যু একটি রথ দুর্ঘটনা, মশাবাহিত অসুস্থতা, হাড়ের রোগ বা কিছু সংমিশ্রণে আঘাতের কারণে হতে পারে ।পরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, Tutankhamun এর জন্মগত হাড়ের রোগ ছিলো, যার জন্য উনি ভালোভাবে ঘাড় ঘোরাতে পারতেন না এবং ভালোভাবে হাঁটতেও পারতেন না। তাই ওনার সমাধি থেকে বেশ কিছু সোনার ওয়াকিং স্টিক পাওয়া গিয়েছিল। 


তবে খুব সম্ভবত রথ চালাবার সময় তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়, তাতেই পায়ের থাইয়ের femur হাড় ভেঙে যায় এবং সেখান থেকেই রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। এছাড়াও তার খুলির পেছন দিকে চোট ছিল, যা দেখে মনে করা হয় যে তুতেনখামেন কে হত্যা করা হয়েছিল। 

কারণ যাই হোক না কেন, রাজা কোনও সন্তানকে রেখে যাননি, Tutankhamun এর কফিনের পাশে দুটি ছোট বাক্স পাওয়া যায়, সেটি খোলার পর তার মধ্যে থেকে দুটি ছোট্ট ছোট্ট কফিন পাওয়া যায় এবং তার মধ্যে ছিল 30 সেন্টিমিটার লম্বা দুটো মমি। জানা যায় তুতানখামেনের স্ত্রী দুজন মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন (25 wks ও 37 wks বয়েস), এগুলো তাদেরই। তারাই তার বাবার কাছে শুয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে। Tutankhamun এর স্ত্রী, রাজার মৃত্যুর পর মিশর ছেড়ে পালিয়ে যান, কিন্তু শোনা যায় তিনি মন্ত্রী আই এর পাঠানো গুপ্তঘাতকের হাতে মরুভূমির মধ্যে মারা যান। তার শরীর অথবা মমি, কোন কিছুই পাওয়া যায়নি।

যাইহোক Tutankhamun এর মৃত্যুর পর তাই সিংহাসনটি তার উপদেষ্টা আই দখল করে। আই চেয়েছিল যাতে এই ফারাওকে কেউ মনে না রাখে, তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে তার খোদাই করা ছবি এবং নাম, সে নষ্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসে ইতিহাসে সবথেকে বিখ্যাত মমি এবং সমাধিস্থলটি Tutankhamun এর, বরং আইয়ের সমাধি থেকে সেইরকম কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর তাই খুব কম দর্শকই তার সমাধিস্থল চেনে এবং পরিদর্শন করে। বেশিরভাগ ফারাওদের সমাধিগুলি পাথরের গভীরে কাটা হয়েছিল এবং এতে অনেকগুলি কক্ষ ছিল। কিন্তু টুট-এর মমি করা দেহটি…

আজ আমরা খুব ভোরবেলায় বেরিয়ে পড়েছি.... উনিশতম রাজবংশ: রামিসেস দ্য গ্রেটের বংশের এক অনন্য সুন্দর সৃষ্টি 'দ্য গ্রেট রামোসেস II' এর আবু সিম্বলের মন্দির দেখবার জন্য।

অষ্টাদশ রাজবংশের শেষ তিনজন ফারাও- তুতানখামুন, আইয়ি এবং হোরেমহেবের কোনো সন্তান ছিল না, তাই কোনো উত্তরাধিকারী ছিল না। যখন ফারাওয়ের উত্তরাধিকারী থাকে না, কিংবা ফারাও শক্তিশালী হন না, তখন মিশরে বিপর্যয় দেখা দেয়। 


কিন্তু ফারাও হোরেমহেব এবার সেটা হতে দিলেন না। তিনি মারা যাবার আগে, তাঁর উজির এবং বন্ধু রামিসেসকে মিশরের ফারাওয়ের দায়িত্ব অর্পন করে গিয়েছিলেন।

রামিসেস 'প্রথম রামিসেস' নামকরণ নিয়ে মিশরের ফারাও হয়েছিলেন। তাঁর নামেই উনিশতম রাজবংশের সবচেয়ে স্বর্ণযুগকে বলা হয়ে থাকে 'রামেসাইড' যুগ। 

