1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, April 1, 2021

ক্যাপ্টেন ভেড়ি

 (ধারাবাহিক রহস্য কাহিনী )

ছবি : ইন্টারনেট
তরুণ চক্রবর্তী

পূর্ব কথন -   ক্যাপ্টেন ভেড়িতে সম্প্রতি এক অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা খুন হয় । অঞ্চলটা পরমা আইল্যান্ড থানার মধ্যে পরে । পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাকে শ্বাসরোধ করে  খুন করা হয়েছে । থানার বড়বাবু দিবাকর , সেকেন্ড অফিসার নকুরকে দায়িত্ব দেয় ইনভেস্টিগেসানের জন্য । দিবাকর ও নকুর বড়বাবুর ঘরে জরুরী কথা বলছিল , এইসময় হঠাত ঘরে ঢোকে প্রাক্তন সিভিক ভলেন্টিয়ার সতু ওরফে সত্যবান চৌধুরী ।সতু দিবাকরকে জানায় ঘটনার সময় ও ওখানে ছিল। দিবাকর সতুর কাছে সব শুনে সতুকেই খুনী বলে সন্দেহ করে এবং সতুকে চাপে ফেলে দেয় । 


(শেষাংশ)
————-
(পাঁচ )

 বাড়ি ফিরে ক্লান্ত সতু তার এক ঘরের কামরার ,ছোট্ট বিছানায় শরীর ছেড়ে দিল।শরীর ,মন কোনটাই আর পারছে না।একে কোন বাঁধা রোজগার নেই , তারপর বড়বাবুর এই হুমকি সতুকে পুরো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে । সতু থাকে ব্যারাকের মতো একটা বস্তিতে । কমন বাথরুম । সতুর দেশ জঙ্গল মহলে । বাড়ির সবাই ওখানেই থাকে । ওই শুধু পেটের তাগিদে কোলকাতার এই বস্তিতে । ঘরে শুধু ছোট বিছানা । আর কিছু বই । সবই বাংলা গোয়েন্দা উপন্যাস । বিশেষ করে ব্যোমকেশ । সতুর প্রিয় গোয়েন্দা । গ্রাজুয়্যাট সতুর খুব ইচ্ছে ছিল বড় গোয়েন্দা হবে ।তার বদলে কিছুদিনের জন্য জুটেছিল সিভিক পুলিশের চাকরী । তাও এখন নেই । এরপর বড়বাবু যা বললো , গোয়েন্দা থেকে না অপরাধী বনে যায় । 
 ক্লান্ত সতুর চোখের সামনে হটাত সেই লোকটার হাঁটার ভঙ্গিটা ভেসে উঠল । সতু স্পষ্ট মনে করতে পারলো , লোকটা বাঁ  পাটা একটু টেনে টেনে হাঁটছিল । তার মানে বাঁ পায়ে জোর কম আছে । তার মানে …। 
 দিবাকরের মোবাইলের স্ক্রিনে সতুর নামটা ফুটে উঠল। যা সেভ করা আছে ‘ বাঞ্চোত সতু ‘ বলে । তার সাথে … হুর হুর দাবাং , দাবাং ……রিং টোন তো আছেই । 
— বল । 
— স্যার , একটা কথা জিগ্যেস করার ছিল । ক্রাইম সিন থেকে কোন ফুট প্রিন্ট নেওয়া হয়েছে ? সতু জিগ্যেস করে । 
— কি জানতে চাস বলত । আমি তো এখন  পুরো ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে বসে নেই । রামের বোতল নিয়ে বসে আছি । তুই বরঞ্চ তোর প্রশ্নগুলো একসাথে করে রাখ । আমি উত্তর গুলো বার করে রাখব । কালকে থানায় এসে আমার সাথে কথা বলে নিস । এখন আমাকে রাম খেতে দে । 
— ঠিক আছে স্যার । সতু লাইন কেটে দেয় । 

(ছয় ) 

  পরমা আইল্যান্ড থানায়,  বড়বাবুর ঘরে,  দিবাকরের  সামনে সতু বসেছিল । সকাল দশটা । থানার ব্যস্ততা সবে শুরু হয়েছে । 
— বল তোর কি কি তথ্য দরকার । ওখানে অনেক ফুটপ্রিন্ট পাওয়া গেছে । শুধু একজোড়া ফুটপ্রিন্ট দেখে মনে হচ্ছে লোকটার বা পায়ে জোর কম আছে । কিন্তু তোর হটাত এই প্রশ্ন মনে এলো কেন ? দিবাকর সতুর দিকে তাকায় । 
— আসলে স্যার লোকটা  বাঁ পাটা একটু টেনে টেনে হাঁটছিল । তাই মনে হোল । 
— বাঃ ! তুই তো দেখছিস পুরো গোয়েন্দা হয়ে উঠছিস । 
সতু লজ্জা পায় । 
— তুই তো ওই অঞ্চলেই তোলাবাজি করিস । লোকটাকে একদম চিনতে পারিসনি ? সত্যি কথা বলতো ? 
— না স্যার ।তখন মাথায় আসেনি ,  তবে এখন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে । সতু বলে । 
— সে কিরে ? কে ? 
জবাবে সতু যার নাম করে , দিবাকরের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হয় । দিবাকর উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে আসে । তারপর সতুর সাথে তলিয়ে যায় গভীর আলোচনায় । 
 