প্রথম রামিসেস রাজকীয় রক্তের ছিলেন না। তিনি ছিলেন হোরেমহেবের উজির এবং বন্ধু এবং তাঁর পিতা ছিলেন সেটি, সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডার। তিনি ফারাও হলেন, কিন্তু খুব বেশিদিন মিশর শাসন করতে পারলেন না, তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছিল পঞ্চাশ বছরের মতো। তিনি সম্ভবত তিন বছরের মতো মিশর শাসন করেছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁকে Valley of The Kings বা 'রাজাদের উপত্যকা'য় সমাহিত করা হয়েছিল। 

বেলযোনি ১৮১৭ সালে তাঁর সমাধিস্থান আবিষ্কার করেছিলেন, যদিও সেটা অনেক পূর্বেই সমাধি ডাকাতেরা লুটপাট করেছিলো। তবুও তাঁর সমাধিতে গ্রানাইট সারকোফাগাস, প্রায় সাড়ে ছ'ফুটের মতো লম্বা ফারাওয়ের দুটি কাঠের মূর্তি- যাতে পূর্বে একসময় স্বর্ণের প্রলেপ ছিল এবং বেশকিছু দেবতার ছোটো ছোটো কাঠের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে, যেগুলোর মাথা ছিল অন্যরকম কিছু প্রাণীর। তবে ফারাওয়ের মূল সমাধিকক্ষটি অসম্পূর্ণ ছিল।


এই ফারাও কর্তৃক নির্মিত উল্লেখযোগ্য ভবন এবং স্মৃতিস্তম্ভ:

🔶কারনাক- আমুনের মন্দিরের (Temple of Amun) 

🔶হাইপোস্টাইল হল

🔶আবিদোস- প্রথম সেটির মন্দির,

🔶ওসিরিয়ন,

🔶প্রথম রামিসেসের মন্দির থেবস, 

🔶রাজাদের উপত্যকা- সমাধি KV-17, থেবস- শবাগার মন্দির

প্রথম সেটি মারা যাবার পূর্বেই তাঁর সন্তান রামিসেসকে মিশরের ফারাও হিসেবে প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন। 

রামিসেসের বয়স যখন দশ বছর, তিনি 'বড় সন্তান' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন এবং তখন থেকেই 'ক্রাউন প্রিন্স' হিসেবে নিজে গড়ে উঠছিলেন। 

তিনি যখন পনেরো বা ষোলো বছর বয়সের, তখন পিতা প্রথম সেটির সাথে সিরিয়া অভিযানে গিয়েছিলেন, তাঁর পিতার পাশে তাঁর চ্যারিয়টের চিত্র পাওয়া গিয়েছে। তিনি এরপর হিট্টিদের বিরুদ্ধে অভিযানেও ছিলেন। প্রথম থেকেই রামিসেস সামরিক অভিযানের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।

ইনি ছিলেন মিশরের সবথেকে শক্তিশালী ফারাও 'দ্য গ্রেট রামোসেস II' (c. 1279-c. 1213 BC)। 

এনার অনন্য সুন্দর সৃষ্টি দেখবার জন্য আমরা ভোরবেলায় Cruise থেকে নেমে একটি মিনি ভ্যানে করে সুন্দর রাস্তার মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম আবু সিম্বলের উদ্দেশ্যে। 

তখন চারপাশ বেশ অন্ধকার এবং বেশ ঠান্ডা। ঘন্টা দেড়েক চলার পর আমরা একটি মরুভূমির মধ্যে, ধাবার সামনে ব্রেক নিলাম... যেখানে চা, জলখাবার, শৌচালয় সবকিছুই ছিল আর সঙ্গে ছিল প্রচুর পরিমাণে ভিড়। 

এইখানেই মরুভূমির মধ্যে থেকে আমরা সূর্যোদয় দেখলাম। আমরা সাধারণত পাহাড় এবং সমুদ্র থেকে সূর্যোদয় দেখতে অভ্যস্ত, তাই মরুভূমির সূর্যোদয় বেশ অন্যরকম লাগলো। আধাঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট এখানে কাটিয়ে আমরা আবার এগিয়ে চললাম, মরুভূমির মধ্যে দিয়ে আবু সিম্বল এর উদ্দেশ্যে। ঘন্টা তিনেকের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম আবু সিম্বল। 


বলে রাখা ভালো যে, যত তাড়াতাড়ি এইখানে আসা যাবে, তত ভিড় এবং গরম এখানে কম হবে.... যত সময় যায় তত ভিড় এবং গরম বাড়তে থাকে। 

🟢আমাদের Normal (Non Egyptian and Arab) টিকিট কাটাই ছিল.. 

🔶Adult : 240 EGP

🔶Student : 120 EGP

🔶Guide charge : 15 EGP

🔶ছয় বছরের কমে প্রবেশ মূল্য ফ্রি। 

🟢Sun Alignment Ticket -(22.2 and 22.10)

🔶Adult : 500 EGP

🔶Student : 250 EGP

🟢মন্দিরটি খোলা থাকে 7am- 5pm

🟢Sun Alignment এর দিন খোলে 3am এ। 

আগেই বলেছি cruise থেকে গাইড আমাদের সঙ্গেই ছিল। ওর কাছেই সব টিকিট ছিল, সে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।

এবার শুধু অবাক হওয়ার পালা। অত সকালেও মন্দিরে ঢোকার লাইনটি বড়ই লম্বা। 

লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই, গাইড বলতে শুরু করলো... 

🟣দ্বিতীয় রামিসেস ক্ষমতায় এসে তাঁর রাজধানী পরিবর্তন করলেন। মিশরে তখন দুটি রাজধানী ছিল। 

থেবস ছিল ধর্মীয় রাজধানী। থেবসকে মিশরীয়রা বলতেন 'ওয়াসেট'। আধুনিক মিশরীয়রা থেবসকে বলেন লাক্সার।

আর ছিলো, মেমফিস - প্রশাসনিক রাজধানী। 


🟣রামোসেস রাজধানী মেমফিস থেকে ডেল্টাতে নিয়ে গেলেন, যা ছিল সামরিকভাবে সিরিয়া আক্রমণের জন্য অনুকূল। রামিসেস সবসময়ই সিরিয়া আক্রমণের কথা চিন্তা করেছেন। তাই তিনি ডেল্টাকেই বেছে নিয়েছিলেন রাজধানী হিসেবে।

🟣ডেল্টা আর্দ্র এলাকা। সেখানে খনন করাও খুব কঠিন কাজ। তবুও রামিসেসের প্রাসাদের কিছু অবশিষ্টাংশ সেখানে পাওয়া গিয়েছে। অসাধারণ ছিল সে প্রাসাদ- বিশাল বিশাল ব্লকে তৈরী হয়েছিল ডেল্টার প্রাসাদ। আরো ছিল অসংখ্য ওবেলিস্ক।

🟥🟥কাদেশ অভিযান:-

🟣দ্বিতীয় রামিসেস সব থেকে বড় যুদ্ধ অভিযান ছিল কাদেশ অভিযান (1274 BC)। চার ডিভিশন সৈন্য নিয়ে তিনি কাদেশে গিয়েছিলেন। 

প্রতিটি ডিভিশনের আলাদা নাম ছিল-একেকজন দেবতার নামে- আমুন, রা, টাহ্ এবং সেথ। 

প্রতিটি ডিভিশনে সৈন্য ছিল পাঁচ হাজার করে, রামিসেস সর্বমোট বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হলেন, বেকুয়া উপত্যকা হয়ে। 

🟣সে ছিল এক বিশাল যাত্রা। গড়ে প্রতিদিন তাঁরা পনেরো মাইল পথ অতিক্রম করতেন। 

তিনি একটার পর একটা শহরে গিয়েছিলেন এবং শহরগুলো বিনা যুদ্ধে রামিসেসের বশ্যতা স্বীকার করে নিচ্ছিল, তাই রামেসিসের সেনাবাহিনীর কখনোই খাদ্য এবং জলের সমস্যা হয়নি। 