  (সাত) 

 দিন সাতেক পরে । 
 দিবাকর তার ঘরে সবাইকে ডেকেছে । জরুরী মীটিং । সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দিবাকরের জন্য । 
 কিছুক্ষণের মধ্যেই দিবাকর ঢুকল । সবাই অবাক হয়ে দেখল দিবাকরের সাথে সাথে ঢুকছে সতু । 
 দিবাকর তার চেয়ারে বসার পরে সবাই নিজের নিজের জায়গায় বসে । দিবাকর সতুকে তার পাশের চেয়ারে বসায় । সবার ভ্রু একটু কুঁচকে ওঠে । বিশেষ করে নকুর আর সনাতনের । 
  দিবাকর তার বক্তব্য শুরু করে । 
 — আমরা সবাই জানি কিছুদিন আগে ক্যাপ্টেন ভেড়িতে একটা হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে । একজন মহিলাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয় ।পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে মহিলা প্রেগন্যান্ট ছিল ।  কেসটা খুব জটিল  । কারন ঘটনাস্থল সি .সি  ক্যামেরার কভারেজে ছিলনা । ফলে অপরাধীর চেহারা সম্বন্ধে আমাদের কোন ধারনা ছিলনা । এসব ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীদের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে । এখানে সেরকম কেউ এগিয়ে আসেনি । একমাত্র সতু ছাড়া । কিন্তু সেও কুয়াশার মধ্যে , মাফলারে মুখ ঢাকা অপরাধীকে চিনতে পারেনি । এমন কি ভিক্টিমকে আইডেন্টিফাই করার জন্যও কেউ এগিয়ে আসেনি । তবু এতো অসুবিধার মধ্যেও , সতু, হাঁ সতুর সাহায্যে আমরা অপরাধীকে সনাক্ত করতে পেরেছি । শুধু গ্রেপ্তার করা বাকি । 
  ঘরে পিন পরলেও শোনা যাবে এরকম নৈঃশব্দ্য । 
 দিবাকর আবার শুরু করে । 
—   সতু অপরাধীকে চিনতে না পারলেও তার হাঁটাটা খেয়াল করেছিল । একটু বাঁ পা টেনে হাঁটে । ঘটনাস্থলে সেরককম কয়েক জোড়া ফুট প্রিন্টও পাওয়া যায় । কিন্তু শুধু এটুকু সূত্র দিয়ে তো আর অপরাধী ধরা  যায়না । আর অপরাধের জায়গায় কোন ফিঙ্গার প্রিন্টও পাওয়া যায়নি । তবে সতু আর আমার মাথায় একজনের কথা আসে যে আমাদের দুজনেরই পরিচিত । এমনকি আপনাদেরও । 
 ঘরে যেন নি:শব্দ বজ্রপাত হোল । 
— আমরা তার মোবাইল নাম্বার জানতাম । ঘটনার দিনের কল ডিটেলস্ আর টাওয়ার লোকেশান জোগাড় করলাম । কিন্তু টাওয়ার লোকেশান ঘটনাস্থলের সাথে মিললো না। কিন্তু কল লিস্টে দেখা গেল ,একটা নাম্বারে অনেকবার কল গেছে আর এসেছে । আর ওই নাম্বারটার ওই দিন  কিছু সময়ের জন্য লোকেশান  ছিল , অপরাধ যেখানে ঘটেছে সেখানে । রাত নটার পর থেকে অবশ্য নাম্বারটা সুইচড্ অফ ছিল । তার মানে অপরাধী , খুনটা করে মোবাইলটা সুইচড অফ করে দেয় । আর সতুর কথা আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী সময়টাও মিলে যায় । কিন্তু আমরা অবাক  ও হতাশ হই যখন দেখি সন্দেহভাজন অপরাধী আর ভিক্টিমের ফোন নাম্বার একই ব্যক্তির নামে । ভিক্টিমকে  সনাক্ত করার শেষ আশাও বরবাদ । যেহেতু সন্দেহ ভাজন লোকটি আমাদের পরিচিত , আমরা সরাসরি ওকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারছিলাম না । কিন্তু আমরা গোপনে খবর নিয়ে জেনেছিলাম , ব্যাক্তিটি মোবাইলটি ঘরে রেখে , ওই সময়ে বাইরে ছিল । নিজের অ্যালিবাই প্রমাণ করার জন্য ।  
   দিবাকর একটু থামল। সামনে রাখা গ্লাস থেকে একটু জল খেল । তারপর আবার শুরু করলো । 
— আমাদের কাছে তখন বড় হয়ে দাঁড়ালো সেই ব্যক্তির সাথে ভিক্টিমের সম্পর্ক প্রমাণ করা । তাহলে অন্তত আমরা যে ঠিকপথে এগোচ্ছি সেটা বোঝা যাবে । আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে , কিছুদিন আগে , সার্ভিস বুকে  ব্লাড গ্রুপ লিখতে হবে বলে আপনাদের সবার কাছ থেকে ব্লাড নিয়েছিলাম ।সেই ব্লাড থেকে আমরা খুন হয়ে যাওয়া মহিলার ভ্রূণের ডি .এন. এ টেস্ট করাই । আমাদের সন্দেহভাজন ব্যাক্তির সাথে ম্যাচ করে যায় । আমরা নিশ্চিন্ত হই আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছি । কিন্তু আমাদের এখনো তিনটে বড় কাজ বাকি , আইনের কাছে অপরাধ প্রমাণ করে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য । এক,  ভিক্টিমের আইডেন্টিফিকেশন ; দুই ,মোডাস অপারেন্ডি; তিন, অপরাধের মোটিভ  । আর সত্যি কথা বলতে নকুর বা সনাতন নয় , এ ব্যাপারে আমাদের একমাত্র হেল্প করতে পারে জনার্দন । কিরে জনার্দন , তাইতো ? 
  জনার্দন তখন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে । হাত জোড় করে দিবাকরের উদ্দেশে বলতে শুরু করেছে … 
— আমাকে ফাঁসিতে চড়ান বড়বাবু । আমি আর পারছিলাম  না । রোসির পেটে বাচ্চাটা আসার পরেই ও চাপ দিতে শুরু করে বিয়ে করার জন্য । বলুন তো স্যার, দেশে আমার বালবাচ্চা আছে।  ওরকম বললেই বাঁধা বাবু থেকে হাসব্যান্ড হওয়া যায় । তাই ওকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবলাম । ঘটনার দিন ফোন করে ওকে ক্যাপ্টেন ভেড়িতে ডেকে আনলাম । ঘুমের ওষুধ আগেই কিনে রেখেছিলাম । গল্প করতে করতে মাঝখানে উঠে গিয়ে চা- পানি আনতে গিয়ে চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম । রোসি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো । তারপর জায়গাটা একদম ফাঁকা হতেই , গ্লাভস  পড়ে রোসির গলাটা টিপে ধরলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যায় । সংসার বাঁচানোর জন্য এছাড়া আমার কি করার ছিল বলুন স্যার ? 
— সংসার কি বাঁচল ? দিবাকর জিগ্যস করে । 
 জনার্দন  মাথা নিচু করে । 
 দিবাকর নকুরের দিকে ইশারা করে , নকুর , জনার্দনের হাতে হাতকড়ি পড়িয়ে নিয়ে যায় থানা হাজতের দিকে । 