🟣এইসময় দু'জন হিট্টি (Hittit) দূত আসলেন রামিসেসের কাছে। তারা বললেন, তারা নাকি রামিসেসের বশ্যতা স্বীকার করতে চান। তাদের রাজা মুয়াতাল্লিস, রামিসেসের আসার কথা শুনে নাকি পালিয়ে গেছেন। 

🟣কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার ছিল ভিন্ন এবং মিথ্যা। মুয়াতাল্লিস চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে রামিসেসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, এবং আড়াই হাজার চ্যারিয়ট বনের ভিতর লুকিয়ে ছিল।

🟣এদের কথা বিশ্বাস করে, রামিসেস তার দুটি ডিভিশন সৈন্য নিয়ে আরো উত্তরে এগিয়ে গেলেন এবং একজায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করলেন। সেই সময় রামসিসের সৈন্যরা হঠাৎ করে দুজন হিট্টি গুপ্তচর কে ধরে ফেললো এবং অত্যাচার করার পর মুয়াতাল্লিশের পরিকল্পনা তারা জানতে পারল। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। 

এই দুই ডিভিশনের উপর মুয়াতাল্লিশের সেনারা আক্রমণ করে, এই ভয়ানক আক্রমণে বিভ্রান্ত এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দ্বিতীয় রামেসিসের সৈন্যরা। হার নিশ্চিত ছিলো। 

🟣কিন্তু দ্বিতীয় রামেসিস হাল ছাড়লেন না। এই সময় রামেসিস স্মরণ করলেন থেবসের মন্দিরের দেবতা আমেন-রা কে। তার আশীর্বাদে ফারাওয়ের শক্তি হয়ে ওঠে দেবতাদের মতো। তিনি নিজে তার দুই ডিভিশনের বেঁচে থাকা সৈন্য নিয়ে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে হিট্টিদের পরাস্ত করেন এবং পিছু হটতে বাধ্য করেন। 

🟣এরপরে তিনি মিশরে ফিরে আসেন, চারিদিকে তার জয়জয়কার পড়ে যায় এবং এই যুদ্ধ জয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই মিশরের দক্ষিণে তিনি আবু সিম্বলের মন্দির বানান। এই পুরো ঘটনাটি আবু সিম্বলের মন্দিরের মধ্যে দেওয়ালে আঁকা রয়েছে।

পরে, অবশেষে 1258 BC তে শান্তি চুক্তি হয়, মিশরীয় এবং হিট্টিদের মধ্যে, যা বিশ্বের প্রথম শান্তি চুক্তি হিসাবে গণ্য করা হয়। 

এরপরে আমরা আস্তে আস্তে ঢুকে পড়লাম মন্দিরের ভেতর। চারপাশে বিশাল উঁচু উঁচু মূর্তি এবং পুরো দেওয়ালে এবং ভেতরকার চেম্বারে অজস্র চিত্র এবং লেখা। 

আবু সিম্বলের মন্দির :-

🟠দ্বিতীয় রামিসেস আবু সিম্বলে মন্দির নির্মাণ করেন 1264-1244 BC, মতান্তরে 1244-1224 BC র মধ্যে।

🟠মিশরের দক্ষিণের সর্বশেষ সীমানা ছিল আসোয়ান। আবু সিম্বল ছিল আসোয়ানের পরে, নুবিয়াতে। রামিসেস মূলত নুবিয়াতে এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন এবং এটি ছিল এমন একটি মন্দির, যা মিশরে আগে কখনো হয়নি।

🟠পূর্বে মিশরে মন্দির নির্মাণ করা হত- ব্লকের পর ব্লক দিয়ে। এইবার প্রথম আবু সিম্বলে, রামিসেস মন্দির নির্মাণ করলেন পাহাড়ের গায়ে, পাথর কেটে। 

🟠মূল মন্দিরটি ছিল ৯৮ ফুট (30 m) লম্বা এবং ১১৫ ফুট (35 m) চওড়া। 

🟠মন্দিরের প্রবেশ পথে ছিল চারটি বিশাল মূর্তি- রামিসেসের মূর্তি, প্রতিটি ছিল ৬৭ ফুট (20 m) উঁচু। মাঝের দুটি মূর্তির পায়ের নিচ দিয়ে চলে গিয়েছিল মন্দিরে ঢোকার প্রবেশপথ। মূর্তির পায়ের কাছে ছিল ওনার স্ত্রী এবং সন্তানদের ছোট ছোট মূর্তি। 

🟠৬৭ ফুট দীর্ঘ রামিসেসের যে চারটি মূর্তি ছিল, তার একটির মাথা ভেঙ্গে নিচে পড়ে গিয়েছিল, রামিসেসের জীবদ্দশাতেই এক বিশাল ভূমিকম্পে। 

🟠মন্দিরের দেওয়ালে ছিলো রামিসেসের কাদেশ অভিযানের চিত্র। অন্যদিকে একদম ভিতরে, গর্ভগৃহে Holy of Holies এ ছিল আরো চারটি বিশাল মূর্তি- রা- হোরাখতি, টাহ্, আমুন এবং রামিসেসের নিজের মূর্তি। তিনি নিজেকে দেবতাই ঘোষণা করেছিলেন। 

🟠বছরের দুটি বিশেষ দিনে, ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ অক্টোবর, সূর্যের আলো এসে এই মূর্তিগুলোর উপরে পড়ে। 

🟠অনেকের মতে , মন্দিরের নির্মাণশৈলী এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে রামিসেসের জন্মদিনে এই সূর্যের আলো Holy of Holies-এ নির্মিত তাঁর মূর্তির উপর এসে পড়ে। 

🟠প্রকৃতপক্ষে আলো এসে পড়ত তিনটি মূর্তির উপর, চতুর্থ মূর্তি টাহ্-এর উপরে আলো আসতনা, কারণ টাহ্ ছিলেন মৃত্যুর (Realm of Dead) একজন দেবতা!

🟢এ মন্দিরের সামান্য ডান দিকেই তিনি আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, যেটি আকারে একটু ছোট ছিল। 

🟢এটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি তাঁর প্রিয় স্ত্রী নেফারতারির জন্য। 

🟢এর প্রবেশ পথে খোদাই করা ছিল, 'নেফারতারির জন্য, যার জন্য সূর্য আলো দেয়।' এ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল রামিসেসের রাজত্বের তেইশ বছরে। এক বছর পরেই নেফারতারি মারা গিয়েছিলেন। 

🟢মৃত্যুর পূর্বে তিনি দেখে গিয়েছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীর সাথে আছেন। 

যদিও মন্দিরের ভিতরে বেশ কয়েকটি ফ্যান আছে। তাও ভেতরটি বেশ গরম। কিন্তু ভেতরের চেম্বারগুলো আবার বেশ ঠান্ডা। 

যাই হোক আমরা দুটি মন্দির দেখে বেরিয়ে এলাম, তখনই আবার গাইড বলতে শুরু করলো... এই মন্দিরটি কিন্তু আসল মন্দিরটি নয়। এ দুটি মন্দিরই সরানো হয়েছিল, কারণ, সে সময় আসোয়ান বাঁধ তৈরীর কারণে আবু সিম্বল জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছিল। । 

১৯৬৪ সালে , ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে ১১৩ টি দেশ মিলে এই দুটি মন্দির মূল জায়গা থেকে ব্লক ব্লক করে একটু উপরে সরিয়ে নিয়েছিল। 

প্রতিটি টুকরোর গায়ে নাম্বারিং করে, নাসের লেক থেকে ৬৫ মিটার উপরে আর ২০০ মিটার দূরে কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করে, একটির পর একটি সাজানো পাথরের ব্লক দিয়ে এই মন্দির গুলোকে আবারও জোড়া লাগানো হয়। এটি সেই মন্দির যেটা আমরা এখন দেখতে পাই। 

বেশ কিছু গাইড এর মতে, এই নতুন মন্দির-শৈলির জন্য এখন ২২শে ফেব্রুয়ারি এবং ২২ শে অক্টোবরের জায়গায় একুশে ফেব্রুয়ারি এবং একুশে অক্টোবর আলোকিত হয়ে ওঠেন ৩ দেবতা।


🔵এই মন্দিরটিও খুঁজে পাওয়ার গল্পটিও অসাধারণ। আবু সিম্বল কিন্তু কোন জায়গার নাম নয়, এটি একটি ছেলের নাম.. যে কিনা প্রথম এই মন্দিরটি খুঁজে পেয়েছিল। তার নামেই এই জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছিল আবু সিম্বল।