(আট) 

দিবাকরের ঘর এখন ফাঁকা । শুধু সাতু আর দিবাকর বসে আছে । 
— তুই তো কামাল করে দিলি । আমি ডি. সি ( ডি .ডি ) কে বলেছি তোকে গোয়েন্দা দপ্তরে একটা পাকা কাজ দেওয়ার জন্য । উনি সব শুনে খুব ইমপ্রেসড্ । মনে হয় কাজটা হয়ে যাবে । দিবাকর বলে । 
— তাহলে এখন আমি যাই ?  সতু জিগ্যেস করে । 
— হ্যাঁ । সাবধানে যাস । 
সতু থানা থেকে বেড়িয়ে আসে । থুড়ি , সতু নয় , সত্যসন্ধানী সত্যবান চৌধুরী । 
(সমাপ্ত)   
tchak1961@gmail.com
কলকাতা 

পূর্ব কথন ১ 

পূর্ব কথন ২  


1 comment:

  1. শেষটা ভালোই হল। বইয়ের গোয়েন্দাকাহিনীর মত সাবপ্লট, টু্ইস্ট এসব এখানে নেই, তাই প্রত‍্যাশা পূরণ একটু কম হল‌। তবে বাস্তবে বোধহয় এমনই ঘটে।

    ReplyDelete