🔵রামিসেসের রাজত্ব শেষ হবার পর, এই মন্দির আস্তে আস্তে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। বালি এবং কাদার মধ্যে পুরো মন্দিরটাই ডুবে যায়। 

এরপর ১৮১৩ সালে এক সুইস-জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ জোহান বুর্কার্ড আবার এর খোঁজ পায়। 

🔵১৮১৩ সালের মার্চ মাসে বুর্কার্ড যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মিশরের দক্ষিণে। সেই সময় এক বছর দশেকের মেষপালকের কাছে একটা অদ্ভুত গল্প শোনেন... নীলনদের তীরে নাকি সে পাথরের তৈরি একটা মানুষের বিশাল বড়ো মাথা দেখতে পেয়েছে। 

🔵সেই ছেলেকে গাইড বানিয়েই ওই জায়গাতে গিয়ে পৌঁছোন বুর্কার্ড। দেখেন সত্যি মরুভূমির বালির মধ্যে জেগে আছে সেই পাথরের মূর্তি। মাথাটুকুই যা বাইরে। এই দশ বছরের ছেলেটির নামই ছিল আবু সিম্বল, যার থেকে এই জায়গাটির নামকরণ হয়।

🔵 শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। নেফারতারির মন্দিরটা বালি খুঁড়ে বের করতে সক্ষম হন বুর্কার্ড। তার থেকেই ওঁর ধারণা হয় যে নিশ্চয় আরেকটা মন্দির আছে । তবে তার পক্ষে একা এই কাজ করা সম্ভব ছিল না, তাকে এই কাজে সাহায্য করেন জিওভান্নি বেলজোনি। 

🔵তিনবারের চেষ্টার পরে ১৮১৭ সালের অগাস্ট মাসে বেলজোনি মন্দিরের দরজাটা খুঁজে পেলেন। ভেতরে ঢুকে, বেলজোনি বুঝতে পেরেছিলেন এমন কোনো মন্দির এর আগে কেউ কখনো খুঁজে পায়নি।

🔵গোটা মন্দিরটার শরীর থেকে বালি সরাতে লাগে আরও এক বছর। মন্দিরের ভেতরে যা ঐশ্বর্য বা যা কিছু ছিল সেগুলো ওনারাই ভাগ করে নিয়ে নিয়েছিলেন।

🔵এই জোহান বুর্কার্ডই পেট্রা শহরও আবিষ্কার করেছিলেন। ইনি এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। ইনি চার বছর ধরে সিরিয়াতে থেকে আরবীতে পড়তে-লিখতে শেখেন, তারপরে শেখ ইব্রাহিম আবদুল্লাহ ছদ্মনাম নিয়ে ঘুরে বেড়ান জর্ডান, ইজিপ্টো। ইনি আবার প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি মক্কা মদিনাতেও পা রাখেন। কিন্তু মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে ডিসেন্ট্রিতে মারা যান এই সুইস-জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ। 

 মন্দির থেকে বেরিয়েই একটা বড় রেস্টুরেন্ট-ক্যাফে-সুভিনিয়ার শপ এবং শৌচালয় রয়েছে। গরম তখন বেশ ভালো রকম, মাথার উপরে রোদ। খানিকক্ষণ সেখানে বসে রেস্ট নিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম পার্কিংয়ের দিকে। যাবার সময় দুদিকে প্রচুর ছোট ছোট দোকান রয়েছে এবং দর করলে ভালো জিনিস, শহরের থেকে কম দামে পাওয়া যায়।

গাড়িতে উঠে পড়লাম, চললাম আসোয়ানে আমাদের cruise এর দিকে। আবু সিম্বল থেকে টুরিস্ট গ্রুপ পৌঁছালে, তারপর ক্রুজ ছাড়বে। দুটোর মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম ক্রুজে, সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম লাঞ্চ করতে... লাঞ্চ সেরে ডেকে উঠতে না উঠতেই... নীল নদের মধ্যে দিয়ে ক্রুজ ছেড়ে দিল।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment